ভারতে সরকারি ভর্তুকিতে তীর্থযাত্রার চল
৩ জুন ২০২২দেশের বাইরে চারটি তীর্থ ভারতে খুবই আলোচিত৷ তিব্বতে কৈলাস-মানসসরোবর তীর্থ হিন্দুদের কাছে খুবই পবিত্র৷ শিখদের পবিত্র তীর্থস্থান কর্তারপুর৷ যা এখন পাকিস্তানের অন্তর্গত৷ পাকিস্তানের বালুচিস্তানে আছে হিন্দুদের আরেক পবিত্র তীর্থস্থান হিংলাজ৷ আর মুসলিমদের পবিত্র তীর্থ হজ৷
স্বাধীনতার পর থেকে ভারত সরকার প্রায় কখনোই কোনো তীর্থযাত্রীকে সম্পূর্ণ সরকারি অর্থে তীর্থে পাঠায়নি৷ তবে ভর্তুকি দেওয়ার রীতি চালু আছে৷ সম্প্রতি সেই রীতি নিয়েই বিতর্ক শুরু হয়েছে৷ কারণ, হজের ভর্তুকি বন্ধ করে দিলেও বাকি তীর্থগুলির ভর্তুকি বন্ধ করেনি সরকার, বরং বাড়িয়েছে৷
ভর্তুকি বিতর্কের আলোচনায় ঢোকার আগে কয়েকটি বিষয় স্পষ্ট করে নেয়া দরকার৷ হিন্দু তীর্থ মানস-সরোবর যাত্রায় সরকার ভর্তুকি দিলেও হিংলাজের ক্ষেত্রে তেমন কোনো রীতি নেই৷ কারণ, খুব কম ভারতীয়ই বালুচিস্তানে হিংলাজে যেতে পারেন৷ ২০১৪ সালে এ বিষয়ে সংসদে এক প্রশ্নের উত্তরে তৎকালীন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী জেনারেল ভি কে সিংহ বলেছিলেন, ১৯৭৪ সালে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে যে প্রোটোকল চুক্তি হয়েছিল, সেখানে দুই দেশের তীর্থস্থানের একটি তালিকা তৈরি হয়েছিল৷ কিন্তু সেখানে হিংলাজ ছিল না৷ পরবর্তীকালে ভারত সরকার হিংলাজকে ওই তালিকায় ঢোকানোর আবেদন জানিয়েছিল পাকিস্তানকে৷ কিন্তু পাকিস্তান কোনো উত্তর দেয়নি৷ সম্প্রতি বিজেপি হিংলাজ করিডোর করার দাবিও জানিয়েছে৷ কিন্তু এখনো তা আলোচনার স্তরে আছে৷ ফলে হিংলাজ তীর্থে ভারত সরকার কোনো ভর্তুকি দেয় না৷
ভারতে কেবল কেন্দ্রীয় সরকার ভর্তুকি দেয় না, রাজ্য সরকারগুলিও বিভিন্ন খাতে তীর্থ-ভর্তুকি দিয়ে থাকে৷ আর সেই ভর্তুকি নিয়েই উঠছে প্রশ্ন৷ ২০১২ সালে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ ছিল, ১০ বছরের মধ্যে ধীরে ধীরে হজের ভর্তুকি কমাতে হবে৷ এবং সেই অর্থ মুসলিম নারীদের শিক্ষায় ব্যয় করতে হবে৷ সুপ্রিম কোর্টের এই রায়ের পর ২০১৮ সালে কেন্দ্রীয় সরকার হজের ভর্তুকি বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়৷ কিন্তু সেই একই যুক্তিতে মানস সরোবর যাত্রার ভর্তুকি বন্ধ করেনি৷ তথ্য বলছে, ২০২২ সালে বিভিন্ন রাজ্য সরকার মানস সরোবর যাত্রার ভর্তুকি বাড়িয়েছে৷
২০২২ সালের মানস সরোবর যাত্রার জন্য সবচেয়ে বেশি খরচ করছে যোগী আদিত্যনাথের উত্তরপ্রদেশ৷ আগের চেয়ে ভর্তুকির হার কয়েকগুণ বাড়িয়ে করা হয়েছে জনপ্রতি এক লাখ টাকা৷ রাজস্থানেও ভর্তুকির পরিমাণ সমান৷ হরিয়ানা সেখানে ভর্তুকি দেয় ৫০ হাজার টাকা৷ কর্ণাটক দেয় ৩৫ হাজার টাকা৷ গুজরাতে দেওয়া হয় ৩০ হাজার টাকা৷ প্রশ্ন উঠেছে, উত্তরপ্রদেশ কিংবা রাজস্থান কেন এই পরিমাণ ভর্তুকি দিচ্ছে? কেন তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে না? হজের যুক্তিতেই কি এই ভর্তুকিও বন্ধ হওয়া উচিত নয়?
শিখরাও এ প্রশ্ন তুলেছেন৷ তাদের প্রশ্ন, হজ বা মানস সরোবর যাত্রায় যদি ভর্তুকি দেওয়া হয়, কর্তারপুরে কেন দেওয়া হবে না৷ যদিও কর্তারপুর ভারত সীমান্ত থেকে মাত্র চার কিলোমিটার ভিতরে৷ ভারত-পাকিস্তানের যৌথ উদ্যোগে সেখানে একটি করিডোর তৈরি করা হয়েছে৷ ভিসা ছাড়াই শিখ তীর্থযাত্রীরা সেখানে ঢুকতে পারেন৷
ধর্ম নিয়ে গত কয়েকবছরে তোলপাড় হচ্ছে ভারতীয় রাজনীতি৷ ভর্তুকির প্রশ্নটিও তা-ই বার বার রাজনৈতিক ময়দানে চলে আসছে৷