মনমোহন সিং-এর জার্মানি সফর
৯ এপ্রিল ২০১৩চিরাচরিতভাবে ভারত-জার্মান সম্পর্ক অত্যন্ত সৌহার্দপূর্ণ ও আন্তরিক৷ সেই সম্পর্কের এক নতুন পর্ব শুরু হতে যাচ্ছে প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিং-এর তিনদিনের বার্লিন সফরে৷ ২০০০ সালে সম্পাদিত ‘স্ট্র্যাটিজিক পার্টনারশিপ'-এর অধীনে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রভূত উন্নতি হয়৷ সরকারি স্তরে নিয়মিত উচ্চ পর্যায়ের সফর বিনিময় তারই অঙ্গ৷ নতুন দিল্লিতে নিযুক্ত জার্মান রাষ্ট্রদূত মিশায়েল স্টাইনার-এর মতে, ভারত এই অঞ্চলের একমাত্র দেশ যার সঙ্গে জার্মানির শীর্ষ পর্যায়ের আলোচনার এক নির্দিষ্ট কাঠামো তৈরি করা আছে৷ জার্মান চ্যান্সেলার আঙ্গেলা ম্যার্কেল আগে দু-বার ভারতে এসেছিলেন – ২০০৭ এবং ২০১১ সালে৷
দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের মূল স্তম্ভ হলো অর্থনৈতিক সহযোগিতা, শিক্ষা, বিজ্ঞান, ও সাংস্কৃতিক সহযোগিতা এবং দুদেশের জনগণের মধ্যে যোগাযোগ৷ উল্লেখ্য, জার্মানিতে প্রায় এক লাখ দশ হাজার ভারতীয়ের বাস, যার মধ্যে ৪৩ হাজার ভারতীয় পাসপোর্টের অধিকারী৷ আর বাদ বাকি সে দেশের নাগরিকত্ব গ্রহণকারী৷ শিক্ষার্থী হিসেবে আছেন আরো সাড়ে চার হাজার৷ জার্মানি ইউরোপে ভারতের বৃহত্তম বাণিজ্যিক পার্টনার৷ আন্তর্জাতিক মঞ্চেও দুদেশের সমঝোতা ঘনিষ্ঠ৷ সই হবে বেশ কয়েকটি চুক্তি৷
তবে মনমোহন-ম্যার্কেল বৈঠকের বিতর্কিত প্রসঙ্গ হবে ইইউ-ভারত অবাধ বাণিজ্য চুক্তির চুড়ান্তকরণ ইস্যু, যা ঝুলে আছে ২০০৭ সাল থেকে৷ ১৫ দফা বৈঠকের পরও তা চূড়ান্ত করা সম্ভব হয়নি৷ ইইউ-এর শক্তিশালী দেশ জার্মানি৷ অবাধ বাণিজ্য চুক্তির মতানৈক্য দূর করার দায়িত্ব জার্মানি এড়াতে পারেনা৷
কী নিয়ে মতানৈক্য? প্রথমত, ইউরোপীয় ইউনিয়ন চাইছে মোটরগাড়ি, সুরা ও অন্যান্য পণ্য রপ্তানিতে ভারত কাস্টমস ডিউটি কমিয়ে দিক৷ বিমা ক্ষেত্রে বিদেশি বিনিয়োগের উর্দ্ধসীমা বর্তমানের ২৬ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৪৯ শতাংশ করা হোক৷ জার্মানি চায় অবাধ বাণিজ্য চুক্তি বা এফটিএ হবে ব্যাপক-ভিত্তিক – আংশিক ভিত্তিতে নয়৷ যেটা ভারত করেছে দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার জোট আসিয়ান দেশগুলির সঙ্গে৷
কিন্তু ভারত নিজের বাজার কতটা খুলতে পারে? ভারত এমন কিছু করবে না যা ২০১৪ সালের নির্বাচনে এবং অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে বর্তমান সরকারের ওপর প্রতিকূল প্রভাব পড়ে৷ অন্যদিকে, জার্মানির কাছে ভারত স্বল্প মেয়াদের চুক্তিবদ্ধ ভারতীয় পেশাদার ব্যক্তিদের জন্য সিঙ্গল ভিসা দেবার দাবি জানাতে পারে৷
বামদলগুলি ইতিমধ্যেই এফটিএ নিয়ে হুঁশিয়ারি দিয়েছে যে সংসদে এবং বিশেষজ্ঞ কমিটিতে এফটিএ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা না করে এফটিএ চুক্তি সই করলে ভারতের আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে এর অভিঘাত হবে গভীর এবং দীর্ঘস্থায়ী৷ এর ফলে কারেন্ট অ্যাকাউন্ট ও বাণিজ্য ঘাটতি বেড়ে যাবে৷
উল্লেখ্য, ভারত-ইইউ বাণিজ্যিক লেনদেনের পরিমাণ ২০১০-১১ সালে ৯১ বিলিয়ান ডলারের মত৷ এফটিএ সই হলে ২০১৫ সালে তা বেড়ে হতে পারে ২০৭ বিলিয়ান ডলার – এমনটাই বলা হচ্ছে৷ তবে এই চুক্তি সই হতে হবে ২০১৩ সালের মধ্যে৷ তা না হলে আর এই নিয়ে আলোচনা হবে না – এমন হুঁশিয়ারি দিয়েছে জার্মানি তথা ইইউ৷
জার্মানিতে প্রধানমন্ত্রীর কর্মসূচির মধ্যে আছে জার্মানিতে চলা এক বছর ব্যাপী ভারত উৎসবের সমাপ্তি ঘোষণা করা৷ সাক্ষাৎ করবেন জার্মান প্রেসিডেন্ট ইওয়াখিম গাউকের সঙ্গে৷ চ্যান্সেলার আঙ্গেলা ম্যার্কেল বুধবার ড. সিং-এর সম্মানে দেবেন নৈশভোজ৷