ভাষা আর মানবতার টানে ফিলিস্তিনি-ইসরায়েলি কাছাকাছি
জেরুসালেম আর সংঘাতের যেন অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক৷ সেই শহরেই ২০ জন তরুণ-তরুণী নিয়মিত বসেন মুখোমুখি৷ আরবি আর হিব্রু ভাষার জ্ঞান বিনিময় করে সমৃদ্ধ হন, মানবতার বাণীও ছড়ান সংঘাতময় সমাজে৷ ছবিঘরে বিস্তারিত...
সবার কল্যাণে তারুণ্য
জেরুসালেমের পূর্বাঞ্চল ১৯৬৭ সাল থেকে ইসরায়েলের নিয়ন্ত্রণে৷ ইসরায়েল যুদ্ধ করে ভূখণ্ডের ‘নিয়ন্ত্রণ’ পেলেও গত ৫৪ বছরেও সেখানে শান্তি আসেনি৷ কিন্তু এই প্রজন্মের তরুণদের একটা অংশ চায় শান্তি৷ চায় মানুষে মানুষে মিলন, চায় জীবনযুদ্ধে অগ্রগতি, সাফল্য৷ এমন ভাবনা থেকেই উনিশ শতকে গড়ে তোলা এক ভবনে একসঙ্গে আরবি আর হিব্রু ভাষাচর্চা করছেন ২০ জন ফিলিস্তিনি ও ইসরায়েলি তরুণ-তরুণী৷
দুটি মনের ব্যতিক্রমী ভাবনা
২০১৯ সাল থেকে প্রতি সপ্তাহান্তে একবার অন্তত ফিলিস্তিনিরা ইসরায়েলিদের ভালো করে আরবি শেখাতে আর ইসরায়েলিরা ফিলিস্তিনিদের হিব্রু শেখাতে বসেন এক ছাদের নীচে৷ এমন উদ্যোগের কথা প্রথম মাথায় এসেছিল হিব্রু শিক্ষিকা মায়া গিজ এবং ফিলিস্তিনি স্পোর্টস ইন্সট্রাক্টর সাহার মুখেমার-এর মাথায়৷ তাদের উদ্যোগেই চলছে অভিনব উপায়ে ভাষা-জ্ঞান আদান-প্রদানের ছোট অথচ দুর্দান্ত এই আয়োজন৷
ভাষা দিয়ে মনের সীমানা অতিক্রম
মায়া গিজ মনে করেন, দু’জন মানুষকে ‘মনের সীমানা অতিক্রম’ করতে ভাষাচর্চা যতটা সহায়তা করে তার কোনো তুলনা হয় না৷ তবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যেভাবে ভাষা শেখানো হয়, জেরুসালেমের ওই ভবনটিতে ভাষার বিনিময় হয় ‘স্পিড ডেটিং’-এর আদলে৷ অর্থাৎ, দু’জন মুখোমুখি বসে কথা বলেন৷ প্রতি ২০ মিনিট অন্তর বেজে ওঠে বাঁশি৷ বাঁশি বাজলেই নতুন কারো সঙ্গে বসে আবার শুরু করতে হয় আরবি আর হিব্রু ভাষায় বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা৷
দুই পক্ষের সমান ‘লাভ’
জেরুসালেমে ফিলিস্তিনিদের ইসায়েলি প্রশাসনের সঙ্গে বলতে হয় হিব্রুতে৷ অন্যদিকে হিব্রুভাষী ইসরায়েলিদের ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে কথা বলতে হয় আরবি ভাষায়৷ অথচ স্থানীয় স্কুলগুলোতে ফিলিস্তিনিরা শুধু হিব্রু ভাষার প্রাথমিক শিক্ষাটুকু পান আর ইসরায়েলিরা পান ব্যাকরণগতভাবে একেবারে শুদ্ধ অথচ সাধারণ মানুষ বলেন না এমন আরবি শেখার সুযোগ৷ ফলে ‘স্পিড ডেটিং’-এর আদলে দ্রুত ভাষা শেখার পদ্ধতি সবারই খুব কাজে আসছে৷
যে ভাষায় শান্তি
জেরুসালেমের ২০ জন তরুণ-তরুণী মনে করেন, অস্ত্রের ভাষায় কথা বললে কোনো সমাজেই শান্তি আসে না, তাদের জন্মভূমিতেও আসবে না৷ তাদের মতে, শান্তি আনতে পারে কেবল মতবিনিময় আর ভাষা ছাড়া তো মতবিনিময় প্রায় অসম্ভব! জেরুসালেমে সংঘাতময় পরিবেশে জন্ম নেয়া এলি বেনিতা তাই অকপটে বললেন, ‘‘ আমরা যে এলাকায় বাস করি সেখানকার নগরজীবনে শুধু এটাই (ভাষা শিখে মতবিনিময়) শান্তি আনার একমাত্র উপায়৷’’