ভুল খবর ছড়ালেন মোস্তাফা জব্বার?
৫ ডিসেম্বর ২০১৯গত ৩ ডিসেম্বর ফেসবুকে পোস্টটি দিয়েছেন মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার৷ সেখানে লন্ডনে দ্বিতীয় ভাষা হিসেবে বাংলার সরকারিভাবে মর্যাদা পাওয়ার কথাও বলা হয়েছে৷
খবরটির সত্যতা যাচাই করতে লন্ডনে বাংলাদেশ হাইকমিশনের প্রেস মিনিস্টার আশিকুন্নবী চৌধুরীর সঙ্গে কথা বলেছে ডয়চে ভেলে৷ টেলিফোনে তিনি বলেছেন, ‘‘ব্রিটিশ সরকারের পক্ষ থেকে হাইকমিশনকে এমন কিছু জানানো হয়নি৷’’
খুব দায়িত্বশীল পদে থেকেও এমন একটি খবর নিজের ভেরিফাইড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে পোস্ট দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমি অনেক জায়গায় খবরটি দেখেছি৷ ভালো লাগা থেকে পোস্টটি শেয়ার করেছি, অন্য কিছু নয়৷’’
মন্ত্রীর ফেসবুক পোস্ট অনেকেই শেয়ার করছেন৷ এভাবে জনমনে বিভ্রান্তি ছড়ানো হলো কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘এখানে বিভ্রান্তির কিছু নেই৷ খবরটি যদি সত্যি না হয়, তাহলে আমি আরেকটি পোস্ট দিয়ে সবাইকে জানিয়ে দেবো৷ তবে অফিসিয়াল স্বীকৃতি না পেলেও লন্ডনে যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সংখ্যক মানুষ বাংলায় কথা বলেন, এটা সত্য৷ আমি বিভিন্ন জায়গা থেকে এমন তথ্য পেয়েছি৷’’
সিটি লিট নামে একটি প্রতিষ্ঠানের জরিপের বরাত দিয়ে প্রথমে খবরটি প্রকাশ করে ভারতের একটি গণমাধ্যম৷ সেখান থেকেই বিষয়টি ছড়িয়ে পড়ে৷ জরিপের কথা উল্লেখ করে সেখানে বলা হয়েছে, লন্ডনে সবচেয়ে বেশি মানুষ ইংরেজিতে কথা বলেন, এরপরই বাংলা, তারপর রয়েছে পোলিশ ও তুর্কি ভাষা৷
লন্ডনের সাংস্কৃতিক বৈচিত্র, বাসিন্দাদের মধ্যে যোগাযোগ বৃদ্ধি এবং শহরে ইংরেজির পর কোন ভাষায় বাসিন্দারা বেশি কথা বলেন, সেটা জানতে এই জরিপ চালানো হয় বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়৷ সেখানে দাবি করা হয়, ‘‘লন্ডনের ৭১ হাজার ৬০৯ জন মানুষ তাদের প্রধান ভাষা হিসেবে বাংলায় কথা বলেন৷ লন্ডনের ক্যামডেনের ৩ শতাংশ, নিউহ্যামের ৭ শতাংশ এবং টাওয়ার হ্যামলেটের ১৮ শতাংশ বাসিন্দার প্রধান ভাষা বাংলা৷’’
এই জরিপের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে প্রেস মিনিস্টার আশিকুন্নবী চৌধুরী বলেন, ‘‘সিটি লিট নামে যে প্রতিষ্ঠানের কথা বলা হচ্ছে, সেটি মূলত শিক্ষা নিয়ে কাজ করা একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান৷ আমি নিজে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি৷ তারা আমার মেইলের কোনো জবাব এখনো দেয়নি৷ রিপোর্টটির অনেক তথ্যই সঠিক নয়৷ সরকারি হিসেবে লন্ডনে সাড়ে ৫ লাখের মতো সিলেটের মানুষ বসবাস করেন৷ তারা কোন ভাষায় কথা বলেন? এটা কয়েকবছর আগের হিসাব৷ নতুন হিসেবে সেখানে ‘বাংলাদেশি’ অনেক বেশি৷ এর বাইরে ভারতেরও বাংলা ভাষাভাষী মানুষ সেখানে আছেন৷ ফলে যে প্রায় ৭২ হাজার মানুষের কথা বলা হচ্ছে, সেটা কিভাবে ঠিক হয়? আর স্বীকৃতি তো কাউকে না কাউকে দিতে হবে৷ লন্ডনের সরকারের তরফ থেকে এমন কোনো স্বীকৃতির খবর আমাদের হাইকমিশনে কেউ জানাননি৷’’
গত তিন দিনে বাংলাদেশের প্রথম শ্রেণির বেশ কয়েকটি দৈনিকেও লন্ডনে বাংলার দ্বিতীয় ভাষার মর্যাদা পাওয়ার খবর প্রচারিত হয়েছে৷ তবে খবরটি যে সত্য নয় তা ফ্যাক্ট চেকিং ওয়েবসাইট ‘লজিক্যাল ইন্ডিয়ান’ও তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখিয়েছে৷