‘অভিনন্দনের ইঁদুর দৌড়’
১৮ মে ২০১৪বাংলাদেশের বিশ্লেষকরা বলছেন, মোদী কেন এমন করলেন তা ভাবার আগে আমাদের ‘অভিনন্দনের ইঁদুর দৌড়' বাদ দিয়ে সমতার ভিত্তিতে সম্পর্কের দিকে আগাতে হবে৷
সাবেক রাষ্ট্রদূত এবং কূটনীতিক আশফাকুর রহমান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘শুক্রবার বাংলাদেশের কোন কোন রাজনৈতিক দল মোদী ও বিজেপিকে অভিন্দন জানাতে যেভাবে প্রতিযোগিতা করেছে তা অনেকটা দৃষ্টিকটুই ঠেকেছে৷ অভিনন্দন জানানো শিষ্টাচার তবে তা শিষ্টাচারের অতিচারে পরিণত হয়েছে৷''
সখ্যতা গড়ার প্রতিযোগিতা
তিনি মনে করেন, ‘‘এটার নানা কারণ থাকতে পারে, কে আগে ভারতের নতুন সরকারের সঙ্গে সখ্যতা গড়বে বা কাছাকাছি যাবে হয়তো তার একটা প্রতিযোগিতা হতে পারে৷ তবে সেজন্য ভারতীয় দূতাবাসের সামনে গিয়ে গেট খোলার অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকার দরকার নেই৷ দেখে শুনে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমেই পাঠানো যেত৷''
আশফাকুর রহমান বলেন, ‘‘অভিনন্দনের ইঁদুর দৌড় নয়, প্রয়োজন সমতার ভিত্তিতে সম্পর্ক৷ সরকার, রাজনৈতিক দল সবাইকে একটি বিষয় মাথায় রাখতে হবে নিজের মেরুদণ্ড সোজা করতে না পারলে সম্মান আদায় কঠিন হয়ে পড়ে৷''
মোদীর বিজয়ী বক্তৃতা
মোদীর বিজয়ী বক্তৃতায় বাংলাদেশ না থাকার বিষয়টি আশফাকুর রহমান দুইভাবে দেখেন৷ তিনি বলেন, ‘‘হয় মোদী বাংলাদেশকে গুরুত্ব দেননি৷ অথবা তিনি নতুন করে কোনো বিতর্কিত মন্তব্য করতে চাননি৷ তবে তিনি যাই ভাবুন না কেন বাংলাদেশকে গুরুত্ব না দিয়ে উপায় নেই৷ তেমনি বাংলাদেশের কাছেও ভারত গুরুত্বপূর্ণ৷''
তিনি বলেন, ‘‘বাংলাদেশের জন্য প্রধানত ব্যবসা-বাণিজ্য এবং ভারতের নিরাপত্তা ইস্যু দুই দেশকে একে অপরের কাছে গুরুত্বপূর্ণ করেছে৷ আমরা চাইব ভারতের নতুন সরকার তিস্তার পানি, সীমানা নির্ধারণসহ বাংলাদেশের সঙ্গে আরো যেসব অমীমাংসিত বিষয় আছে তার সমাধানে উদ্যোগ নেবে৷ আর বাংলাদেশের সরকার এবং রাজনৈতিক দলগুলোকেও সেভাবেই এগোতে হবে৷''
‘সতর্ক থাকাই ভালো'
অন্যদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের শিক্ষক ড. শান্তনু মজুমদার ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘অভিনন্দন পাঠানোর যে তাড়া বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে দেখা গেছে তা একটু বাড়াবাড়িই হয়েছে৷ হয়তো কে আগে অভিনন্দন পাঠাতে পারেন তার একটা প্রতিযোগিতা ছিল৷''
এই শিক্ষক মনে করেন, ‘‘মোদী তাঁর বক্তৃতায় কেনো বাংলাদেশকে গুরুত্ব দিলেন না তা বুঝতে আরেকটু সময় অপেক্ষা করতে হবে৷ নির্বাচনের সময় বাংলাদেশ নিয়ে অনেক বিতর্কিত কথা বলে এখন নিরব থাকার কারণ বোঝা যাবে ভারতের নতুন সরকারের কার্যক্রম দেখে৷ তবে এধরনের সাম্প্রদায়িক দলের ব্যাপারে সতর্ক থাকাই ভালো৷''
ড. শান্তনু বলেন, ‘‘ভারতের নতুন সরকার নিয়ে অতি উত্সাহ বা বিমর্ষ হওয়া - কোনটারই প্রয়োজন নেই৷ প্রয়োজন দুই দেশের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্মানজনক সম্পর্ক৷ রাজনীতিবিদ এবং সরকারকে সেটাই বিবেচনা করতে হবে৷''