ভারতে ৬৪ কোটি মানুষ ভোট দিয়েছেন
প্রকাশিত ৩ জুন ২০২৪শেষ আপডেট ৩ জুন ২০২৪আপনারা যা জানা দরকার
ভারতের জাতীয় নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণাকে কেন্দ্র করে হালনাগাদ নানা তথ্য পাবেন এখানে৷
পশ্চিমবঙ্গে ভোটের ফল কী হতে পারে?
লোকসভা নির্বাচনের বুথ ফেরত সমীক্ষা নিয়ে ডয়চে ভেলের বিশেষ আলোচনা
ভারতে ৬৪ কোটি মানুষ ভোট দিয়েছেন
সদ্যসমাপ্ত লোকসভা নির্বাচনে ৬৪ কোটি ২০ লাখ মানুষ ভোট দিয়েছেন।
মুখ্য নির্বাচনি কমিশনার রাজীব কুমার জানিয়েছেন, ''ভোটদাতার সংখ্যার দিক থেকে এটা একটা বিশ্ব রেকর্ড। বিশ্বের কোনো দেশে কখনো এত বেশি মানুষ ভোট দেননি। যে ৬৪ কোটি ২০ লাখ মানুষ ভোট দিয়েছেন, তার মধ্যে ৩১ কোটি ২০ লাখ নারী।''
রাজীব কুমার বলেছেন, ''এবার পুনর্নির্বাচন বেশি হয়নি। মাত্র ৩৯টি জায়গায় পুনর্নির্বাচন হয়েছে। এর মধ্যে ২৫টি হয়েছে অরুণাচল ও মণিপুরে। বাকি দেশে ১৫টি জায়গায় পুনর্নির্বাচন হয়েছে।'' নির্বাচন শান্তিপূর্ণ হয়েছে বলে তিনি দাবি করেছেন।
মুখ্য নির্বাচন কমিশনারের দাবি, ''ভোটগণনার কাজেও সব ধরনের সতর্কতা নেয়া হয়েছে। রোববার বেশ কয়েকটি দলের প্রতিনিধি কমিশনের সঙ্গে দেখা করে কিছু দাবি জানিয়েছিলেন। সবগুলি মেনে নেয়া হয়েছে।''
এই নির্বাচনে দেড় কোটি নির্বাচন ও নিরাপত্তা কর্মী কাজ করেছেন। ১৩৫টি বিশেষ ট্রেন চালানো হয়েছে। এছাড়া এক হাজার ৬৯২ বার হেলিকপ্টার ব্যবহার করা হয়েছে। রাজনৈতিক দলের নেতারা যে হেলিকপ্টারে ঘুরেছেন, সেগুলিও পরীক্ষা করে দেখেছেন নিরাপত্তারক্ষীরা।
রাজীব কুমার জানিয়েছেন, ''ভোট-পরবর্তী সহিংসতার কথা মাথায় রেখে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি পশ্চিমবঙ্গ, অন্ধ্র, উত্তর প্রদেশের মতো কয়েকটি রাজ্যে ফলাফল ঘোষণার পরেও কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকবে। তারা রাজ্য সরকারের অধীনে থাকবে। তারা সেখানে দরকার হলে নিশ্চতভাবেই সহিংসতা থামাবে।''
তিনি বলেছেন, ''জম্মু ও কাশ্মীর ও মণিপুর আমাদের আশান্বিত করেছে। সেখানে প্রচুর মানুষ ভোট দিয়েছেন। জম্মু ও কাশ্মীরে আমরা বিধানসভা ভোটের কাজ খুব তাড়াতাড়ি শুরু করব।''
কারচুপির সম্ভাবনা নেই
রাজীব কুমার জানিয়েছেন, দেশে ১০ লক্ষ ৫০ হাজারের বেশি বুথ রয়েছে। ৩০ থেকে ৩৫ লক্ষ পোলিং এজেন্ট সেখানে থাকবেন। নজরদারি রাখার জন্য দল থাকবে। যারা গণনা করবেন তারা থাকবেন। সিসিটিভি ক্যামেরা থাকবে।মানুষের ভুল হলেও হতে পারে। ভোটগণনায় কারচুপির সম্ভাবনা বিন্দুমাত্র নেই। বিভিন্ন দল ভোটগণনা নিয়ে যে দাবি করেছিলেন, সব মেনে নেয়া হয়েছে।''
তিনি বলেছেন, প্রতিবারের মতো এবারেও পোস্টাল ব্যালট প্রথমে গণনা করা হবে। তারপর ইভিএমের গণনা হবে।
এক্সিট পোলের ফল প্রকাশের পর ভারতের শেয়ার বাজারে রেকর্ড
বেশিরভাগ এক্সিট পোলের ফলাফল অনুযায়ী মোদীর তৃতীয়বারের মতো ক্ষমতায় আসার আভাসে ভারতের শেয়ার বাজারের সূচকের রেকর্ড উত্থান হয়েছে৷ বেড়েছে রুপির দর৷
সোমবার শেয়ার বাজারের বিএসই সূচক তিন দশমিক ৭৬ শতাংশ বেড়ে ৭৬ হাজার ৭৩৮.৮৯ এ পৌঁছেছে, যা এ যাবৎকালের সর্বোচ্চ৷ অন্যদিকে ২০২১ সালের এক ফেব্রুয়ারির পর একদিনে নিফটি ৫০ সূচকের রেকর্ড উল্লম্ফন হয়েছে৷ বাজার বিশ্লেষক সুনিল শাহ বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেছেন, ‘‘নীতির ধারাবাহিকতা থাকলে সামনের দিনে বাজার কী হবে তার ধারণা করা যায়৷ এক্সিট পোলের ফলাফলের ভিত্তিতে সেনসেক্সের সূচক আজ ২০০০ পয়েন্ট বেড়েছে৷’’
লোকসভা নির্বাচনের বুথ ফেরত সমীক্ষা নিয়ে চলছে বিতর্ক
১ জুন ভারতে সাত দফা নির্বাচন শেষ হয়েছে। ৪ জুন ফলাফল। তার আগে বুথ ফেরত সমীক্ষা নিয়ে শুরু হয়েছে বিতর্ক।
অধিকাংশ মূলস্রোতের সংবাদমাধ্য়মে যে বুথ ফেরত সমীক্ষা দেখানো হয়েছে, তাতে বলা হচ্ছে বিপুল সংখ্য়াগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় ফিরছে মোদী সরকার। বস্তুত, অধিকাংশ সংবাদমাধ্য়মের সমীক্ষা বলছে, বিজেপির নেতৃত্বে এনডিএ ৩৫০ এর বেশি আসন পেতে চলেছে। ৫৪৩ আসনের লোকসভায় ২৭২ ম্য়াজিক ফিগার। যে দল ২৭২টি আসন পাবে, সে দলই সরকার গঠন করতে পারবে। ২০১৯ সালে বিজেপি একাই পেয়েছিল ৩০৩টি আসন। এনডিএ পেয়েছিল ৩৩০ এর বেশি আসন। এবার সেই রেকর্ড ভাঙবে বলে বুথ ফেরত সমীক্ষার ইঙ্গিত।
রাজ্য় ধরে ধরে সমীক্ষা করা হয়েছে। সেখানে দেখা যাচ্ছে পশ্চিমবঙ্গের মতো রাজ্য়ে বিজেপি ২৪ থেকে ২৭টি আসন পাচ্ছে। কোনো কোনো সমীক্ষায় বিজেপিকে দেওয়া হয়েছে ৩০ এর বেশি আসন। পশ্চিমবঙ্গে ৪২টি লোকসভা কেন্দ্র আছে। ২০১৯ সালে বিজেপি পেয়েছিল ১৮টি আসন। শাসকদল তৃণমূল জিতেছিল ২২টি আসন। কংগ্রেস পেয়েছিল দুইটি আসন। এরপর ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির ফল আগের চেয়ে খারাপ হয়েছিল। বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, বুথ ফেরত সমীক্ষায় যে ফল দেখানো হচ্ছে, বাস্তবের সঙ্গে তার মিল কম।
ভোট বিশেষজ্ঞ অধ্য়াপক বিশ্বনাথ চক্রবর্তী ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, ''পশ্চিমবঙ্গে যে ফলাফল দেখানো হচ্ছে, আমার মনে হয় না তা বাস্তবে হবে। আমার ধারণা, তৃণমূল এবং বিজেপি প্রায় সমান সমান আসন পাবে। অর্থাৎ, ২০১৯ এর ফলাফলের চেয়ে বিশেষ কোনো পরিবর্তন হবে না।'' বিশ্বনাথ মনে করেন, কেন্দ্রে নরেন্দ্র মোদীর সরকার ফিরবে। সেখানেও আসন সংখ্যা আগেরবারের চেয়ে বিশেষ বদলাবে না।
সাংবাদিক এবং দিল্লি প্রেস ক্লাবের প্রধান গৌতম লাহিড়ি মনে করেন, বুথ ফেরত সমীক্ষায় যে নম্বর দেখানো হচ্ছে, সেই নম্বরেই ভুল আছে। কর্ণাটকে কংগ্রেস যতগুলি আসনে লড়ছে, তার চেয়ে বেশি সিট দেখানো হয়েছে একটি সমীক্ষায়। ফলে বোঝাই যাচ্ছে, বুথ ফেরত সমীক্ষা নিরপেক্ষা নয়, রাজনৈতিক মদতপুষ্ট। গৌতমের বক্তব্য়, ''এবারের ভোটে গোটা দেশেই অ্যান্টি ইনকমবেন্সি অর্থাৎ, শাসকবিরোধী মনোভাব দেখা গেছে ভোটারদের মধ্য়ে। ফলে বিজেপি সরকার গঠন করতে পারবে না বলেই মনে হচ্ছে। আর পশ্চিমবঙ্গে যে ফলাফল দেখানো হচ্ছে, বাস্তবে ঠিক তার উল্টোটা ঘটবে।''
বিজেপি বুথ ফেরত সমীক্ষাকে স্বাগত জানালেও কংগ্রেস ইতিমধ্য়েই এর নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। কংগ্রেস হাইকম্য়ান্ড কর্মীদের জানিয়েছে, ভোট গণনার আগে বিরোধী শক্তিকে মানসিক চাপে ফেলতেই গণমাধ্য়মকে ব্য়বহার করেছে বিজেপি। বুথ ফেরত সমীক্ষার ফলাফল তেমনই ইঙ্গিত দিচ্ছে। গণনার দিন কর্মীদের শেষ পর্যন্ত গণনাকেন্দ্রে থাকার হুইপ জারি করেছে কংগ্রেস। তৃণমূল-সহ ইন্ডিয়া জোটের একাধিক দল একই কথা বলেছে। তাদের বক্তব্য়, বুথ ফেরত সমীক্ষার ক্ষেত্রেও বিজেপি মিডিয়াকে ব্য়বহার করেছে। যে ফলাফল দেখানো হচ্ছে, বাস্তবের সঙ্গে তার কোনো মিল নেই।