1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ভূগর্ভের উত্তাপ জ্বালানি হিসেবে বেশি নির্ভরশীল

১৩ নভেম্বর ২০২৩

সূর্য বা বাতাস না থাকলে সৌর বা বায়ুচালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্র উৎপাদন বন্ধ রাখতেই হয়৷ কিন্তু ভূ-পৃষ্ঠের গভীরের উত্তাপ কাজে লাগাতে পারলে বিঘ্নের আশঙ্কা থাকে না৷ মিউনিখ শহরের কাছে ঠিক তেমনই এক উদ্যোগ চলছে৷

https://p.dw.com/p/4YlS9
Geothermie Geretsried/Videostill
ছবি: Eavor

জার্মানির দক্ষিণে মিউনিখ শহর থেকে ৫০ কিলোমিটার দক্ষিণে একটি জায়গায় ১,৮০০ মিটার গভীরে খননের কাজ চলছে৷ আপাতত ১,৮০০ মিটার গভীরে পৌঁছানো গেছে৷ কিন্তু এর দ্বিগুণই হলো লক্ষ্য৷

আন্তর্জাতিক এই টিম সাধারণত পেট্রোলিয়াম ও গ্যাসের সন্ধান করে৷ এ ক্ষেত্রে তাদের গরম পাথরের স্তর পর্যন্ত পৌঁছতে হবে৷ জিওথার্মাল জ্বালানি উপদেষ্টা হিসেবে রায়ান ক্রস বলেন, ‘‘আমাদের একশো থেকে ৮,০০০ মিটার পর্যন্ত খননের অভিজ্ঞতা রয়েছে৷ কাজের গতি বাড়ছে৷ জিওথার্মাল খননের জন্য যে প্রযুক্তি ব্যবহার করছি, সেটা অনেকটা শেল গ্যাস সন্ধানের প্রযুক্তির মতো৷''

শেল গ্যাসের সন্ধানে খননের ব্যয় কমে গেছে৷ সে কারণেই ইয়াভর কোম্পানির জন্য জিওথার্মাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের লক্ষ্যে মাটির গভীরে খনন করা অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক হয়ে উঠেছে৷ কোম্পানির কর্ণধার ডানিয়েল ম্যোল্ক জানালেন, গোটা বিশ্বে এটাই প্রথম এ ধরনের প্লান্ট৷ তিনি বলেন, ‘‘প্রথম ধাপে আমরা সাড়ে চার হাজার মিটার গভীরে পৌঁছাচ্ছি৷ তাপমাত্রা ও সঠিক পাথরের স্তরের জন্য এতটা গভীরে যেতে হচ্ছে৷ সেই স্তরে পৌঁছানোর পর আমরা একাধিক গর্ত খুঁড়ে মাটির নীচে এক ধরনের রেডিয়েটর তৈরি করবো৷''

সেই গভীরতায় পৌঁছানোর পর ‘ইনক্লাইন্ড পোজিশন' থেকে আরো ৪০০০ মিটার গভীরে খনন শুরু করা হবে৷ সেখানে পাথরের স্তরের তাপমাত্রা ১৬০ ডিগ্রি সেলসিয়াস৷ খননের যন্ত্রগুলি চৌম্বক সংকেতের মাধ্যমে পরস্পরকে খুঁজে পায় এবং পরিস্থিতি অনুযায়ী কাজ করে৷ এভাবে পাতাল জগতে এক পানি-ভরা ‘হিট এক্সচেঞ্জার' সৃষ্টি হয়৷ প্রায় বিনামূল্যে উত্তাপের অনন্ত চক্র চলতে থাকে৷

ভূগর্ভের উত্তাপ থেকে জ্বালানি

দশ থেকে বিশ টন চাপ দিয়ে ড্রিল বিট পাথর ভেদ করে খনন করে চলে৷ ইন্ডাসট্রিয়াল ডায়ামন্ড দিয়ে সেগুলি চালানো হয়৷ মাঝের জেট ধুলাবালি উপর দিকে চালনা করে৷ ডানিয়েল ম্যোল্ক বলেন, ‘‘এই ড্রিল বিট দিয়ে আমরা ঘণ্টায় ২০ থেকে ৩০ মিটার খনন করতে চাই৷ মাঝে সেই গর্ত পরিষ্কার করে সুরক্ষার ব্যবস্থা করতে হয়৷ চার দিনে আমরা ২,৪০০ মিটার গভীরে পৌঁছতে চাই৷''

খননের সময় বর্জ্য হিসেবে গরম বেলেপাথরের কাটিং উপরে উঠে আসে৷ লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছলে ফুটন্ত গরম পরিবেশ সামলাতে হবে৷ পরে বিশেষ ধরনের পাইপের মাধ্যমে গর্তগুলি ইনসুলেট করা হয়৷

মাটির নীচে ‘হিট এক্সচেঞ্জার'-এর কাজ সম্পূর্ণ করতে তিন বছর খননের কাজ চালিয়ে যেতে হবে৷ সাইটে ২০০ পর্যন্ত শ্রমিক-কর্মী কাজে ব্যস্ত৷ দুটি গর্তের জন্য দুটি টাওয়ার তৈরি করা হয়েছে৷

ইঞ্জিনিয়াররা কাছের এক খামারে বাস করছেন৷ একই সঙ্গে তাঁরা বিদ্যুৎ প্লান্ট নির্মাণের পরিকল্পনাও করছেন৷ এক বছরে সেটি গড়ার কাজ শেষ হবার কথা৷ প্রকল্পের ম্যানেজার ফাব্রিসিও সেজারিও বলেন, ‘‘বিদ্যুৎ কেন্দ্র গড়ার জন্যও আমরা জিওথার্মাল খননের প্রক্রিয়া কাজে লাগাচ্ছি৷ একই সঙ্গে আমরা শহরে উত্তাপের ব্যবস্থা করছি৷''

শেষে বিদ্যুতের এক জেনারেটর দশ হাজার বাসার জন্য বিদ্যুৎ সরবরাহ করবে৷ সেই প্লান্ট ৮০,০০০ পর্যন্ত বাসার জন্য হিটিংয়েরও ব্যবস্থা করবে৷ রক ডিপ জিওথার্মাল এনার্জি অবিরাম জ্বালানি সরবরাহ করে, সৌর বা বায়ুশক্তির ক্ষেত্রে যেটা সম্ভব নয়৷ নতুন এই জ্বালানি কোন ভূমিকা পালন করবে? ইয়াভর কোম্পানির কর্ণধার ম্যোল্ক বলেন, ‘‘বিভিন্ন উৎস থেকে জ্বালানির মিশ্রণই সমাধানসূত্র হতে চলেছে৷ আমরা সেই কাঠামোর অংশ হিসেবেই কাজ করতে চাই, আধিপত্য বিস্তার করতে চাই না৷ আমাদের ইয়োভারলুপ ‘হিট এক্সচেঞ্জার' পরিস্থিতি অনুযায়ী কাজ করে৷ খুব রোদ বা বাতাসের দিনে আমরা ব্যবহার কমাতে পারি৷ বাতাস বা সূর্যের আলো না থাকলে উৎপাদন বাড়াতে পারি৷ সেই অর্থে আমরা সম্পূরক পূনর্ব্যবহারযোগ্য জ্বালানির ব্যবস্থা করছি৷''

গ্যাসচালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ‘ডিস্ট্রিক্ট হিটিং'-এর চাহিদা এখন আর নেই৷ সে কারণে এই স্থাপনা মিউনিখ শহরে ২০২৬ সাল থেকে পরিবেশবান্ধব উত্তাপ সরবরাহ করবে৷ আর জার্মানির উত্তরের এক বড় শহরে দুই বছর পর খনন শুরু হবার কথা৷

ক্রিস্টিয়ান প্রিসেলিউস/এসবি