1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ভারতের দুর্নীতি বিরোধী অভিযান থেকে শিক্ষা নিচ্ছে চীন

১৩ জুন ২০১১

আন্না হাজারে অথবা বাবা রামদেবের মতো রাজধানীতে গিয়ে আন্দোলন চালানো চীনে সম্ভব নয়৷ তাই ওয়েবসাইটের আড়ালে দুর্নীতি দমনের অভিনব প্রচেষ্টা শুরু হয়েছে সেদেশে৷

https://p.dw.com/p/11ZIS
China, Taiwan, Computer, Hacker
ওয়েবসাইটের আড়ালে দুর্নীতি দমনের অভিনব প্রচেষ্টা শুরু হয়েছে চীনেছবি: AP

ভারতে দুর্নীতির বিরুদ্ধে জনমতের চাপ থেকে প্রেরণা পাচ্ছে চীনের মানুষও৷ সরকারি দপ্তরে ঘুস না দিলে চীনে অনেক কাজই করানো কঠিন৷ অথচ এমন সব ঘটনা ঘটলে নালিশ করার পথও বেশি নেই৷ ভারতে ঘুস দেওয়ার ঘটনা জানাতে ‘আই পেড এ ব্রাইব ডট কম' নামের এক ওয়েবসাইট'এর আদলে চীনে চালু হয়েছে ‘আই ব্রাইবারি ডট কম'৷ উদ্যোক্তাদের ঘোষিত লক্ষ্য হলো, অনৈতিক পথে বাড়তি সুবিধা নেওয়া বন্ধ করে সব নাগরিকের সমান অধিকারের ভিত্তিতে সুস্থ প্রতিযোগিতা প্রতিষ্ঠা করা৷ ব্যবহারকারীদের প্রতি ওয়েবসাইটে আবেদন জানিয়ে বলা হয়েছে, ‘‘দয়া করে আপনার ঘুস দেওয়ার অভিজ্ঞতার কথা জানান, যাতে দুর্নীতি কোথাও লুকোবার জায়গা না পায়৷''

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশানাল'এর সূত্র অনুযায়ী দুর্নীতিগ্রস্ত দেশগুলির তালিকায় ২০১০ সালে চীনের তুলনায় ভারতে দুর্নীতির মাত্রা ছিল অনেক বেশি৷ ১৭৮টি দেশের মধ্যে চীন ৭৮ ও ভারত ৮৭ নম্বরে ছিল৷ অবশ্য ওয়েবসাইটের মাধ্যমে ঘুস দেওয়ার অভিজ্ঞতা জানাতে যে হিড়িক পড়েছে, তাতে চীনের করুণ পরিস্থিতির একটা ভয়াবহ চিত্র উঠে আসছে৷ চীনের শাসক কমিউনিস্ট পার্টি বার বার দুর্নীতি নির্মূল করার অঙ্গীকার করে থাকে বটে, কিন্তু সেই কাজে অগ্রগতির তেমন কোনো লক্ষণ এখনো দেখা যাচ্ছে না৷ প্রতি বছর দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মকর্তাদের শাস্তির ঘটনা বেড়েই চলেছে৷ ‘ফাইভ টোয়েন্টি টু ডট কম' নামের আরেক ওয়েবসাইটে এক ব্যবসায়ী লিখেছেন, একটি অর্ডার পেতে তাঁকে প্রায় ৪৬৩,০০০ ডলার ঘুস দিতে হয়েছে৷ এমনকি এক কর্মকর্তাকে ১০ দিনের ইউরোপ ভ্রমণেও নিয়ে যেতে হয়েছে৷ তিনি আরও লিখেছেন, ‘‘পয়সার গরম দেখাতে আমি একথা লিখছি না৷ আজকের এই সমাজে আমি একেবারে অসহায় বোধ করছি৷'' কিছু লোক বলছেন, আমরা একদিকে দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মকর্তাদের ঘৃণা করি৷ অন্যদিকে আবার কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ পাওয়া জন্য মরিয়া হয়ে যাই৷ আমরা একচেটিয়া ব্যবসা চাই না৷ কিন্তু সেই সব কোম্পানিতে মোটা মাইনের চাকরি পেতে সবরকম ফন্দি-ফিকিরের খোঁজ করি৷ মুখে আমরা বাঁকা পথের নিন্দা করি৷ কিন্তু নিজেদের কাজ সারতে চেনাশোনা লোক খুঁজে যেভাবে হোক নিজেদের লক্ষ্য পূরণ করার চেষ্টা করি৷

china, website, ibribary.com
ওয়েবসাইটের মাধ্যমে ঘুস দেওয়ার অভিজ্ঞতা জানাতে যে হিড়িক পড়েছে, তাতে চীনের করুণ পরিস্থিতির একটা ভয়াবহ চিত্র উঠে আসছেছবি: autoproxy.org

আত্মসমালোচনার এমন দৃষ্টান্তও পাওয়া যায় চীনের দুর্নীতি বিরোধী ওয়েবসাইটে৷ এছাড়া রয়েছে বিভিন্ন ক্ষেত্রে দুর্নীতির ভুরিভুরি উদাহরণ৷ গাড়ি চালানোর পরীক্ষা থেকে শুরু করে হাসপাতালে সুচিকিৎসা – ঘুস না দিলে প্রায় কিছুই পাওয়া যায় না৷ যারা এসব ঘটনার কথা লিখছেন, তাদের পরিচয় অবশ্যই গোপন থাকে৷ ফলে সেই সব অভিযোগ যে কতটা সত্যি তা যাচাই করারও কোনো উপায় নেই৷ এমনকি এসব ওয়েবসাইট কারা চালাচ্ছে, তাও কেউ জানে না৷ কিছু অঞ্চলে অবশ্য প্রশাসনই ইন্টারনেটের মাধ্যমে অভিযোগ জানাতে উৎসাহ দিচ্ছে৷ অতীতে এমন অনেক ওয়েবসাইটের মতো ‘আই ব্রাইবারি ডট কম'ও সরকারি রোষের মুখে পড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে৷ এখানেই ভারতের সঙ্গে চীনের মূল পার্থক্য স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে৷

প্রতিবেদন: সঞ্জীব বর্মন

সম্পাদনা: দেবারতি গুহ