1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ভিনধর্মে বিয়ে বনাম লাভ জিহাদ

৫ ডিসেম্বর ২০২০

ভারতে ‘লাভ জিহাদ'-এর রব তুলেছে বিজেপি৷ উত্তরপ্রদেশ সরকার ধর্মান্তরণের পর বিয়ে রোধ করতে আদেশ জারি করেছে৷ অথচ ভিনধর্মে বিয়ে নতুন কোন বিষয় নয়৷ সত্যিই কি এই সম্পর্কে প্রেম নেই, এর লক্ষ্য কেবল ধর্ম পরিবর্তন?

https://p.dw.com/p/3mGPi
Indien Paar Subhojit & Nazma Roy
ছবি: Payel Samanta/DW

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে একসঙ্গে পড়তেন সাদিক জামান ও মানসী সিনহা৷ প্রেম থেকে পরিণয় ৪২ বছর আগে৷ কলকাতার বাসিন্দা সাদিক ছিলেন সরকারি সংস্থার উচ্চ পদাধিকারী৷ পৃথক ধর্ম তাঁদের দাম্পত্য বা পারিবারিক সম্পর্কে ছাপ ফেলতে পারেনি৷ সেই সাদিক বৃদ্ধ বয়সে পৌঁছে ‘লাভ জিহাদ' শব্দবন্ধ শুনে বিস্মিত৷ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এ কোন ভারত? এটাও আমাদের দেখতে হচ্ছে৷ আমাদের দুই পরিবারই নাস্তিক৷ ধর্মীয় আচারকে ঘৃণা করি৷ আমার দুই ছেলেও সেটাই বিশ্বাস করে৷ আজ ভাবতে হচ্ছে, দেশে থাকতে পারব না হয়তো৷''

ভারতে বিজেপি সমর্থকদের একটি অংশ মুসলিম পাত্রের সঙ্গে হিন্দু পাত্রীর বিয়েতে ষড়যন্ত্র দেখছে৷ তাদের অভিযোগ, হিন্দু মেয়েদের সামনে ভালোবাসার ফাঁদ পেতে তাঁদের ধর্মান্তরিত করা হচ্ছে৷ এসব ‘ফাঁদ'-এর লক্ষ্য হল, ‘জিহাদি' তৈরি করা যারা ভারতের বিরুদ্ধে সক্রিয় হবে৷ এমন উদাহরণও দেখাবার চেষ্টা করছে বিজেপি নেতৃত্ব৷ উত্তরপ্রদেশে যোগী আদিত্যনাথের সরকার এই প্রবণতা রোধে আদেশ জারি করেছে৷ চলতি সপ্তাহে নয়া আইনে প্রথম গ্রেপ্তার হয়েছেন ওই রাজ্যের বরেইলির এক মুসলিম তরুণ৷ এই আইনে দোষী সাব্যস্ত হলে ১০ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারে৷ বিরোধীদের বক্তব্য, একটি বিশেষ ধর্মের অনুসারীদের সমস্যায় ফেলার জন্য এটা বিজেপির কৌশল৷ এই চাপানউতোরের মধ্যে ডয়চে ভেলে কথা বলেছে পশ্চিমবঙ্গে কয়েকজন দম্পতির সঙ্গে যাঁরা ভিনধর্মে বিয়ে করেছেন৷

বিজেপির কেউ ধর্মান্তরিত হলে লাভ জিহাদ বলা যাবে না?: ইমানুল

এদের একজন ভাষা ও চেতনা সমিতির প্রধান, অধ্যাপক ইমানুল হক৷ তিনি ২৬ বছরের বিবাহিত জীবন কাটাচ্ছেন একজন হিন্দু রমণীর সঙ্গে৷ একই কাহিনী অধ্যাপকের ভাই জয়নুল হক ও তাঁর স্ত্রী সীমা সাহারও৷ ইমানুল বলেন, ‘‘বিয়ের জন্য আমাদের পরিবারের কোনো নারী ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিত হননি৷ বরং তাঁরা এখনো নিজস্ব ধর্মাচরণ করেন৷ কিন্তু বিজেপি নেত্রী হেমামালিনী নিজেই ধর্মান্তরিত হয়েছিলেন বিয়ের সময়৷ বিজেপির শীর্ষ নেতা শাহনওয়াজ হুসেন ও মুখতার আব্বাস নকভির স্ত্রী হিন্দু৷ বিজেপি বলে কি একে লাভ জিহাদ বলা যাবে না?''

পশ্চিমবঙ্গে এমন অনেক উদাহরণও আছে, যেখানে পাত্র হিন্দু, পাত্রী মুসলিম৷ সেক্ষেত্রে কি ধর্মান্তরণের অভিযোগ উঠবে না? পশ্চিম মেদিনীপুরের ঘাটালের বাসিন্দা টুম্পা খাতুন মাধ্যমিক পরীক্ষা দেওয়ার পর বাড়ি ছেড়ে চলে যান৷ বিয়ে করেন মোনা দাঁ-কে৷ তিনি খাবারের দোকান চালান৷ টুম্পা বিয়ের জন্য ধর্মান্তরিত হন৷ পরিবারের একাংশের আপত্তি এখনো রয়েছে৷ তবু তা অগ্রাহ্য করে এক সন্তান নিয়ে সুখি দাম্পত্য তাঁদের৷ টুম্পা ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমি পুজো করি, ব্রত-উপবাসও করি৷ লাভ জিহাদ-এর কথা জানি না, শুধু লাভ জানি৷ আমরা বেশ ভালোই আছি৷''

লাভ জিহাদ জানি না, শুধু লাভ জানি: টুম্পা

বিয়ের আগেই হিন্দু ধর্মকে ভালোবেসে বেলুড় মঠে দীক্ষা নিয়েছিলেন ইসলাম ধর্মাবলম্বী ঝুমা মণ্ডল৷ এক বছর আগে বিয়ে করেন পশ্চিম মেদিনীপুরের পুলিশ আধিকারিক সোমনাথ সাহাকে৷ ঝুমা ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমরা দু'জনই লাভ জিহাদ-এর প্রচারকে ঘৃণা করি৷ প্রেমের সম্পর্ককে এভাবে কলুষিত করা ঠিক নয়৷ ভালোবাসা আর জিহাদ একসঙ্গে থাকতে পারে না৷''

বীরভূমের দুবরাজপুরের সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক শুভজিৎ রায় বিয়ে করেন নাজমা খাতুনকে৷ এখন তিনি নাজমা রায়৷ শুভজিৎ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমার গুরুর শিক্ষা, ধর্মীয় বিভেদ ঘোচানোর সবচেয়ে বড় হাতিয়ার ভিনধর্মে বিয়ে করা৷ আমি অনেক প্রতিকূলতার মুখেও তা করেছি৷ সুখের পরোয়া করিনি৷''

তার প্রস্তাব, ‘‘অন্য ধর্মে বিয়ে একটা আন্দোলন হয়ে উঠতে পারে৷ সকলে এগিয়ে আসুন, ধর্মীয় পরিচয় ভুলে ভালোবাসুন৷ তাহলে লাভ জিহাদ-এর প্রচার হার মানবেই৷''

ডয়চে ভেলের কলকাতা প্রতিনিধি পায়েল সামন্ত৷
পায়েল সামন্ত ডয়চে ভেলের কলকাতা প্রতিনিধি৷