ভারতে নির্বাচনে অনিয়ম রুখতে অ্যাপ, চিপ
১১ এপ্রিল থেকে ১৯ মে পর্যন্ত সাত পর্যায়ে ভারতের সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে৷ এবারের নির্বাচনে অনিয়ম রুখতে নানান ব্যবস্থা নিয়েছে নির্বাচন কমিশন৷
ছবিসহ ভোট
এতদিন পর্যন্ত ‘ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিন’ বা ইভিএম-এ শুধু প্রার্থীর নাম ও দলীয় চিহ্ন থাকত৷ এবারের নির্বাচনে প্রার্থীর নামের পাশে থাকবে প্রার্থীর ছবিও থাকবে৷ নির্বাচন কমিশন বলছে, ভোটারদের মধ্যে প্রার্থী সম্বন্ধে সচেতনতা বাড়াতেই এই উদ্যোগ নেয়া হয়েছে৷
ইভিএম-এর গায়ে চিপ!
এবারের নির্বাচনে ব্যবহৃত ইভিএমে থাকবে ‘জিপিএস’ চিপ, যার সাহায্যে বোঝা যাবে কোনো ইভিএম নির্দিষ্ট জায়গা থেকে সরেছে কি না৷ এতে করে ইভিএমের কারচুপি রোখা যাবে বলে মনে করেন নির্বাচন কমিশনের কর্তারা৷
হ্যাকিং রুখতে...
গত নির্বাচনের পর অভিযোগ ওঠে যে ইভিএম ‘হ্যাক’ করা সম্ভব৷ এই অভিযোগের মোকাবিলা করতে এবার পরিবর্তন আনা হয়েছে৷ ভোটদানের পর প্রতি ভোটারের নির্বাচিত প্রার্থীর বিবরণী আপনা থেকেই ইভিএম থেকে প্রিন্ট হয়ে বের হবে৷ দান করা ভোটের বিবরণী ভোটার নিজে চেক করে নেবার পর তা ভাঁজ করে পুরে দিতে হবে ব্যালট বাক্সে৷ এভাবেই ইভিএমের কারচুপি রুখতে দুই দফায় ভোট যাচাইয়ের সমাধান করা হয়েছে৷
অপরাধী সাংসদ রুখতে...
বর্তমান লোকসভার ১৮৬ জন সাংসদের বিরুদ্ধে অপরাধের অভিযোগ রয়েছে৷ এর মধ্যে রয়েছে খুন, ধর্ষণের মতো গুরুতর অভিযোগও৷ এবারের নির্বাচনে ভোটাররা যাতে প্রার্থীদের বিরুদ্ধে থাকা অভিযোগ সম্পর্কে অবগত হয়েই তাঁদের ভোট দেন, তা নিশ্চিত করতে নির্বাচন কমিশন নতুন সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷ প্রতি প্রার্থীকে টিভি চ্যানেল ও পত্রিকায় তাদের বিরুদ্ধে থাকা অভিযোগের সম্পূর্ণ তালিকা প্রকাশ করতে হবে৷
মোবাইল অ্যাপ দিয়ে নজরদারি
প্রায় ৫,০০০ ভোটদান কেন্দ্র ও গণনাকেন্দ্রে থাকবে ‘লাইভ স্ট্রিমিং’ বা সরাসরি সম্প্রচারের সুবিধা, যার সাহায্যে ভোটাররা নিজেদের ঘরে বসে দেখতে পারেন কেমন হচ্ছে ভোটগ্রহণ ও গণনা প্রক্রিয়া৷ এছাড়াও, আসতে চলেছে নতুন মোবাইল ‘অ্যাপ’, যার মাধ্যমে ভোটাররা ভোটপ্রক্রিয়ার ওপর নজর রাখতে পারবেন৷ এই প্রকল্পের নাম দেয়া হয়েছে ‘সিটিজেন মনিটর’৷
নারীদের জন্য
ভারতে বরাবরই নির্বাচনে নারীদের প্রতিনিধিত্ব কম৷ কিন্তু মোট ভোটার সংখ্যার প্রায় অর্ধেক নারীরা৷ তাই এবারের নির্বাচনে রয়েছে ‘নারীবান্ধব’ ভোটগ্রহণ কেন্দ্র, যেখানে ভোটদান থেকে ভোটগ্রহণ সব কাজ করবেন নারীরাই৷ উল্লেখ্য, শুধু কর্নাটকেই ইতিমধ্যে মোট ৬০০টি নারীবান্ধব ভোটকেন্দ্র ঘোষিত হয়েছে৷
তৃতীয় লিঙ্গের জন্য
২০১৪ সালে একটি ঐতিহাসিক রায় ঘোষণার পর থেকে ভারতে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ বা ‘হিজড়া’দের দেয়া হয়েছে সম্পূর্ণ ভোটাধিকার৷ এবারের নির্বাচনে তাঁদের মোট ভোটারের সংখ্যা ৩৯,০০০ - যা গতবারের তুলনায় অনেক বেশি৷
ফেসবুকের ভূমিকা কী?
নির্বাচনের তফশিল ঘোষণা হবার পর থেকেই ফেসবুকে শুরু হয়েছে পক্ষ-বিপক্ষের নানা আলোচনা৷ কিন্তু নির্বাচন কমিশনের কড়া নির্দেশ, প্রতি প্রার্থীকে কমিশনের কাছে দিতে হবে তাদের ফেসবুক অ্যাকাউন্টের বিস্তারিত খুঁটিনাটি, যাতে কোনো প্রার্থীর প্রোফাইল থেকে বিভ্রান্তিকর তথ্য না ছড়ায়৷
সামাজিক মাধ্যমে সততা
শুধু ফেসবুক নয়, অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ওপরেও রয়েছে নির্বাচন কমিশনের কড়া নজর৷ সামাজিক মাধ্যমে আইনগতভাবে প্রচার চালাতে পারেন প্রার্থীরা, কিন্তু সে ক্ষেত্রে রাজনৈতিক বিজ্ঞাপনের গায়ে থাকতে হবে ‘পাবলিশড বাই’ বা ‘পেড ফর বাই’ তকমা৷ এতে করে সাধারণ জণগনের বুঝতে সুবিধা হবে, ঠিক কোন দলের বা গোষ্ঠীর হয়ে কোন প্রচার চালানো হচ্ছে৷ এতে মিথ্যা প্রচারণার ধারা কমবে বলে মনে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন৷