‘ভালো ছবি বানাতে সৎ হতে হবে'
২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব ফিল্ম ক্রিটিকস ফিপ্রেস্কি-র সদস্য হিসেবে ৬৮তম বার্লিন ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের ক্রিটিক জুরি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন আহমেদ মুজতবা জামাল৷
ডয়চে ভেলে: বার্লিনালেতে এ নিয়ে কতবার এলেন? কেমন লেগেছে এবারের উৎসব?
আহমেদ মুজতবা জামাল: এ নিয়ে আমার পাঁচবার আসা হলো৷ প্রথমবার এসেছিলাম ১৯৯৭ সালে৷ ১৯৯৮ তে ক্রিটিক্স জুরি হয়ে এসেছিলাম৷ এবারও ক্রিটিক্স জুরি হিসেবে এসেছি৷
এ বছর কী ধরনের চলচ্চিত্র এসেছে এবং কোনগুলো আপনার কাছে বেশি ভালো লেগেছে?
ফিপ্রেস্কিতে জুরি হওয়ার সুবাদে ফোরামের অনেক ছবি দেখার সুযোগ হয়৷ এখানে বড় বাজেটের বা বাণিজ্যিক কোনো ছবি থাকে না, তাই তরুণ প্রতিভাবান অনেক পরিচালক এখানে তাদের মুভিগুলো দেখানোর সুযোগ পান, যেগুলোর বেশ কয়েকটি আমাকে অভিভূত করেছে৷ তাদের চিন্তা ভাবনায় নতুনত্ব আছে৷ এরা ভবিষ্যতে বড় পরিচালক হবে বলে মনে করি আমি৷ ফোরাম থেকে অ্যাওয়ার্ড পাওয়া একটি ছবির পরিচালক মুভিটি বানানোর পরে আত্মহত্যা করেন, তার বয়স হয়েছিল মাত্র ২৯ বছর৷ তার ছবিটি অসাধারণ ছিল৷
আপনারা যাঁরা বিচারক হিসেবে থাকেন, তাঁরা পুরস্কার দেয়ার ক্ষেত্রে সাধারণত কোন বিষয়গুলোকে প্রাধান্য দেন?
এক এক ফেস্টিভ্যালের এক এক ক্যারেক্টার থাকে৷ ১৯৯৮ সালে আমি যখন প্রথম ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে আসি, তখন সেন্ট্রাল দ্য ব্রাজিল, ওয়াল্টার সিলেসের একটা মুভি সেবার গোল্ডেন বেয়ার পায় বার্লিনালেতে৷ আমি যে বিভাগের জুরি ছিলাম, সেখানে বললাম এই মুভিটাকে পুরস্কার দিতেই হবে৷ ডিরেক্টর ম্যালকম ছিলেন আমাদের জুরি চেয়ারম্যান৷ তিনি বললেন, এই ছবি বার্লিন বেয়ারসহ অনেক পুরস্কার পাবে, তাই অন্যরকম একটা ছবি নির্বাচন করো, যেটা তৃতীয় বিশ্বের তরুণ কোনো প্রতিভাবান নির্মাতার, যার হয়তো প্রথম ছবি, তাকে প্রমোট করো৷ তখন আমরা জাপানের একটা ছবিকে অ্যাওয়ার্ড দেই৷ ছবি নির্বাচনের ক্ষেত্রে স্ক্রিপ্ট, লাইটিং, অভিনয়, সিনেমাটোগ্রাফি, ছবি বানানোর উদ্দেশ্য – নানা বিষয় নিয়ে জুরিরা ঘন্টার পর ঘন্টা আলোচনা করে ঠিক করি কাকে দেয়া উচিত এবং কেন৷
বার্লিন ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের ভিন্নতাটা কোথায়?
কান, বার্লিন, ভেনিস – এগুলোর একটা আলাদা চরিত্র দাঁড়িয়ে গেছে৷ এদের জায়গা কেউ নিতে পারবে না৷ এছাড়া আছে টরন্টো ফেস্টিভ্যাল৷ বার্লিনালের বিশেষ সুনাম আছে ফোরামের জন্য৷ উলরিক গ্রেগর এর প্রতিষ্ঠাতা৷
বার্লিনালের প্যানারোমাতে ট্রান্সজেন্ডারদের উপর মুভিগুলো প্রাধান্য দেয়া হয়৷ তবে একেক ফেস্টিভ্যালে এর একেকটা ধরন থাকে৷ বার্লিনালেরও ভিন্নতা রয়েছে সেই জায়গায়৷ এটার কোনো বৈশ্বিক ফর্ম নাই৷ ঢাকা ফেস্টিভ্যালে যেমন আর্ট হাউস ফিল্মগুলোকে প্রাধান্য দেয়া হয়৷
এবারের উৎসব কেমন দেখলেন?
আমি বার্লিনে এলে অবাক হয়ে যাই৷ কারণ, বাংলাদেশে ফিল্ম ফেস্টিভ্যালগুলোতে তেমন লোক হয় না৷ বার্লিনে দর্শক দেখে আমি রীতিমতো স্তম্ভিত৷ এত দর্শক দেখে আমি আনন্দিত যে, ফিল্মের জন্য এখনো মানুষ আছে৷ তারা ছবি দেখছে৷ অনেক বড় বড় ফেস্টিভ্যালে গিয়ে দেখেছি দর্শক নাই, অথচ বার্লিনে প্রচুর দর্শক, এটা বার্লিনের একটা সম্পদ৷
বাংলাদেশে কি ধরনের চলচ্চিত্র নির্মাণ হচ্ছে? বর্তমান অবস্থাটা কী?
বাংলাদেশে এখন ২০-২৫ জন ফিল্ম মেকার আছে, যারা আগামী ৫-১০ বছর বিশ্ব দাপিয়ে বেড়াবে৷ বাংলাদেশে সৌখিন ফিল্মমেকার ৫০ হাজার৷ এর মধ্যে ৫ হাজার প্রফেশনাল৷ এফডিসির অবস্থা খুব শোচনীয়৷ তাই ডিজিটালি যারা ছবি নির্মাণ করছে, তারা বেশ ভালোভাবেই করছে৷ ঢাকায় প্রত্যেকটা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিল্ম নিয়ে বিভাগ হয়েছে, যেখানে এ বিষয়ে পড়ানো হয়৷ আমি মনে করি, বাংলাদেশে ফিল্মের ভবিষ্যৎ খুবই ভালো৷
বাংলাদেশের তরুণ নির্মাতাদের জন্য আপনার পরামর্শ কী?
বাংলাদেশে তরুণদের জন্য পরামর্শ হলো, সৎ ও ভালো ভালো ছবি বানান, কোনো জালিয়াতি না করে সোজা রাস্তায় হাঁটলে কেউ আপনাকে আটকে রাখতে পারবে না, বিশ্ব আপনাকে চিনবে৷ বেশিরভাগ ক্ষেত্রে যেটা হয়, একটা ছবি ভালো হলে নির্মাতাদের এত অহংকার হয় যে, এরপরের ছবিগুলো ভালো হয় না৷ ঢাকায় অন্তত ১০ জন নির্মাতা আছেন, যাঁরা বলেন, তাঁদের চেয়ে ভালো নির্মাতা এদেশে নেই৷ যারা ভালো ছবি বানাতে চায়, তাদের জন্য পৃথিবী খোলা আছে৷
পুরো সাক্ষাৎকারটি দেখতে ক্লিক করুন এখানে৷
(আহমেদ মুজতবা জামাল, রেইনবো ফিল্ম সোসাইটির প্রধান৷ এই আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র সমালোচক ১৯৯৪ সাল থেকে ফিপ্রেস্কির সঙ্গে যুক্ত৷ এ পর্যন্ত অংশ নিয়েছেন কান চলচ্চিত্র উৎসবসহ বিশ্বখ্যাত প্রায় ২৫টি উৎসবে৷)