ভিনগ্রহে প্রাণের সন্ধানে নতুন অভিযান
৯ মে ২০১০অন্য গ্রহে প্রাণ আছে কি না, এই প্রশ্নের জবাব পেতে কে না চায়? আমাদেরই জীবদ্দশায় এই প্রশ্নের জবাব পেলে কেমন লাগবে? কিন্তু অন্যদিকে আবার বিপদেরও আশঙ্কা করছে কেউ কেউ৷ যেমন কিছুদিন আগেই বিশ্ববরেণ্য বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং সাবধান করে দিয়ে বলেছেন, ভিনগ্রহে মানুষের মতো মেধাসম্পন্ন প্রাণীর অস্তিত্ব থাকলেও তাদের সঙ্গে যোগাযোগ না করাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ৷
মার্কিন উদ্যোগ
এই সব পরস্পরবিরোধি মতামত সত্ত্বেও অন্য গ্রহে প্রাণ খোঁজার প্রচেষ্টা কিন্তু থেমে নেই৷ মার্কিন মহাকাশ সংস্থা নাসা অদূর ভবিষ্যতে মহাবিশ্বে প্রাণের খোঁজে ২৮টি অভিযান শুরু করতে চলেছে৷ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক স্টিভ স্কুইর্স সম্প্রতি এবিষয়ে একটা সার্বিক ধারণা দিয়েছেন৷ তাঁর মতে, ‘অ্যাস্ট্রো-বায়োলজি' এবং প্রাণের সন্ধানের কাজকেই ভবিষ্যতের মহাকাশ কর্মসূচির ক্ষেত্রে প্রধান গুরুত্ব দেওয়া উচিত৷ এমনই কয়েকটি পরিকল্পিত অভিযানের উদাহরণ তুলে ধরেছেন তিনি৷
মঙ্গলগ্রহ
অতীতের মত এখনো মঙ্গলগ্রহকে ঘিরে আগ্রহ কাটে নি৷ তাই সেখান থেকে মাটির নমুনা পৃথিবীতে নিয়ে এসে সেই গ্রহে প্রাণের সম্ভাবনার বিষয়ে পরীক্ষা চালানো হবে৷ অতীতে মঙ্গলগ্রহে প্রাণ ছিল কি না, আজ আছে কি না অথবা ভবিষ্যতে এমন সম্ভাবনা দেখা দিতে পারে কি না, তা জানার চেষ্টা করা হবে৷ তবে শুধু মাটি নয়, মঙ্গলগ্রহের বায়ুমণ্ডলে মিথেন গ্যাস কোথা থেকে এল, সেই মিথেন অর্গ্যানিক বা জৈব কি না – সেই সব প্রশ্নেরও উত্তর খোঁজার চেষ্টা চলছে৷
বৃহস্পতি ও শনিগ্রহ
আমাদের সৌরজগতে অন্য যেখানে প্রাণের সম্ভাবনা থাকতে পারে বলে বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, সেটি হল বৃহস্পতির উপগ্রহ ইউরোপা৷ বরফের স্তরে ঢাকা ঐ চাঁদের গভীরে জলের মহাসাগর থাকতে পারে, এমন সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না৷ সেখানে এমন এক মহাকাশযান পাঠানোর পরিকল্পনা রয়েছে, যার মধ্য থেকে রোবোট বেরিয়ে রাডার'এর মাধ্যমে বরফের স্তরের নিচের অবস্থা সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করতে পারবে৷ সেই রোবোট যদি সত্যি এমন মহাসাগর খুঁজে পায়, তখন পরের কাজ হবে ইউরোপা'র বুকে এমন সব জায়গা চিহ্নিত করা, যেখানে গেলে এই মহাসাগর সম্পর্কে আরও তথ্য জানা যাবে৷ শনিগ্রহের আরেক উপগ্রহ টাইটান'এর দিকেও বিজ্ঞানীদের নজর রয়েছে৷ তাঁরা জানেন, ঐ উপগ্রহে অনেক জৈবিক উপাদান রয়েছে৷ তাই এবার সেখানে বেশ বিস্তারিত এক অভিযান চালানো প্রয়োজন বলে তাঁরা মনে করেন৷ এমন প্রকল্পের আওতায় টাইটান'এর কক্ষপথ প্রদক্ষিণ করার জন্য একটি যানের প্রয়োজন৷ সেইসঙ্গে বায়ুমণ্ডলে বেলুন পাঠাতে হবে৷ আরেকটি যান টাইটান'এর বুকে তরল মিথেনের কোনো হ্রদের উপর নামবে৷
ধূমকেতু
প্রাণের চিহ্নের সন্ধানের এই বিশাল উদ্যোগের আওতা থেকে ধূমকেতুকেও বাদ দেওয়া হচ্ছে না৷ কারণ যেকোনো ধূমকেতুর মধ্যেই উল্লেখযোগ্য পরিমাণ জৈবিক উপাদান রয়েছে বলে মনে করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে৷ বাহক হিসেবে তাই ধূমকেতুর যথেষ্ট গুরুত্ব রয়েছে৷ এমনকি পৃথিবীর বুকে প্রাণের আবির্ভাবের পেছনেও ধূমকেতুর অবদান ছিল বলে মনে করা হয়৷ তাই মহাকাশযান পাঠিয়ে কোনো ধূমকেতুর মাথা থেকে নমুনা সংগ্রহ করে গবেষণার জন্য তা আবার পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে৷
পৃথিবীর বুকে টেলিস্কোপ
মহাকাশে অভিযানের পাশাপাশি পৃথিবীর বুকে বসেই মহাবিশ্বে প্রাণের অনুসন্ধানের এক বিশাল প্রকল্প শুরু করতে চলেছে ইউরোপীয় মহাকাশ সংস্থা৷ চিলির আতাকামা মরুভূমিতে গড়ে তোলা হচ্ছে বিশ্বের বৃহত্তম টেলিস্কোপ৷ এই প্রকল্পের মূল লক্ষ্য গ্রহের উৎপত্তি ও প্রাণের সম্ভাবনা সম্পর্কে আরও তথ্য সংগ্রহ করা৷ প্রায় ৪২ মিটার ব্যাসের এই যন্ত্রচক্ষু মহাকাশের গভীরের রহস্য উন্মোচনের চেষ্টা করবে৷ ৩,০৬০ মিটার উচ্চ এক পাহাড়ের চূড়ায় বসানো হচ্ছে এই বিশাল টেলিস্কোপ৷ পৃথিবীর বুকে এত শুষ্ক মরু অঞ্চল আর নেই৷ তাই মহাকাশে নজরদারি চালানোর পথে বায়ুমণ্ডলের বাষ্প সেখানে তেমন একটা বিঘ্ন ঘটাতে পারবে না৷ আপাতত শুধু কাগজে-কলমে প্রস্তুতি চলছে৷ ২০১১ সালে নির্মাণ কাজ শুরু হবে৷ সবকিছু পরিকল্পনা অনুযায়ী চললে ২০১৮ সালে দানবীয় এই টেলিস্কোপ কাজ শুরু করে দিতে পারবে৷ এর নাম রাখা হয়েছে ‘ইউরোপিয়ান এক্সট্রিমলি লার্জ টেলিস্কোপ' – সংক্ষেপে ই-এএলটি৷
বিজ্ঞানীরা ইতিমধ্যেই প্রস্তাবিত এই টেলিস্কোপকে প্রায় ৪০০ বছর আগে গ্যালিলিও'র টেলিস্কোপের সঙ্গে তুলনা করছেন৷ তাঁদের মতে, ৪ শতাব্দী আগে গ্যালিলিও যেভাবে বিশ্বব্রহ্মাণ্ড সম্পর্কে ধারণা আমূল বদলে দিয়েছিলেন, চিলির এই টেলিস্কোপের মাধ্যমেও তেমনটা ঘটতে পারে৷
অতএব আর একটু ধৈর্য ধরতে হবে৷ কে জানে, একদিন সকালে উঠে চায়ের পেয়ালা হাতে নিয়ে খবরের কাগজে চোখ বোলালেই পড়বেন শিরোনাম – ‘‘আমরা একা নই৷''
প্রতিবেদন: সঞ্জীব বর্মন
সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল ফারূক