‘ভুয়া খবর লাগামহীন হয়ে ছড়িয়ে পড়ে'
১৫ জুলাই ২০১৯মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রায়ই ‘ফেক নিউজ' নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন৷ অথচ তিনি নিজেই এমন ‘ফেক নিউজ' ছড়ানোয় ওস্তাদ৷ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমই ট্রাম্পের মঞ্চ৷ ‘ফেক নিউজ' তাঁর যোগাযোগের কৌশলের মধ্যে পড়ে৷
প্রতিদিন তিনি টুইটারের মাধ্যমে নতুন বার্তা পাঠিয়ে চলেছেন৷ তার মধ্যে অনেক কথাই তাঁর নিজের বানানো৷ যেমন আচমকা তিনি দাবি করে বসেছিলেন, যে গুগল সুপরিকল্পিতভাবে তাঁকে উপেক্ষা করছে৷
অনেক বছর ধরে গুগল তার সার্চ ইঞ্জিনে বারাক ওবামার ‘স্টেট অফ দ্য নেশন' ভাষণের ঘোষণা করেছে৷ ট্রাম্প হোয়াইট হাউসে আসার পর গুগল সেই রীতি বন্ধ করে দিয়েছে৷ এই অভিযোগ যে সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন, তা কিন্তু প্রমাণ করা সম্ভব৷
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কীভাবে ‘ফেক নিউজ' ছড়ানো হয়? তার পরিণতিই বা কী হয়? মূল স্রোতের সংবাদ মাধ্যমের ক্ষেত্র ও আন্তর্জাতিক ভৌগোলিক সীমা ছাড়িয়ে সেই খবর কীভাবে পাঠকের কাছে পৌঁছে যায়? সেই ভুল সংশোধন করলেই বা তার কতটা প্রভাব পড়ে?
জার্মানির কোলন শহরে উনিসেপ্টা কোম্পানি সংবাদ বিশ্লেষণ করে এমন সব প্রশ্নের জবাব দিতে পারে৷ গুগল সম্পর্কে ডোনাল্ড ট্রাম্পের টুইট কীভাবে ছড়িয়ে পড়েছিল, এই কোম্পানি তার চুলচেরা বিশ্লেষণ করেছে৷
কোম্পানির গবেষণা বিভাগের প্রধান ভল্ফ-ডিটার ব়্যুল এমন বিষয়কে যথেষ্ট গুরুত্ব দেন৷ কারণ এর আগে অন্য কোনো প্রেসিডেন্ট মিথ্যাচারকে সুপরিকল্পিতভাবে নিজের যোগাযোগ ব্যবস্থার অঙ্গ করে তোলেননি৷ এক্ষেত্রে তিনি কতটা সফল? কেনই বা তিনি এমনটা করেন? ব়্যুল মনে করেন, ‘‘কারণ মিথ্যা বলতে গিয়ে ধরা পড়লেও তাঁর কিছু এসে যায় না৷ নিজের সমর্থকরা তাঁর কথা বিশ্বাস করলেই তিনি সন্তুষ্ট৷ সেটাই তাঁর প্রধান লক্ষ্য৷ নিজের সমর্থকদের আরও উসকে দিতে তিনি প্রচলিত সংবাদ মাধ্যমকে শত্রু হিসেবে তুলে ধরেন৷''
টুইটারে বিশাল সংখ্যক ফলোয়ার বা অনুগামী থাকায় তিনি অসংখ্য মানুষের কাছে নিশ্চিতভাবে নিজের বার্তা পৌঁছে দিতে পারেন৷ গুগল সম্পর্কে তাঁর বিষাদগার ৪৫ লক্ষবার পড়া হয়েছে, প্রায় ৪০,০০০ বার শেয়ার করা হয়েছে এবং ১০৮,০০০ হাজার বার লাইক করা হয়েছে৷ ভল্ফ-ডিটার ব়্যুল বলেন, ‘‘ছড়িয়ে পড়ার এই প্রক্রিয়া বিচার করলে চোখে পড়বে, একটি টুইট বার্তা কতবার রিটিউইট করা হয়েছে, কী ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে৷ ‘ফেক নিউজ' অত্যন্ত দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে, তার বিরুদ্ধে আরও ঘনঘন প্রতিবাদ দেখা যায় এবং অনুগামীরা সবচেয়ে দ্রুত সেই বার্তা ছড়িয়ে দেয়৷ ভুল শুধরে প্রথম পালটা বার্তাও দ্রুত প্রকাশ করা হয়৷ কিন্তু ভুয়া খবর প্রকাশের পর প্রথমবার সেই দাবি চ্যালেঞ্জ করতে করতে প্রায় দেড় ঘটনা লেগে গিয়েছিল৷ এ ক্ষেত্রে বাজফিডের এক সাংবাদিক সেই দাবি মিথ্যা প্রমাণিত করেছিলেন৷''
আসলে ২০১৭ সালে ডোনাল্ড ট্রাম্প আদৌ কোনো ‘স্টেট অফ দ্য ইউনিয়ন' ভাষণই দেন নি! ২০১৮ সালে তিনি প্রথমবার এই ভাষণ দেন৷ এবং গুগল যথারীতি সেই ভাষণের ঘোষণা করেছিল৷ কিন্তু সেই সংশোধনের খবর মাত্র ৩,০০০ বার রিটিউইট করা হয়েছে৷ ট্রাম্পের অভিযোগের তুলনায় যা ১২ গুণ কম৷ ব়্যুল বিষয়টি আরও ব্যাখ্যা করে বলেন, ‘‘সময়ের মানদণ্ডে ফেক নিউজ সব সময়ে এগিয়ে থাকায় সংশোধনীর তুলনায় তার প্রসার অনেক বেশি হয়৷ এমনটাই বার বার দেখা যায়৷''
বিষয়টি নিয়ে সচেতনতা বাড়ছে৷ বর্তমানে মূল স্রোতের সংবাদ মাধ্যমও নড়েচড়ে বসেছে৷ প্রথমে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, তারপর বাকি বিশ্বে এ বিষয়ে আলোচনা হচ্ছে৷ সুপরিকল্পিত মিথ্যাচারে মাধ্যমে সামান্য উদ্যোগ দেখিয়েও ট্রাম্প সর্বোচ্চ মনোযোগ আকর্ষণ করতে পারছেন৷
আনাটোল হুগ/এসবি