ভুয়া খবর নিয়ে উদ্বেগ দূর করতে ‘সোশ্যাল বট’ সম্পর্কে জানুন
১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৭সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, বিশেষ করে ফেসবুক, টুইটার, কার্যত আমাদের চিন্তাভাবনায় বড় প্রভাব ফলে৷ ফলে বিশ্বের যাবতীয় ঘটনা সম্পর্কে আমাদের যে মতামত সৃষ্টি হয়, তা কার্যত সামাজিক যোগাযোগনির্ভর হয়ে উঠছে৷ রাজনীতিবিদদের গুরুত্ব, জনপ্রিয়তা বা গ্রহণযোগ্যতা বলুন আর আর্থিক মডেল বা নীতিগত আন্দোলন, সবকিছু সম্পর্কেই আমরা জানছি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে৷ বিশ্বের ছোটবড় সব গণমাধ্যম তাই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাদের কন্টেন্ট শেয়ার করেন৷
‘সোশ্যাল বট'দের বসবাসও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে৷ বিএমডাব্লিউ থেকে শুরু করে স্পটিফাই অবধি বিভিন্ন কোম্পানি এখন ‘বট' ব্যবহার করছে, যেগুলোর কাজ হচ্ছে আপনার পছন্দের গানগুলো সেভ করে রাখা থেকে শুরু করে আপনার ইন্সটাগ্রামের ছবি টুইটারে স্বয়ংক্রিয়ভাবে পোস্ট করা, এমনকি সময় মতো আপনার গাড়ির গ্যারেজ খুলে দেয়া৷ সমস্যা হচ্ছে কিছু মানুষ মন্দ উদ্দেশ্যেও ‘বট' তৈরি করছে৷
বিশেষ করে ফেসবুক, টুইটারে অনেক সময় ভুয়া অ্যাকাউন্ট তৈরি করে সেগুলোতে হাজার হাজার ভুয়া অনুসারী যোগ করা হয়৷ এটা করা হয়, যাতে অ্যাকাউন্টগুলো দেখে আসল মনে হয়৷ পরবর্তীতে অ্যাকাউন্টগুলোর সঙ্গে নির্দিষ্ট ধরনের ‘বট' সফটওয়্যার যোগ করে দেয়া হয়, যার কাজ হচ্ছে সুনির্দিষ্ট তথ্য টুইট, রিটুইট বা পোস্ট করা৷ বিশেষ উদ্দেশ্য সাধনের জন্য এটা করা হয়৷ আর এই বিশেষ উদ্দেশ্য অমঙ্গলজনক হওয়ার আশঙ্কাই বেশি থাকে৷
ভুয়া খবর
আজকের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে তথ্য বিকৃতি এক বড় ইস্যু৷ জার্মানির বিচারমন্ত্রী হাইকো মাস সম্প্রতি জানিয়েছেন, তিনি মনে করেন, জার্মানির আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের আগে ব্যাপক হারে ভুয়া তথ্য বা ভুয়া সংবাদ ছড়িয়ে দেয়া হতে পারে৷
তাঁর উদ্বিগ্ন হওয়ার যথেষ্ট কারণও আছে৷ যদিও মানুষই ভুয়া সংবাদ তৈরি করে, কিন্তু সেটি ফেসবুক, টুইটার বা রেডিটের মতো জনপ্রিয় সোশ্যাল মিডিয়া প্লাটফর্মে দ্রুত ছড়িয়ে দিতে বড় ভুমিকা পালন করে লাখ লাখ ভুয়া অ্যাকাউন্ট৷ ডোনাল্ড ট্রাম্প মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পরপরই বাজফিডের করা এক গবেষণায় দেখা গেছে, নির্বাচন সংক্রান্ত বিভিন্ন ভুয়া সংবাদ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যে পরিমাণ ‘এনগেজমেন্ট' সৃষ্টি করেছিল, তা উনিশটি বড় সংবাদমাধ্যমে পরিবেশিত সংবাদে তৈরি সম্মিলিত এনগজেমেন্টের চেয়ে বেশি৷
বিশ্বের কয়েকটি শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের নিয়ে তৈরি গবেষণা দল ‘পলিটিক্যাল বটস' এক রিপোর্টে জানিয়েছে, টুইটারে অন্তত ৩০ মিলিয়ন ভুয়া অ্যাকাউন্ট রয়েছে৷ এটি আরো জানিয়েছে, মার্কিন নির্বাচনের আগে ট্রাম্পপন্থি বট, যেগুলোর কাজ ছিল ভুয়া সংবাদ ছড়ানো, প্রো-ক্লিন্টন বটের চেয়ে পাঁচগুণ বেশি ছিল৷
ভুয়া সংবাদের মোকাবিলা
যদিও হোক্সম্যাপের মতো কোম্পানিগুলো গত বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে ভুয়া নিউজের বিরুদ্ধে লড়াই করছে, সোশ্যাল মিডিয়া কোম্পানিগুলো, কর্তৃপক্ষ এবং বিভিন্ন দেশের সরকারবর্গ এখন সেই লড়াইয়ে নামছে৷
ফেসবুক সম্প্রতি এক উদ্যোগের কথা জানিয়েছে, যা প্ল্যাটফর্মটিতে ভুয়া খবর ছড়ানো রোধে সহায়তা করবে৷ এই উদ্যোগের কারণে এখন কোনো ব্যববহারকারীর কোনো সংবাদ ভুয়া মনে হলে তিনি সেটি ফেসবুকে রিপোর্ট করতে পারবেন৷ এরপর ফেসবুক সেই নিউজ সঠিক, না ভুয়া তা জানতে ‘থার্ড পার্টি' বিভিন্ন তথ্য যাচাই কোম্পানির সহায়তা নেবে৷ সংবাদটি ভুয়া হলে ফেসবুকে লিংকটির সঙ্গে ট্যাগ লাগিয়ে দেবে৷
ভুয়া সংবাদ রোধে জার্মান সরকারও উদ্যোগ নিচ্ছে৷ ‘সেন্টার অফ ডিফেন্স অ্যাগেইনস্ট ডিসইনফরমেশন' নামে একটি টিম গঠন করা হয়েছে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের অধীনে৷ আর ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা এক ‘সাইকোলজিক্যাল ভ্যাকসিনের' কথা বলছেন, যা মানুষকে ভুয়া সংবাদ সম্পর্কে সজাগ করতে পারে৷ তবে অন্যান্য ভ্যাকসিনের মতো এমন ভ্যাকসিন তৈরিতেও কয়েক দশক লাগতে পারে৷
স্টেফান বিয়ানকোভস্কি/ এআই
আপনার কি কিছু বলার আছে? লিখুন মন্তব্যে৷