1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান
দুর্নীতিভারত

ভারতে নিচু থেকে উঁচু, সব স্তরেই দুর্নীতি নির্মূল করতে হবে

গৌতম হোড়
গৌতম হোড়
৫ এপ্রিল ২০২৪

দুর্নীতি এখন প্রতিদিনের জীবনের অঙ্গ। ঘুষ দেয়া ও নেয়াটা জলভাত। অভিযান কি শুরু করা উচিত উঁচুপদ থেকে?

https://p.dw.com/p/4eTYY
ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে দুর্নীতিবিরোধী দেয়ালচিত্র
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, শীর্ষে দুর্নীতি বন্ধ না হলে দুর্নীতিবাজদের থামানো প্রায় অসম্ভবছবি: DW/P. Samanta

ঘটনাটা ঘটেছিল ১৯৫৮ সালে। খোদ প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর জামাতা ফিরোজ গান্ধী সামনে নিয়ে এলেন হরিদাস মুন্দ্রা কেলেঙ্কারি। আমলা-স্টক মার্কেট স্পেকুলেটর ও ছোট ব্যবসায়ীদের আঁতাতের কেলেঙ্কারি। সে এক কাণ্ড হয়েছিল বটে। রায়বেরিলি থেকে নির্বাচিত কংগ্রেস সাংসদ ফিরোজ গান্ধী লোকসভার তার দলের ও তার শ্বশুরের সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ করলেন, ভারতীয় জীবন বিমা নিগম তার ৫৫ লাখ গ্রাহকের টাকা দিয়ে হরিদাস মুন্দ্রার কোম্পানির শেয়ার অনেক বেশি দাম দিয়ে কিনেছে। 

এই নিয়ে নেহরুর সঙ্গে ফিরোজের সংঘাত হলো। নেহরুর অর্থমন্ত্রী টি টি কৃষ্ণমাচারি প্রথমে বললেন, এরকম কিছুই হয়নি। পরে তিনি স্বীকার করলেন, ফিরোজের অভিযোগ ঠিক। তারপর কমিশনের রায় এলো। শেষপর্যন্ত কৃষ্ণমাচারি পদত্যাগ করতে বাধ্য হলেন। স্বাধীন ভারতে কৃষ্ণমাচারি হলেন সরকারের অত্যন্ত উঁচু পদে থাকা প্রথম মানুষ, যিনি দুর্নীতির দায়ে পদত্যাগ করলেন। বোঝা গেল, সরকারের মধ্যে দুর্নীতি কীভাবে ঢুকে গেছে। তার সঙ্গে আমলারা জড়িয়ে পড়েছেন, দুর্নীতির হাত অনেক বড় হয়েছে

ফিরোজ গান্ধীর কৃতিত্ব হলো, তিনি তার দলের বিরুদ্ধে, দোর্দন্ডপ্রতাপ নেতা নেহরুর বিরুদ্ধে,  নিজের শ্বশুরের বিরুদ্ধে গিয়ে দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলেন। এমন ঘটনা বিশেষ দেখা যায় না। অনেক পরে বফর্স কেলেঙ্কারি নিয়ে সোচ্চার হয়ে রাজীব গান্ধীর বিরুদ্ধে গিয়েছিলেন তার সরকারের মন্ত্রী ও পরবর্তীকালে প্রধানমন্ত্রী বিশ্বনাথ প্রতাপ সিং।

সে কাহিনিও কম চিত্তাকর্ষক নয়। বফর্সের অভিযোগ ছিল, এই কামানের বরাত পাওয়ার জন্য ১৪০ কোটি মার্কিন ডলার ঘুষ দেয়া হয়েছিল। বফর্স কামান চুক্তি ছিল, সুইডেনের কাছে তখনো পর্যন্ত সবচেয়ে বড় চুক্তি। আর সেই অভিযোগের আঙুল উঠেছিল সরাসরি সাবেক প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধীর বিরুদ্ধে। বফর্স-বিতর্ক যখন তুঙ্গে, তখন সামাজিক মাধ্যম ছাড়াই সারা ভারতে একটা স্লোগান ভাইরাল হয়েছিল, 'গলি গলি মে শোর হ্যায়, রাজীব গান্ধী চোর হ্যায়'। আসলে অভিযোগটা ছিল ইটা৪লির ব্যবসায়ী কোয়াত্রচির বিরুদ্ধে। তিনি ছিলেন রাজীব গান্ধীর খুবই ঘনিষ্ঠ। অভিযোগ ছিল, তিনিই দালালি দিয়েছিলেন।

১৯৯৯ সালে বাজপেয়ী সরকারের সময় বফর্স নিয়ে সিবিআই রাজীব গান্ধী,. কোয়াত্রচি, সাবেক প্রতিরক্ষাসচিব ভাটনগর-সহ অন্যদের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেয়। ২০০৪ সালে দিল্লির আদালত রাজীব গান্ধীকে বফর্সের যাবতীয় অভিযোগ থেকে মুক্তি দেয়। তার অনেকদিন আগেই সাবেক প্রধানমন্ত্রীর মৃত্যু হয়েছে।

তবে দেশের সর্বোচ্চ পদে এই কেলেঙ্কারির অভিযোগ ভারতীয় রাজনীতিকে নাড়িয়ে দিয়েছিল। ভারতের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে জিতে আসা রাজীব গান্ধী পাঁচ বছর পর হেরে যান। বাম ও বিজেপি-র সমর্থনে প্রধানমন্ত্রী হন বিশ্বনাথ প্রতাপ সিং। বফর্স নিয়ে দেশজুড়ে প্রচার করেছিলেন বিশ্বনাথ প্রতাপ সিং। কলকাতার সভায় বুকপকেট থেকে কাগজ বের করে তাকে বলতে শুনেছি, ''সব নাম আমার কাছে আছে। ক্ষমতায় এলে আমি সব নাম ফাঁস করে দেব। সবাইকে শাস্তি দেব।'' সেটা আর হয়নি। বিশ্বনাথ প্রতাপ সিং প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন, কিন্তু নতুন করে কোনো নাম তিনি জানাতে পারেননি। কেউ শাস্তিও পাননি।

উদাহরণ প্রচুর। অন্তত পাঁচজন মুখ্যমন্ত্রী দুর্নীতির জন্য শাস্তি পেয়েছেন। লালুপ্রসাদ যাদব, জয়লিলতা, জগন্নাথ মিশ্র, নেদুনচেঝিয়ান ও মধু কোড়া।  একটা সময়ে ইউপিএ-র সুরেশ কালমাডি, এ রাজা-সহ একের পর এক মন্ত্রী, সাংসদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। এখন দুর্নীতির অভিযোগে কেজরিওয়াল ও হেমন্ত সোরেন জেলে। তাদের বিরুদ্ধে অবশ্য অভিযোগ প্রমাণ হয়নি। ২০০৪ সালের পর থেকে ২৫ জন রাজনীতিকের বিরুদ্ধে ইডি, সিবিআই ব্যবস্থা নিয়েছিল। তাদের মধ্যে ২৩ জন রেহাই পেয়েছেন বলে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের রিপোর্ট বলছে। বিরোধীদের অভিযোগ, কারো বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠার পর তিনি বিজেপি-তে যোগ দিচ্ছেন। তখন আর তার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নিয়ে হইচই হচ্ছে না। তারা বলেন, বিজেপি হলো ওয়াশিং মেশিন, সেখানে ধোলাই হলে সকলে একেবারে অভিযোগহীন হয়ে যায়।

রাজনৈতিক চাপানউতোরের বাইরে একটা তথ্য বেরিয়ে আসছে, সেটা হলো, ভারতে সর্বোচ্চ স্তরে দুর্নীতির অভিযোগ পুরনো। পাশাপাশি এটাও ঘটনা, দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে প্রচুর, কিন্তু আদালতে তা প্রমাণ হয় কম। সারদা, বারদের কথাই ধরুন। সেখানে এখনো তদন্তই শেষ করা যায়নি। ভারতে চালু কথাই হলো, দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণ করা সহজ নয়। ফলে উচ্চপদের দুর্নীতিও নির্মূল হয় না। আর যেখানে সর্বস্তরে দুর্নীতির জাল ছড়ানো সেখানে দুর্নীতির মূল উচ্ছেদ করতে গেলে উঁচু জায়গার দুর্নীতি বন্ধ করতেই হবে।

তবে এখানে একটা সমস্যাও আছে। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের হিসাব, শুধু ট্রাকচালকরা ভারতে বছরে ২২২ কোটি টাকা ঘুষ দেয়। বিবেক দেবরায় ও লাভিশ ভাণ্ডারীর বইয়ে দাবি করা হয়েছে, ভারতে দুর্নীতি থেকে সরকারি কর্মীদের আয় ৯২ হাজার কোটি টাকারও বেশি। এতে সর্বস্তরের কর্মীই জড়িত থাকেন। এমনও শোনা যায়, টাকার ভাগ নাকি নিচু থেকে উঁচু সবজায়গায় যায়।  এই দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়তে গেলে উঁচু-নিচুর ভেদ করা যাবে কি? আগেপরের হিসাব কষা যায় কি?

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য