1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ভার্চুয়াল আদালত কতটা সফল হবে?

১১ মে ২০২০

করোনাকালে বাংলাদেশে বিচার ব্যবস্থা সচল রাখতে সোমবার থেকে অফিসিয়ালি ভার্চুয়াল আদালত চালুর কথা থাকলেও শুধু হাইকোর্ট ছাড়া আর কোথাও তা সম্ভব হয়নি৷

https://p.dw.com/p/3c1yy
ছবি: mycourt.judiciary.org

এটা শুরু করতে গিয়ে অভিজ্ঞতা ও গ্যাজেট-এর সংকট তৈরি হয়েছে বলে আইনজীবীরা জানিয়েছেন৷ আইনমন্ত্রী আনিসুল হক জানিয়েছেন, ‘‘মামলা জট কমাতে কমাতে এই উদ্যোগ নেয়া হয়েছে৷’’
করোনায় আদালত বন্ধ থাকায় আরো বেড়ে যাচ্ছে মামলা জট৷ তাই ভার্চুয়াল আদালতের মাধ্যমে কিছুটা হলেও মামলা জট কমানো এবং বিচার প্রার্থীদের বিচার পাইয়ে দেয়ার জন্য এই উদ্যোগ বলে জানান তিনি৷ তিনি বলেন,‘‘প্রাথমিকভাবে জামিন শুনানি এবং দেওয়ানি আদালত চালানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে৷ আর উচ্চ আদালতও ভার্চুয়াল বেঞ্চের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷ তবে ফৌজদারি বিচার চালাতে হলে সাক্ষ্য আইনের কিছু পরিবর্তন আনতে হবে৷ সেই আইন সংশোধনের উদ্যোগও আমরা নিচ্ছি৷’’
ভার্চুয়াল আদালত যেভাবে
ভার্চুয়াল আদালত পরিচালনার জন্য সুপ্রিম কোর্ট এরই মধ্যে ২১ দফা নির্দেশনা জারি করেছে৷ তিনটি বেঞ্চ ও আপিল বিভাগের চেম্বার জজ আদালতের বেঞ্চ গঠন করা হয়েছে৷
সুপ্রিম কোর্ট অধস্তন আদালতকে ভার্চুয়াল কোর্টের মাধ্যমে শুধুমাত্র জামিন শুনানির অনুমতি দিয়েছে৷
নির্দেশনায় বলা হয়েছে, ভার্চুয়াল আদালত ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে পরিচালিত হবে৷ প্রত্যেক আদালত একটি ই-মেইল আইডি এবং মোবাইল ফোন নাম্বারের মাধ্যমে চিহ্নিত হবে৷ আইনজীবীরাও একইভাবে চিহ্নিত হবেন৷ জামিন আবেদন এবং শুনানির জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র অনলাইনে দাখিল করতে হবে৷ এই শুনানি এবং আদালতের কাজে অ্যাপ ব্যবহার করা হবে৷ আদালতের কাজ পরিচালনা হবে আদালতের প্রচলিত অফিস সময়ের মধ্যে৷ আর ভার্চুয়াল উপস্থিতি শারীরিক উপস্থিতি হিসেবে গ্রহণ করা হবে৷

প্রশিক্ষণ ছাড়া এটা নিয়ে এগোনো কঠিন: অ্যাডভোকেট ইকবাল হোসেন

এই ভার্চুয়াল আদালতের জন্য সুপ্রিম কোর্টের একজন বিচারকের অধীনে ইউএনডিপি প্রশিক্ষণ, অনলাইন টিউটোরিয়াল ও সফটওয়্যারের কাজ করছে৷ এই কাজে যুক্ত ইউএনডিপির একজন কর্মকর্তা জানান, উচ্চ আদালত প্রাথমিকভাবে অধস্তন আদালতের ৮৩ জন বিচারককে মনোনীত করেছে৷ তাদের প্রশিক্ষণ এরই মধ্যে শেষ হয়েছে৷ এই প্রশিক্ষণে অ্যাটর্নি জেনারেল অফিসকেও সংযুক্ত করা হয়েছে৷ তারা বার কাউন্সিলের মাধ্যমে প্রশিক্ষণের আয়োজন করবে৷ ধারাবাহিকভাবে বিচারকদের এই প্রশিক্ষণ চলবে৷ আর জেলার আইনজীবীদের বারের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ দেয়া হবে বলে জানান তিনি৷
এই পুরো কাজটিই হচ্ছে করেনার কারণে অনলাইনে৷ এরই মধ্যে প্রয়োজনীয় ভিডিও টিউটেরিয়াল ও ম্যানুয়াল তৈরি করা হয়েছে৷ বিচার সংশ্লিষ্ট সবার জন্য এটা অনলাইনে আপ করা হচ্ছে৷ ওই কর্মকর্তা জানান, বিচারকাজে আমরা মাইক্রোফসফট-এর মিটিং অ্যাপ টিমস্ ব্যবহারের সুপারিশ করছি৷

প্রথম দিনের অভিজ্ঞতা
রংপুর জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট আব্দুল মালেক জানান, ‘‘প্রথম দিনে আমাদের এখানে ভার্চুয়াল আদালত শুরু হয়নি৷ আদালত থেকে আমাদের শুধু জানানো হয়েছে৷ আমরা সুপ্রিম কোর্টের এ সংক্রান্ত নির্দেশনা পড়ে বোঝার চেষ্টা করছি৷ তবে এটা কিভাবে হবে তা আমরা এখনো বুঝে উঠতে পারছি না৷’’
তিনি বলেন, ‘‘আমার একটি স্মার্ট ফোন আছে৷ কিন্তু এটা দিয়ে ফোন করা আর ফোন ধরা ছাড়া আমি আর কিছুই করতে পারি না৷ এখন কি অ্যাপ লাগবে, কিভাবে ডাউনলোড করবো তা কিছুই জানি না৷ এর জন্য আসলে প্রশিক্ষণ দরকার হবে৷এর মাধ্যমে জমিন শুনানি হয়তো হবে, কিন্তু বিচার কাজ কিভাবে হবে! উন্নত বিশ্বে হয় বলে শুনেছি৷ কিন্তু আমাদের তো সেই স্থাপনা, ল্যাপটপ, প্রশিক্ষণ কিছুই নাই৷’’

ঢাকা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট ইকবাল হোসেনও জানান সোমবার ঢাকায় ভার্চুয়াল আদালত শুরু সম্ভব হয়নি৷ তবে চারজন বিচারকের ইমেইল এবং মোবাইল ফোন নাম্বার জানিয়ে দেয়া হয়েছে৷ তারা মঙ্গলবার থেকে জামিন শুনানি করবেন৷

তবে তিনি মনে করেন, ‘‘প্রশিক্ষণ ছাড়া এটা নিয়ে এগোনো কঠিন৷ কারণ ঢাকা আইনজীবী সমিতিতে ২৩ হাজার আইনজীবী আছেন৷ আদালতের সংখ্যা অনেক৷ তার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট আরো অনেক কর্মকর্তা -কর্মচারী আছেন৷ তাদের কিভাবে ভার্চুয়াল কোর্টে সংযুক্ত করা হবে আমি জানি না৷ বড় জোর জামিন আর দেওয়ানি আদালতের ইনজাংশন-এর কাজ হতে পারে৷’’

সুপ্রিম কোর্ট
আপিল বিভাগের চেম্বার জজ বিচারপতি মো. নূরুজ্জামান আগামী ১৪ ও ২০ মে সকাল সাড়ে ১১টা থেকে ভার্চুয়াল উপস্থিতির মাধ্যমের শুনানি করবেন৷
হাইকোর্ট বিভাগে বিচারপতি ওবায়দুল হাসান অতীব জরুরি সব ধরনের রিট ও দেওয়ানি মোশন এবং এ সংক্রান্ত আবেদন নেবেন৷ অতীব জরুরি সব ধরনের ফৌজদারি মোশন এবং এসংক্রান্ত আবেদনপত্র নেবেন বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন৷ বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকার সাকসেশন আইন, অ্যাডমিরালিটি কোর্ট আইন, ব্যাংক কোম্পানি আইনসসহ কয়েকটি আইনের অধীনে আবেদনপত্র, আপিল শুনানি করবেন৷

সাক্ষ্যগ্রহণসহ পুরো বিচারকাজ আপাতত এই ভার্চুয়াল আদালতে সম্ভব নয়: আইনমন্ত্রী

অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম জানান, ‘‘আজ (সোমবার) ই-মেইলে আইনজীবীরা তাদের আবেদন জমা দিয়েছেন৷ এখন আদালত যেভাবে তারিখ দেবেন সেভাবে ভার্চুয়াল উপস্থিতির মাধ্যমে শুনানি ও আদেশ হবে৷ শুনানির জন্য ভিডিও কনফারেন্স অ্যাপ ব্যবহার করা হচ্ছে৷’’
তিনি মনে করেন, ‘‘বিচার ব্যবস্থা যে করোনার মাধ্যমেও সচল আছে সেটা প্রমাণ করার জন্যই এই ব্যবস্থা৷ তবে এর মাধ্যমে খুব বেশি কিছু করা সম্ভব নয়৷ অনেক তাৎক্ষণিক ডকুমেন্ট বা প্রমাণ ভার্চুয়াল আদালতে উপস্থাপন সম্ভব হবে না৷ এর মাধ্যমে পুরো বিচার প্রক্রিয়া সম্ভব নয়৷’’
তিনি বলেন, কোনো আইনজীবী প্রশিক্ষণ নিতে চাইলে ইউএনডিপির সাথে যোগাযোগ করে নিতে পারেন৷

সাক্ষ্য আইন সংশোধন হচ্ছে
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক জানান, বিচার বিভাগকে ডিজিটাইজ করার জন্য আগে থেকেই প্রধানমন্ত্রীর পরিকল্পনা ছিলো৷ ই-জুডিশিয়ারি করার জন্য একটি পরিকল্পনা একনেকে আছে৷ একনেকে পাস হলেই এটার কাজ হবে৷ আগেই পরিকল্পনার কারণে কেরানীগঞ্জে যে নতুন জেলখানা তৈরি করা হয়েছে সেখানে ভার্চুয়াল কোর্টের স্থাপনা রাখা হয়েছে৷ আর এই করোনা পরিস্থিতির কারণে সেটা বাস্তবায়নের একটা সুযোগ হয়েছে৷ আমরা ভার্চুয়াল আদালত আইনটি তাই করে ফেলেছি৷ ফলে জরুরি জামিন ও দেওয়ানি আদালতের জরুরি কিছু কাজ এই ভার্চুয়াল আদালতে করা যাবে৷
তিনি বলেন, ‘‘সাক্ষ্যগ্রহণসহ পুরো বিচারকাজ আপাতত এই ভার্চুয়াল আদালতে সম্ভব নয়৷ সেটা করতে হলে সাক্ষ্য আইন সংশোধন করতে হবে৷আরা সেটা তাড়াহুড়া করে করতে গেলে ত্রুটি থাকতে পারে৷ তাই আগামী বাজেট অধিবেশনে এই সংশোধনী আনা হবে৷’’

গত বছরের মে মাসের ছবিঘরটি দেখুন...