1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ভারতের বিরুদ্ধে প্রকাশ্য দাদাগিরি এখন অতীত

৩০ জুন ২০২৩

একটা সময় ছিল, যখন ভারতকেও দাদাগিরি সহ্য করতে হয়েছে৷ তবে সেই সময় এখন অনেকটাই বদলেছে৷

https://p.dw.com/p/4THAT
Indien | Einweihung neues Parlamentsgebäude in Neu-Delhi
ছবি: AP Photo/picture alliance

কী বলা যাবে একে? উলটপুরাণ নাকি অবাক করা ঘটনা? না হলে যে অ্যামেরিকার বিরুদ্ধে অতীতে বারবার অভিযোগ উঠত, তারা আমাদের দেশের বিষয়ে নাক গলাচ্ছে, ভোটের ফল প্রভাবিত করতে চাইছে, সিআইএ-কে দিয়ে রাজনৈতিক খেলা করছে, সেই অ্যামেরিকার সাবেক রাষ্ট্রপতি ট্রাম্প ভারতে এসেছিলেন একটাই উদ্দেশ্য নিয়ে৷ উদ্দেশ্যটা হলো, অ্যমেরিকার সেই ভোটদাতাদের খুশি করা, যারা একসময় ভারত থেকে গেছিলেন, যাদের পোশাকি নাম এখন ইন্ডিয়ান অ্যামেরিকান৷ গুজরাটে 'নমস্তে ট্রাম্প' অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তো প্রায় ট্রাম্পের হয়ে ভোট দেয়ার আবেদন জানিয়ে ফেলেছিলেন বলে বিরোধীরা অভিযোগ করেছিলেন৷

সেটাই বলছিলাম উলটপুরাণ৷ ভোটের আগে ট্রাম্পের ছেলে হিন্দু মন্দিরে গেছেন, ট্রাম্প বলছেন, ভারতীয়রা তার সবচেয়ে কাছের বন্ধু৷ বাইডেন এসব করছেন ভোটের পর৷ হোয়াইট হাউসে ভোটের পর কমলা হ্যারিসকে পাশে নিয়ে সবচেয়ে ধুমধাম করে দেওয়ালি পালন করেছেন জো বাইডেন৷ সবচেয়ে বেশি ইন্ডিয়ান অ্যামেরিকানদের প্রশাসনে নিয়ে এসেছেন তিনিই৷ এরপর কয়েকদিন আগে নরেন্দ্র মোদী যখন গেছেন, তখনও তাকে বিপুলভাবে স্বাগত জানিয়েছেন বাইডেন৷

এ শুধু অ্যামেরিকায় এক শতাংশ ইন্ডিয়ান-অ্যামেরিকান ভোটদাতাদের কথা মনে রেখে নয়, এটা বিপুল পরিমাণ ভারতীয় বাজারের কথাও মাথায় রেখেও৷ তাই এখন ভোটের সময় দূরস্থান, সাধারণ সময়েও ভারতের সমালোচনা করা, প্রকাশ্যে চাপ দেয়ার রাস্তায় যায় না অ্যামেরিকা এবং অন্য কোনো পশ্চিমা দেশ৷ ভিতরে ভিতরে কী চেষ্টা হয়, সেটা তো আলাদা কথা, তা তো আর প্রকাশ্যে দেখা য়ায় না৷ যে কাণ্ডটা এখন বাংলাদেশে হচ্ছে, কখনো অ্যামেরিকা, কখনো ইউরোপের কোনো দেশ নির্বাচন নিয়ে কথা বলছে, কখনো শাসকদের সমালোচনা করছে, সেটা এখন ভারতে অভাবনীয়৷ অথচ, কয়েকদশক আগেও মানবাধিকার নিয়ে, কাশ্মীর নিয়ে, দাঙ্গা নিয়ে সোচ্চার হত পশ্চিমা দুনিয়া৷

ইন্দিরা গান্ধী যখন প্রধানমন্ত্রী, তখন তো মার্কিন প্রেসিডেন্ট নিক্সনের সঙ্গে তার সম্পর্ক ছিল আদায় কাঁচকলায়। নিক্সন যে শুধু ইন্দিরা সম্পর্কে অশোভন উক্তি করতেন তাই নয়, তিনি বলেছিলেন, ভারতীয় নারীরা হলেন বিশ্বের সবচেয়ে কম আকর্ষনীয়৷ নিক্সন ও কিসিঙ্গার যে ইন্দিরা ও ভারতীয় সম্পর্কে কী বলেছিলেন, তার একটি নথি কিছুদিন আগে প্রকাশিত হয়েছে৷ সে সব গালাগালি লেখার মতো নয়। ফলে সেসময় ভারত সম্পর্কে, ভারতের ভোট এলে নানা ধরনের অশোভন মন্তব্য, দাদাগিরির চেষ্টা সবই হয়েছে৷

আর ছিল সিআইএ ও কেজিবি নিয়ে নানা অভিযোগ৷ সিআইএ হলো মার্কিন গোয়েন্দা বিভাগ ও কেজিবি ছিল সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের গোয়েন্দা শাখা৷ তখন ভারতে কিছু হলেই বলা হত, হয় তা কেজিবি করেছে বা সিআইএ৷ অমিতাভ চৌধুরির একটা মজার ছড়া আছে এনিয়ে, ‘‘হাঁড়ির মধ্যে অনেক ভাত/তার একটি টিপিয়াই,/কোনটি আসল সিআইএ-র/ বলতে পারেন সিপিআই৷’’ সিপিআই মানে কমিউনিস্ট পার্টি অফ ইন্ডিয়া, যারা ছিল রুশপন্থি এবং সিআইএ নিয়ে সবচেয়ে সোচ্চার৷

নরসিমহা রাও যখন প্রধানমন্ত্রী, তখন তিনি এবং সেসময়ের অর্থমন্ত্রী মনমোহন সিং ভারতের দরজা খুলে দিলেন বহুজাতিক সংস্থার কাছে৷ উদার অর্থনীতির পথে হাঁটলেন৷ ভারতে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে কড়াকড়ি উঠে গেল৷ এবার ছবিটা বদলে গেল। রাষ্ট্রসংঘের হিসাব অনুযায়ী, ১৯৯১ সালে ভারত ও অ্যামেরিকার মধ্যে বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল  ৫৪২ কোটি ডলার৷ ১৯৯৬ সালে তা হয়ে গেল ৯৮৬ কোটি ডলার৷  ২০০৪ সালে দুই হাজার ২৪৬ কোটি ডলার৷ ২০১৪ সালে ছয় হাজার ৮৫৯ কোটি এবং ২০২২-২৩ এ ১২ হাজার ৮০০ কোটি৷

Goutam Hore
গৌতম হোড়, সাংবাদিক ডয়চে ভেলে৷ছবি: privat

ভারত বোয়িং ও এয়ারবাস কিনলে ঋষি সুনাক ও বাইডেন বলেন, তাদের দেশে কর্মস্স্থান বাড়বে, অর্থনীতি জোরদার হবে৷ রাশিয়া থেকে তেল কিনলেও ভারতের সাত খুন মাফ৷ বাইডেনের দূত প্রথমে এসে বলে গিয়েছিলেন, ভারত যেন সীমার মধ্যে থেকে তেল কেনে৷ সীমা মানে ইউক্রেন যুদ্ধের আগের বছরের থেকে সামান্য বেশি৷ জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী বেয়ারবক, ইইউ প্রধান থেকে শুরু করে অনেকে বলেছিলেন, রাশিয়া থেকে ভারতের তেল কেনা উচিত নয়৷ ভারত তাদের কথা কানে নেয়নি৷ এখন আর কেউ তেল নিয়ে কেউ বিশেষ কথা বলেন না৷ বললে, জয়শঙ্কর হিসাব দিয়ে দেখিয়ে দেন, কীভাবে ইইউ ভারতের তুলনায় অনেক বেশি পরিমাণ তেল রাশিয়া থেকে কিনছে৷

ভারতে যখন গণপিটুনিতে হত্য়ার খবর প্রায়ই খবরের কাগজে প্রথম পাতায় থাকত, দিল্লিতে অভাবনীয় দাঙ্গা হলো, নূপুর শর্মা বিতর্কিত মন্তব্য করলেন, তখনো অ্যামেরিকা বা ইউরোপের দেশ থেকে কোনো সাড়াশব্দ আসেনি৷ কেন? একজন বিদেশি কূটনীতিক একবার ব্যক্তিগত আলাপচারিতায় বলেছিলেন, ‘‘আমরা ভারতের বাজারকে হারাতে চাই না৷  তাই দেখবেন, ইউরোপ বা অ্যামোরিকা এখন ভারতের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে কোনো কথা বলে না৷’’ করোনা-পরবর্তীকালে চীনের বিকল্প একটা বাজার ও বিনিয়োগের জায়গা খুলে রাখতে চাইছে পশ্চিমা দেশগুলি যেখানে কম দামে দক্ষ ও অদক্ষ শ্রমিক পাওয়া যাবে৷ তাই ভারতকে তারা চটাতে চায় না৷

কে না জানে, এখন অর্থনীতিই রাজনীতির চালিকাশক্তি৷ সেই শক্তিটা ভারতের বেড়েছে বলেই আগের অবস্থা আর নেই৷ এখন কোনো বিদেশি রাষ্ট্র দিল্লিতে এসে বা নিজের দেশে বসে একথা বলে না যে ভারতের নির্বাচনকে স্বচ্ছ্ব করতে হবে৷ বলে না যে, ভারতের নির্বাচন নিয়ে তাদের মনে প্রশ্ন আছে, তারা নির্বাচনে পর্যবেক্ষক নিয়োগ করবে৷ এসব কথা বললে, হয় তার উপযুক্ত জবাব দেবে নয়াদিল্লি৷ অথবা এমন কিছু সিদ্ধান্ত নেবে, যার প্রভাব তাদের সংস্থার উপর, তাদের বাণিজ্যের উপর পড়বে৷

বাজপেয়ী যখন প্রধানমন্ত্রী, তখন পোখরানে দ্বিতীয় পরমাণু বিস্ফোরণ করে ভারত৷ তারপর অ্যামেরিকা ও পশ্চিমা দেশগুলি ভারতের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল৷ তাতে ভারতের খুব একটা ক্ষতিবৃদ্ধি হয়নি৷ কিন্তু ক্ষতির মুখে পড়েছিল পশ্চিমা দেশগুলি৷ তারপর তারা সেই নিষেধাজ্ঞা চুপচাপ তুলে নেয়৷  সেই জায়গা থেকেও অনেকটা আগে চলে এসেছে ভারত৷

তাই বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে পশ্চিমা দেশগুলি যখন এরকম মন্তব্য করছে, তখন ভারতের বর্তমান প্রজন্ম অবাক হয়ে যাচ্ছে৷ কারণ, এখনকার ভারতে এই ঘটনা তো ঘটে না৷

 

ডয়চে ভেলের দিল্লি প্রতিনিধি গৌতম হোড়৷
গৌতম হোড় ডয়চে ভেলের দিল্লি প্রতিনিধি৷
স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য