ভারতের দাসপ্রথা
৮ নভেম্বর ২০১৩গৃহকর্মীদের অধিকারের ব্যাপারে কোনো আইন না থাকায় ভারতে দিন দিন বাড়ছে তাঁদের উপর সহিংসতা৷ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ১৫ বছরের এক গৃহকর্মী জানায়, দক্ষিণ দিল্লিতে এক সিনিয়র কর্পোরেট কর্মকর্তার বাড়িতে তিন মাস কাজ করেছিল সে৷ এই তিন মাসে ঐ ব্যক্তি আচড়ে-কামড়ে ক্ষত-বিক্ষত করেছে তার শরীর৷ গভীর ক্ষত সৃষ্টি হয়েছে মাথাতেও৷ সেই আতঙ্ক এখনও তার পিছু ছাড়েনি৷ সে যে বেঁচে আছে, এটাই তার কাছে বিস্ময় মনে হয়৷
ডয়চে ভেলেকে সে জানায়, প্রায় প্রতিদিনই ঐ ব্যক্তি তাকে নির্যাতন করত৷ মার খাওয়ার ফলে দুর্বল হয়ে পড়ত সে এবং বেশিরভাগ দিনই তাকে খাবার দেয়া হত না৷ এমনকি সে যাতে পালিয়ে যেতে না পারে, সেজন্য যথেষ্ট কাপড়ও পড়তে দেয়া হত না তাকে৷
সেপ্টেম্বর মাসের শেষের দিকে এক সন্ধ্যায় প্রতিবেশী একজন তার চিৎকার শুনে পুলিশে খবর দিলে পুলিশ এসে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠায় এবং ঐ ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে৷
এরপর দিল্লিতে গৃহকর্মীকে নির্যাতনের অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয় এক বিমানবালাকে৷ ১২ বছরের একটি গৃহকর্মীকে লাঠিপেটা করে প্রায় আধমড়া করে ফেলেছিলেন ঐ নারী৷ এক বছর ধরে তার বাসায় কাজ করেছে মেয়েটি৷ চাইল্ড ওয়েলফেয়ার বোর্ডকে ঐ গৃহকর্মী জানায়, এক বছর সেখানে কাজ করেছে সে৷ প্রতিদিন ঐ মহিলা নেশাগ্রস্ত হয়ে তাকে বেধড়ক পেটাতো৷
সবশেষ যে ঘটনাটি ঘটেছে তা ভয়াবহ৷ বহুজন সমাজ পার্টির সংসদ সদস্যের স্ত্রীর হাতে নির্যাতনের ফলে মারা যায় ১৭ বছরের গৃহকর্মী৷ অবশ্য গ্রেপ্তার হয় ঐ নারীকে৷
এ সব ঘটনা ভারতে গৃহকর্মীদের উপর সহিংসতার চিত্রই তুলে ধরেছে৷ ভারতের পূর্ব এবং উত্তরাঞ্চল থেকে দরিদ্র পরিবারের লাখো নারী ও শিশু রাজধানীতে কাজের খোঁজে আসে৷ এরপর পাচার এবং সহিংসতা শিকার হয়৷ ২০০৬ সালে ভারতে ১৪ বছরের কম বয়সি ছেলে-মেয়েদের কাজ করা নিষিদ্ধ করা হলেও ঝাড়খন্ড, ছত্তিশগড় বা পশ্চিমবঙ্গে এ আইন মানা হয় না৷
শক্তিবাহিনী নামে একটি প্রতিষ্ঠানের প্রধান ঋষিকান্ত ডয়চে ভেলেকে জানান, ছোট ছোট শহর থেকে বড় শহরগুলো ছেলে-মেয়ে নিয়ে আসে বিভিন্ন সংস্থা এবং বিভিন্ন বাসায় কাজে নিয়োগ করে৷ একটি চক্র এ কাজের সাথে জড়িত৷
শক্তিবাহিনীর কাজ হলো বাসায় কাজ করে নির্যাতনের শিকার এমন ছেলে-মেয়েদের উদ্ধার করা৷ দিল্লিতে এ পর্যন্ত অন্তত ৬০০ নারী ও শিশুকে পাচার ও নির্যাতনের হাত থেকে রক্ষা করেছে প্রতিষ্ঠানটি৷
গৃহকর্মীদের রক্ষায় আইন করার দাবি যত সোচ্চার হচ্ছে, ভারত সরকার যেন ততটাই বধির৷ গত কয়েক বছর আগে এ ধরনের আইনের একটা খসড়া জমা দেয়া হয়েছে, যেটা নিয়ে কোনো কাজ হয়নি৷
ঐ খসড়ায় গৃহকর্মীদের বেতন, কাজের সময় এবং ছুটির অধিকারের কথা বলা হয়েছে৷ ন্যাশনাল কমিশন ফর প্রটেকশান অফ চাইল্ড রাইটস-এর সদস্য নীনা নায়ক ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, খুব দ্রুত এ ব্যাপারে আইন করে তার বাস্তবায়ন করা উচিত৷