সংকটে ভারত-ইটালি সম্পর্ক
১৫ মার্চ ২০১৩কূটনীতির চেয়ে এখন বড় হয়ে দেখা দিয়েছে আইনি জটিলতা৷ সুপ্রিম কোর্ট ভারতে নিযুক্ত ইটালির রাষ্ট্রদূতকে ভারত ছাড়তে নিষেধ করেছেন৷ সেই নির্দেশ পালন করা হবে বলে সরকার জানিয়েছে৷ পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, দেশের এবং বিচার বিভাগের স্বার্থে এই নির্দেশ যথার্থ৷ ইটালির রাষ্ট্রদূত স্বয়ং বিচারাধীন ঐ দুজন ইটালীয় নৌরক্ষীকে ২২শে মার্চের মধ্যে ভারতে ফিরিয়ে আনা হবে বলে সুপ্রিম কোর্টে মুচলেকা দেন৷ সুপ্রিম কোর্ট সেই মুচলেকা ভঙ্গের কৈফিয়ৎ চাইতে পারেন৷
এখানে বড় বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে কূটনৈতিক রক্ষাকবচ৷ আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক অধ্যাপক ইমন কল্যাণ লাহিড়ি ডয়চে ভেলেকে বললেন, ‘‘আদালত অবমাননা বা অন্য কোনো অপরাধে কোনো বিদেশি কূটনীতিককে আসামির কাঠগড়ায় দাঁড় করানো যাবেনা, অন্তত ১৯৬১ সালের জাতিসংঘের জেনিভা কনভেনশন তাই বলে৷ ১৮৭টি দেশের স্বাক্ষরিত কূটনৈতিক সম্পর্ক বিষয়ক জেনিভা কনভেনশনে বলা আছে, কোনো কূটনৈতিক সদস্যকে যে-দেশে কর্মরত, সেই দেশের আদালতে আসামি হিসেবে বিচার করা যাবেনা কূটনৈতিক রক্ষাকবচের কারণে৷''
যেমন পাকিস্তানে মার্কিন দূতাবাসের সদস্য রেমন্ড ডেভিসের বিরুদ্ধে লাহোরে দুজন পাকিস্তানি নাগরিককে গুলি করে হত্যার অভিযোগে মামলা দায়ের করা হয় লাহোর হাইকোর্টে৷ এই নিয়ে দীর্ঘ চাপানউতোর চলে পাকিস্তানের সঙ্গে ওয়াশিংটনের৷ ওঠে দুই দেশের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থেকে আর্থিক সাহায্যের বিষয়ও৷ পাকিস্তান সরকারের সঙ্গে একটা ফয়সালার জন্য ইসলামাবাদে ছুটে যান সাবেক সেনেটর জন কেরি৷ তবু ফয়সালা হয়নি৷ মামলা ঝুলে আছে৷
রক্ষাকবচ সত্ত্বেও বড়জোর অভিযুক্ত কূটনীতিককে অবাঞ্ছিত ব্যক্তি হিসেবে বহিষ্কার করা যেতে পারে৷ যেমন, ভারতীয় কূটনীতিক অনিল ভার্মাকে সম্প্রতি বহিষ্কার করেছিল ব্রিটিশ সরকার বৌকে মারধর করার অভিযোগে৷ ব্যতিক্রম শুধু সংশ্লিষ্ট সদস্য যদি কূটনৈতিক কাজের বাইরে অভিযুক্ত হন – যেমন সম্পত্তি বা ব্যবসায়িক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে৷
কূটনৈতিক রক্ষাকবচ ইস্যুতে তাই সরকারের মধ্যে আছে দ্বিমত৷ একাংশের মতে, এতে বিদেশে ভারতীয় কূটনীতিকরা অসুবিধায় পড়বেন ভিয়েনা কনভেনশন অনুযায়ী৷ তাই কূটনৈতিক সমাধানের চেয়ে বড় হয়ে উঠেছে আইনি পন্থা৷ ভারতের আন্তর্জাতিক আদালতের যাবার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেয়া যাচ্ছেনা৷ অন্যদিকে ইটালি মনে করে, আন্তর্জাতিক আইনের দিক থেকে তাদের যু্ক্তি অকাট্য৷ আন্তর্জাতিক সালিশিতে তাই ইটালি রাজি৷
অধ্যাপক লাহিড়ির মতে, ভারত ও ইটালির মধ্যে প্রত্যর্পণ চুক্তি থাকলে ইটালির ঐ দুজন নৌরক্ষীকে ভারতে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হতো৷ এখন ভারতে যেটা করতে পারে, তা হলো ইটালির সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক ছেঁটে ফেলা৷