ভারতে বিচার বিভাগে দুর্নীতি
২২ জুলাই ২০১৪তিনি বলেন, ২০০৪ সালে কংগ্রেস জোট সরকারের আমলে তামিলনাড়ুর ডিস্ট্রিক্ট জাজের বিরুদ্ধে একাধিক দুর্নীতির অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও মাদ্রাজ হাইকোর্টের অস্থায়ী প্রধান বিচারপতি কলমের এক খোঁচায় ঐ বিচারকের বিরুদ্ধে সব অভিযোগ খারিজ করে দেন৷ শুধু তাই নয়, পরবর্তীকালে ঐ বিচারককে তামিলনাড়ু হাইকোর্টের অতিরিক্ত বিচারপতি পদে উন্নীত করা হয়৷
বিচারপতি কাটজুর অভিযোগ, ঐ বিচারকের পেছনে ছিল রাজ্যের এক বড় রাজনৈতিক দলের জোরালো সমর্থন৷ ঐ রাজনৈতিক দল কেন্দ্রে কংগ্রেস জোট সরকারের এক ওজনদার শরিক৷ জেলায় বিচারক থাকাকালীন ঐ রাজনৈতিক দলের এক নেতার জামিন মঞ্জুর করেছিলেন তিনি৷
বিচারপতি কাটজু সুপ্রিম কোর্টের তামিলনাড়ু হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি পদে যোগ দিয়ে এবিষয়ে তৎকালীন প্রধান বিচারপতির দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি গোয়েন্দা বিভাগকে দিয়ে ঐসব অভিযোগের তদন্ত করান এবং গোয়েন্দা বিভাগের রিপোর্টে তা সত্য প্রমাণিত হয়৷ যেহেতু উক্ত বিচারকের দুবছরের কার্যকালের মেয়াদ শেষ হবার মুখে, তাই উক্ত বিচারপতির মেয়াদ বাড়ানো হবে না, এটাই ধরে নেয়া হয়েছিল৷ কিন্ত দেখা গেল তাঁকে আরো এক বছর এক্সটেনশন দেয়া হয়৷ বিচারপতি নিয়োগের নির্বাচকমন্ডলী তাঁর এক্সটেনশন নামঞ্জুর করা সত্ত্বেও কীভাবে তাঁর কার্যকালের মেয়াদ বাড়ানো হলো? বিচারপতি কাটজুর বক্তব্য অনুযায়ী, তখন কেন্দ্রে কংগ্রেস জোট সরকারে তামিলনাড়ুর এক ওজনদার রাজনৈতিক দলের মন্ত্রী মনমোহন সিং সরকারের ওপর রাজনৈতিক চাপ তৈরি করে, এই যুক্তি দেখিয়ে যে, সংসদের নিম্নকক্ষ লোকসভায় মনমোহন সিং সরকারের সংখ্যাগরিষ্টতা না থাকায় ঐ তামিল দল, ধরে নিতে হবে ডিএমকে, তার সমর্থন তুলে নেবে এবং সরকার পড়ে যাবে৷ মনমোহন সিং তখন জাতিসংঘের অধিবেশনে যোগ দিতে দিল্লি বিমানবন্দরে৷ খবর শুনে তিনি চিন্তিত হয়ে পড়েন৷ তখন মন্ত্রিসভার এক কংগ্রেস মন্ত্রী তাঁকে আশ্বস্ত করে বলেন, পরিস্থিতি তিনি সামলে নেবেন যাতে সরকার না পড়ে৷ পরে শীর্ষ আদালতের তৎকালীন প্রধান বিচারপতিকে তিনি জানান, উক্ত বিচারপতির কার্যকালের মেয়াদ না বাড়ালে সরকারে সংকট তৈরি হবে৷ এরপর ঐ বিচারপতিকে এক্সটেনশন দেয়া হয় এবং পরে তাঁর পদোন্নতি হয়৷
সমাধান কী?
বিশেষজ্ঞদের মতে, এ ধরণের অভিযোগের স্থায়ী সমাধান হলো অবিলম্বে বিচার বিভাগের সংস্কার৷ সুপ্রিম কোর্ট ও হাইকোর্টের বিচারপতিকে নিয়ে যে নির্বাচক মন্ডলীর সিস্টেম আছে, তাতে গলদ রয়ে গেছে৷ বিচারকদের নিয়ে গঠিত নির্বাচকমন্ডলী ইচ্ছামত সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না৷ এর সংস্কার করে সংসদের অনুমোদনক্রমে আলাদা বিচার বিভাগীয় নিয়োগ কমিশন গঠন করা দরকার৷ বিচার বিভাগকে রাজনৈতিক সংস্পর্শ থেকে যতটা সম্ভব দূরে রাখতে হবে৷ যদি সেটা পারা যেত, তাহলে এক মন্ত্রী সরাসরি প্রধান বিচারপতির কাছে যেতে পারতেন না৷ দ্বিতীয়ত, অবসর গ্রহণের পরই কোন বিচারপতিকে সরকারি কমিশন বা ট্রাইব্যুনালের প্রধান হিসেবে নিয়োগ করা উচিত নয়৷ বিচারপতির অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগাতে হলে কয়েক বছর অপেক্ষা করা দরকার৷ নাহলে পক্ষপাতিত্বের আশঙ্কা থেকে যায়৷