মোদীর মন পাওয়ার চেষ্টা
১ আগস্ট ২০১৪তার আগে বৈঠক করেন ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী অরুণ জেটলি এবং ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভালের সঙ্গে৷
সংলাপের সময় জন কেরি এক স্পষ্ট বার্তা দেন৷ তিনি বলেন, বিপুল জনাদেশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বিজেপি সরকার ক্ষমতায় এসে অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং নিরাপত্তার যে অ্যাজেন্ডা হাতে নিয়েছেন, তাতে সর্বস্তরে ভারতের পাশে থাকবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র৷ অতীতের ভুল বোঝাবুঝি এবং দূরত্বকে পেছনে ফেলে আর্থিক সংস্কারের হাত ধরে নতুন করে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের সেতুবন্ধন রচনা করতে আগ্রহী যুক্তরাষ্ট্র৷
কেরির সফরসঙ্গী মার্কিন বাণিজ্যমন্ত্রী পেনি প্রিৎজকার মনে করেন, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার গতিশীল অর্থনীতির সঙ্গে বাংলাদেশের ভূমিকা এবং মিয়ানমারের গণতান্ত্রিকীকরণের গুরুত্ব ভুলে গেলে চলবে না৷ তবে এর কেন্দ্রভূমি ভারত৷
মোদী সরকারের অবাধ বিদেশি বিনিয়োগ এবং আর্থিক উন্নয়নের লক্ষ্যে ভারত কোন পথে এগিয়ে যেতে চাইছে তা নিয়ে সংলাপে আলোচনা হয়৷ তাতে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্কারের প্রসঙ্গ উঠে আসে৷ এবিষয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান হলো, বিশ্ব বাণিজ্য উদারকরণ প্রক্রিয়ার বিরোধিতা করা থেকে ভারতের বিরত থাকা উচিত৷ এটাই হবে ভারতের অবাধ ও উদার বাণিজ্য নীতির এক অগ্নিপরীক্ষা৷ এতে ভারতের লাভ বৈ লোকসান হবে না৷ তবে ভারতের বক্তব্য, ভরতুকি দিয়ে গরিবদের মধ্যে রেশনের খাদ্য বণ্টনের কারণে ভারতকে উপযুক্ত পরিমাণ খাদ্যশস্য মজুত করতে হয়৷ আর এটাতেই আপত্তি উন্নত দুনিয়ার৷ তাদের অভিযোগ, বেশি খাদ্যশস্য মজুত করলে ভাঙা হয় অবাধ বাণিজ্যের শর্ত, কারণ এর ফলে খাদ্যশস্যের দাম বেড়ে যায়৷
ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের সঙ্গে কৌশলগত সহযোগিতা বৈঠকে বিশ্ব সন্ত্রাস, ভারতের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা এবং গাজায় ইসরায়েলি হানায় ভারতের অবস্থান নিয়ে মত বিনিময় হয়৷
সাইবার নিরাপত্তাসহ ভারতের ওপর মার্কিন নজরদারির অভিযোগ সম্পর্কে জন কেরির দৃষ্টি আকর্ষণ করেন সুষমা স্বরাজ৷ ভারতের বিদেশি দূতাবাস এবং বিজেপি নেতা, মন্ত্রীদের বাসভবনে আড়িপাতার যন্ত্র বসানোর অভিযোগ নিয়ে সংসদে এবং বাইরে তুমুল বিতর্ক ওঠে৷ এটা কিছুতেই বরদাস্ত করা যায় না৷
ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের উন্নতি তথা এই অঞ্চলের সুস্থিতি বজায় রাখতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সর্বদাই সাহায্য করতে প্রস্তুত বলে জানান মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী৷
এর আগে ভারতের প্রতিরক্ষা ও অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলির সঙ্গে বৈঠক করেন কেরি৷ ভারতকে সমরাস্ত্র সরবরাহের আগ্রহের কথা জানানো হয় এবং সেক্ষেত্রে ভারতে প্রতিরক্ষা উপকরণ তৈরিতে মার্কিন বিনিয়োগের যথেষ্ট সুযোগ আছে৷ এই নিয়ে আরো বিস্তারিতভাবে কথা বলতে আগস্ট মাসের প্রথমদিকে ভারতে আসছেন মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী চাক হাগেল৷ তবে সমরাস্ত্র কেনা এবং প্রতিরক্ষা সহযোগিতা চূড়ান্ত করা হতে পারে মোদীর ওয়াশিংটন সফরে, সেপ্টেম্বর মাসের শেষ দিকে৷
শুক্রবার ১ আগস্ট কেরি সাক্ষাৎ করবেন প্রধানমন্ত্রী মোদীর সঙ্গে৷ ওবামা-মোদীর গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকের একটা খসড়া অ্যাজেন্ডা রাখবেন তাঁর সামনে৷
একদা ওবামার চোখে অচ্ছুৎ মোদীর মন পেতে মার্কিন প্রশাসন চেষ্টার কসুর করছে না৷ যুক্তরাষ্ট্রের যেমন দরকার ভারতের বিশাল বাজার, তেমনি আন্তর্জাতিক মঞ্চে কলকে পেতে মোদীরও দরকার যুক্তরাষ্ট্রকে৷ তবে কাছের এবং দূরের বন্ধু দেশগুলির স্বার্থে আঘাত না করে৷ জন কেরির সঙ্গে এসেছেন এক উচ্চস্তরীয় প্রতিনিধিদল৷ তাঁরা কথা বলেন, ভারতে বেসামরিক পরমাণু বাণিজ্য, মহাকাশ গবেষণা, প্রযুক্তি ক্ষেত্রের সংশ্লিষ্ট কর্তাব্যক্তিদের সঙ্গে৷