1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘ভিক্ষাবৃত্তি অপরাধ নয়'

অনিল চট্টোপাধ্যায় নতুনদিল্লি
১৪ আগস্ট ২০১৮

দিল্লি হাইকোর্ট এক রায়ে বলেছে, ভিক্ষাবৃত্তি অপরাধ নয়৷ গরিব ও নিরাশ্রয় মানুষদের ভয় দেখানো বা তাঁদের আটক রাখার বিরুদ্ধে যাঁরা সরব হয়েছিলেন, এটা তাঁদের জয় বলেই মনে করা হচ্ছে৷

https://p.dw.com/p/339Ua
Bangladesch Dhaka Bettler
ছবি: Farjana K. Godhuly/AFP/Getty Images

শখ করে কেউ রাস্তায় রাস্তায় ভিক্ষা করে বেড়ায় না৷ সহায়-সম্বলহীন অতি গরিবরা ভিক্ষা করতে বাধ্য হয় পেটের দায়ে৷ আসল কারণ দারিদ্র্য৷ গত বুধবার দিল্লি হাইকোর্টে অস্থায়ী প্রধান বিচারপতি গীতা মিত্তল এবং বিচারপতি হরি শংকর ২৩ পাতার রায়ে বলেছেন, ভিক্ষাবৃত্তিকে ফৌজদারি অপরাধের তকমা দেওয়া অন্যায়৷ কেন তাঁরা ভিক্ষা করতে বাধ্য হয়, তার আসল কারণ দূর না করে সবথেকে গরিব মানুষগুলোকে হাজতে আটকে রাখলে বা হয়রানি করলে, সেটা হবে তাঁদের মৌলিক মানবাধিকার এবং সাংবিধানিক অধিকার লংঘন করা৷  যদি ভিক্ষাবৃত্তি নির্মূল করতে হয়, তাহলে তা কৃত্রিমভাবে করা যায় না৷ করতে গেলে সেটা হবে সমতা ও জীবনধারণ অধিকারের সাংবিধানিক গ্যারান্টির খেলাপ৷ কেন তাঁরা রুজি-রোজগার, শিক্ষা বা সামাজিক নিরাপত্তা থেকে বঞ্চিত, সেটা দেখতে হবে৷ তার দায়িত্ব বর্তায় সরকারর উপর৷ জেলে বা হোমে আটকে রাখাটা সমাধান নয়৷ যাঁদের আটক রাখা হয়েছে অবিলম্বে তাঁদের মুক্তির আদেশ দিয়েছেন আদালত৷

‘সরকার ইচ্ছে করলে এইসব সমাজবিরোধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতেই পারে’

তবে আদালত ভিক্ষাবৃত্তিকে পুরোপুরি অপরাধমুক্ত বলেননি৷ সংগঠিতভাবে যেসব শিশু পাচারকারী বাচ্চাদের দিয়ে ভিক্ষা করায় এবং দিনের শেষে সেইসব টাকা-পয়সা আত্মসাত করে, তাঁদের অপরাধ ক্ষমার অযোগ্য৷ এমনকি, মানুষের সহানুভূতি আদায় করতে ড্রাগ খাইয়ে শিশুদের অঙ্গ বিকৃতি পর্যন্ত করা হয়৷ এইসব সমাজবিরোধীদের জেলে পোরা আগে দরকার৷ এরই প্রেক্ষিতে ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ সোশ্যাল স্টাডিজের সমাজজ্ঞানী দেবদাস ভট্টাচার্য ডয়চে ভেলেকে বললেন, তাঁর মতে, সরকার জানে কারা বাচ্চাদের এভাবে শোষণ করে৷ সরকার বা পুলিশ জানে না, এটা বিশ্বাস করা যায় না৷ সরকার ইচ্ছে করলে এইসব সমাজবিরোধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতেই পারে৷ আসল কথা, এই বিষয়ে আমাদের দেশে কোনো বড় গণআন্দোলন হয়নি৷ হ সরকারের টনক নড়তো৷ বাচ্চাগুলোকে হোমে আটকে রাখলে ওদের ভবিষ্যৎ কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে?

শিশু অধিকার নিয়ে যেসব এনজিও কাজ করছে. তাদের সঙ্গে সরকারের চিন্তা বিনিময় হ ভালো হয়৷ যেমন, সংখ্যালঘু কল্যাণ নিয়ে সাচার কমিশন গঠন করা হয়৷ তা নিয়ে অবশ্য অনেক হৈচৈ হয়৷ সেইরকম শিশু কল্যাণ এবং অধিকার নিয়ে কমিশন গঠন করা যেতে পারে৷ তাতে যুক্ত করা যেতে পারে আন্তর্জাতিক শিশু অধিকার সংগঠনগুলিকে৷ এইসব করতে পারলে, সেটাই হবে সঠিক পদক্ষেপ৷ হঠাৎ হানা দিয়ে পুলিশ কিছু বাচ্চাকে ধরে নিয়ে গেল, সেটা কাজের কথা নয়৷ কমিশন গঠন করে তাদের সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে পারলেই কাজ হবে৷ তবে দিল্লি আদালত ভিক্ষাবৃত্তি অপরাধ নয় বলে যে রায় দিয়েছে, তা স্বাগতযোগ্য৷ তবে ব্যাপার শুধুই দারিদ্র্য, এমনটা মনে করেন না বলে ডয়চে ভেলেকে জানালেন সমাজ বিজ্ঞানি দেবদাস ভট্টাচার্য৷

ইন্দোনেশিয়ার ‘রবিন হুড’

 ভারতে ভিক্ষাবৃত্তি এবং চরম দারিদ্র্য নিবারক কোনো কেন্দ্রীয় আইন নেই৷ আছে মুম্বাই ভিক্ষাবৃত্তি নিবারক আইন ১৯৫৯৷ এই আইনে তথাকথিত ভিখারিদের তিন থেকে দশ বছর পর্যন্ত বেগার-হোমে আটক রাখা যায়৷ ভারতের ২০টি রাজ্য এবং দুটি কেন্দ্র শাসিত রাজ্য এই আইনই মেনে চলছে৷ তার মধ্যে আছে রাজধানী দিল্লিও৷ ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুসারে, ৪৬ হাজার ৭২৪ জন নিরাশ্রয় পরিবার থাকে দিল্লিতে৷ মানবাধিকার সংস্থাগুলির হিসেবে প্রকৃত সংখ্যাটা হবে এর তিন গুণ বেশি৷ হোমে জায়গা না থাকায় হাজার হাজার নিরাশ্রয় পরিবার থাকে ফুটপাতে, ফ্লাইওভারের নীচে কিংবা গাছতলায়৷ ফলে পুলিশের হাতে নির্যাতনের সহজ শিকার হয়৷ ‘‘এ আইনে ভিক্ষুকদের সংজ্ঞা ব্যাপক. পুলিশ যে-কোনো গরিব বা গৃহহীন কিংবা যাযাবর সম্প্রদায়ের কিংবা বহিরাগত দিনমজুর বা রাস্তাঘাটে ভোজবাজি বা ‘মাদারি কা খেল' দেখিয়ে বেড়ায়, তাঁদেরকে যখন তখন আটক করতে পারে৷ ভিক্ষাবৃত্তি নিবারক চলতি আইন হতদরিদ্র ও গৃহহীনদের ওপর চরম নির্যাতনের এক হাতিয়ার হয়ে উঠেছিল৷ কাজেই দিল্লি আদালতের এই রায়ে আমরা সন্তষ্ট,'' বলেছেন আন্দোলনকারিদের অন্যতম হর্ষ মান্ডে এবং কর্নিকা শাহনি. এদের দায়ের করা দুটি জনস্বার্থ মামলায় আদালত এই রায় দেন.

ভিক্ষাদান রীতি কম-বেশি সব দেশেই আছে৷ হিন্দু, খ্রিষ্টান, জৈন, বৌদ্ধ সব ধর্মেই আছে৷ ভিক্ষাদান ভারতে বহুকাল ধরে চলে আসছে৷ সামাজিক কাঠামোর অঙ্গ হয়ে গেছে৷ ধর্মস্থানে ভিক্ষাদান পূণ্যের কাজ বলে মনে করা হয়৷ হিন্দুধর্মে বলা হয়, ভিক্ষা, ইসলামে বলা হয় জাকাত, খৃশ্চান ধর্মে চ্যারিটি৷ ঈশ্বরের নামে দান গ্রহণ ভিক্ষার মধ্যে পড়ে না, এমনটাই অনেক সাধু সন্ন্যাসী বিশ্বাস করেন৷ স্বয়ং গৌতম বুদ্ধ ভিক্ষা নিয়েই ক্ষুধা নিবৃত্তি করতেন, এমনটাই বলা হয়৷