ভুয়া খবরই কি বেশি ভালো লাগে আমাদের?
৮ এপ্রিল ২০২০পেশার খাতিরে আজকাল ইউটিউবে একটু বেশিই সময় দিতে হয়৷ কোন নির্দিষ্ট বিষয়ে কোন ধরনের ভিডিও বেশি চলছে, কেনো বেশি চলছে সেগুলো ঘাঁটার, বোঝার চেষ্টা করি৷ বর্তমানে সেরকমই এক টপিক হচ্ছে করোনা৷
এই টপিকে যাতে ভুয়া খবর বেশি না ছড়ায় সেজন্য কিছু উদ্যোগ নিয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ভিডিও প্লাটফর্ম ইউটিউব৷ মার্কিন প্রতিষ্ঠানটি করোনা সংক্রান্ত ভিডিও প্রমোশনের জন্য নেয় না৷ অর্থাৎ কেউ চাইলেও বৈধ পথে ইউটিউবে করোনা সংক্রান্ত ভিডিও পয়সা দিয়ে প্রমোট করতে পারবে না৷
ভুয়া খবরের প্রসার রোধে ইউটিউবের এই উদ্যোগ প্রশংসার দাবি রাখে৷ এমনটাও দেখা যাচ্ছে যে করোনা সংক্রান্ত সঠিক তথ্য প্রকাশ করা হচ্ছে এমন ভিডিও ইউটিউবে তেমন একটা সাড়া পাচ্ছে না কারণ প্রতিষ্ঠানটি সেটিকে স্বয়ংক্রিয় প্রথম পাতায় কিংবা ‘রেকমেন্ডেশনে' যায়গা দিচ্ছে না৷ কিন্তু ইউটিউবের এসব উদ্যোগ গুজব বা ভূয়া খবর রোধে কতটা সহায়ক হচ্ছে?
কয়েকটি ভিডিওর শিরোনাম পড়ুন:
- ‘‘করোনা কার তৈরি? বলে দিলেন ব্রিটিশ বক্সার! জাতিসংঘে চীনকে নিয়ে এ কেমন দাবি আইসিজির!’’
- ‘‘চীন কি ইচ্ছাকৃত ভাবে ছড়িয়ে দিয়েছে করোনা ভাইরাস?|| চীনের এতো বড় ষড়যন্ত্রের পেছনে রয়েছে কত বড় কারণ?’’
- ‘‘এই ১৫ তথ্যই প্রমাণিত করে চীন সারা বিশ্বকে ধ্বংস করে দেবে খুব শীঘ্রই|| চীনের ষড়যন্ত্রে জ্বলছে বিশ্ব’’
- ‘‘কোরোনায় ইহুদিদের এ কি হাল!! প্রবাসীদের সু-খবর দিলো সৌদি !! দেশবাসীর প্রতি খালেদা জিয়ার পরামর্শ’’
- ‘‘চীনের মুসলমানের জন্য আশির্বাদ করোনা ভাইরাস! আজ তারা প্রকাশ্য নামাজ পড়ছে’’
এসব শিরোনামের ভিডিওগুলোর কোনটিরই ভিউ চার লাখের কম নয়, মন্তব্য হাজার হাজার৷ অথচ ভিডিওগুলো শুধু গুজব কিংবা ভুয়া বা অতিরঞ্জিত তথ্যের ভিত্তিতে তৈরিতে৷ এসব ভিডিও-র মানও বলার মতো নয়৷ অথচ মানুষ সেসব দেখছে, এবং ছড়িয়েও দিচ্ছে৷ এমনকি ইউটিউবের নানা উদ্যোগও ভিডিওগুলোর প্রচার থামাতে পারছে না৷
শুধু ইউটিউব কেন, ফেসবুকেও দেখছি করোনা ভাইরাস নিয়ে নানা রকম গুজব মুহূর্তেই ছড়িয়ে পড়ছে৷ অমুক দেশের তমুক করোনা নিয়ে দিয়েছেন বিস্ফোরক তথ্য – এমন রিপোর্ট বা ভিডিও আমার ইনবক্সেও জড়ো হচ্ছে৷ অথচ সেই তমুক ব্যক্তিটি হয়ত এমন কেউ যার করোনা নিয়ে কথা বলার কোন যোগ্যতা বা অবস্থান – কোনটিই নেই৷ আর তিনি এমন কিছু বলেছেন যেটা বাস্তবসম্মত বা সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে না হলেও সাধারণ মানুষ শুনতে চান৷
সাধারণ মানুষের এই শোনার আগ্রহের সঙ্গে গুজব বা ভুয়া খবর ছড়ানোর একটি সম্পর্ক আছে বলে আমি মনে করি৷ আপনি যতই সঠিক তথ্যের ভিত্তিতে সংবাদ দেন না কেন, সমাজের একটি অংশ বিশ্বাস করতে ভালোবাসে যে করোনা হচ্ছে এক জীবাণু অস্ত্র যা চীনের তৈরি কিংবা বিধর্মীদের মারতে সৃষ্টিকর্তা পাঠিয়েছে এই ভাইরাস৷ ফলে, কেউ যখন তাদের সেই বিশ্বাসের সঙ্গে সম্পর্ক আছে এমন কিছু প্রকাশ করছেন, সেটা হয়ে যাচ্ছে ভাইরাল৷
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কল্যাণে গড়ে ওঠা এই বিশাল সংখ্যার ভুয়া খবর, গুজবে বিশ্বাসী পাঠক, দর্শকদের কিভাবে সঠিক তথ্য দিয়ে সমৃদ্ধ করা যায় সেটা মাঝেমাঝে ভাবি৷ কিন্তু, সুনির্দিষ্ট কোন সমাধান পাইনা৷ হয়ত সঠিক তথ্য প্রকাশের মাধ্যমে ভুয়া তথ্যের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাওয়া একটি সমাধান হতে পারে৷ আপনার কাছে কি আর কোন সমাধান আছে?