ভূগর্ভের উত্তাপ জ্বালানি হিসেবে বেশি নির্ভরশীল
১৩ নভেম্বর ২০২৩জার্মানির দক্ষিণে মিউনিখ শহর থেকে ৫০ কিলোমিটার দক্ষিণে একটি জায়গায় ১,৮০০ মিটার গভীরে খননের কাজ চলছে৷ আপাতত ১,৮০০ মিটার গভীরে পৌঁছানো গেছে৷ কিন্তু এর দ্বিগুণই হলো লক্ষ্য৷
আন্তর্জাতিক এই টিম সাধারণত পেট্রোলিয়াম ও গ্যাসের সন্ধান করে৷ এ ক্ষেত্রে তাদের গরম পাথরের স্তর পর্যন্ত পৌঁছতে হবে৷ জিওথার্মাল জ্বালানি উপদেষ্টা হিসেবে রায়ান ক্রস বলেন, ‘‘আমাদের একশো থেকে ৮,০০০ মিটার পর্যন্ত খননের অভিজ্ঞতা রয়েছে৷ কাজের গতি বাড়ছে৷ জিওথার্মাল খননের জন্য যে প্রযুক্তি ব্যবহার করছি, সেটা অনেকটা শেল গ্যাস সন্ধানের প্রযুক্তির মতো৷''
শেল গ্যাসের সন্ধানে খননের ব্যয় কমে গেছে৷ সে কারণেই ইয়াভর কোম্পানির জন্য জিওথার্মাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের লক্ষ্যে মাটির গভীরে খনন করা অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক হয়ে উঠেছে৷ কোম্পানির কর্ণধার ডানিয়েল ম্যোল্ক জানালেন, গোটা বিশ্বে এটাই প্রথম এ ধরনের প্লান্ট৷ তিনি বলেন, ‘‘প্রথম ধাপে আমরা সাড়ে চার হাজার মিটার গভীরে পৌঁছাচ্ছি৷ তাপমাত্রা ও সঠিক পাথরের স্তরের জন্য এতটা গভীরে যেতে হচ্ছে৷ সেই স্তরে পৌঁছানোর পর আমরা একাধিক গর্ত খুঁড়ে মাটির নীচে এক ধরনের রেডিয়েটর তৈরি করবো৷''
সেই গভীরতায় পৌঁছানোর পর ‘ইনক্লাইন্ড পোজিশন' থেকে আরো ৪০০০ মিটার গভীরে খনন শুরু করা হবে৷ সেখানে পাথরের স্তরের তাপমাত্রা ১৬০ ডিগ্রি সেলসিয়াস৷ খননের যন্ত্রগুলি চৌম্বক সংকেতের মাধ্যমে পরস্পরকে খুঁজে পায় এবং পরিস্থিতি অনুযায়ী কাজ করে৷ এভাবে পাতাল জগতে এক পানি-ভরা ‘হিট এক্সচেঞ্জার' সৃষ্টি হয়৷ প্রায় বিনামূল্যে উত্তাপের অনন্ত চক্র চলতে থাকে৷
দশ থেকে বিশ টন চাপ দিয়ে ড্রিল বিট পাথর ভেদ করে খনন করে চলে৷ ইন্ডাসট্রিয়াল ডায়ামন্ড দিয়ে সেগুলি চালানো হয়৷ মাঝের জেট ধুলাবালি উপর দিকে চালনা করে৷ ডানিয়েল ম্যোল্ক বলেন, ‘‘এই ড্রিল বিট দিয়ে আমরা ঘণ্টায় ২০ থেকে ৩০ মিটার খনন করতে চাই৷ মাঝে সেই গর্ত পরিষ্কার করে সুরক্ষার ব্যবস্থা করতে হয়৷ চার দিনে আমরা ২,৪০০ মিটার গভীরে পৌঁছতে চাই৷''
খননের সময় বর্জ্য হিসেবে গরম বেলেপাথরের কাটিং উপরে উঠে আসে৷ লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছলে ফুটন্ত গরম পরিবেশ সামলাতে হবে৷ পরে বিশেষ ধরনের পাইপের মাধ্যমে গর্তগুলি ইনসুলেট করা হয়৷
মাটির নীচে ‘হিট এক্সচেঞ্জার'-এর কাজ সম্পূর্ণ করতে তিন বছর খননের কাজ চালিয়ে যেতে হবে৷ সাইটে ২০০ পর্যন্ত শ্রমিক-কর্মী কাজে ব্যস্ত৷ দুটি গর্তের জন্য দুটি টাওয়ার তৈরি করা হয়েছে৷
ইঞ্জিনিয়াররা কাছের এক খামারে বাস করছেন৷ একই সঙ্গে তাঁরা বিদ্যুৎ প্লান্ট নির্মাণের পরিকল্পনাও করছেন৷ এক বছরে সেটি গড়ার কাজ শেষ হবার কথা৷ প্রকল্পের ম্যানেজার ফাব্রিসিও সেজারিও বলেন, ‘‘বিদ্যুৎ কেন্দ্র গড়ার জন্যও আমরা জিওথার্মাল খননের প্রক্রিয়া কাজে লাগাচ্ছি৷ একই সঙ্গে আমরা শহরে উত্তাপের ব্যবস্থা করছি৷''
শেষে বিদ্যুতের এক জেনারেটর দশ হাজার বাসার জন্য বিদ্যুৎ সরবরাহ করবে৷ সেই প্লান্ট ৮০,০০০ পর্যন্ত বাসার জন্য হিটিংয়েরও ব্যবস্থা করবে৷ রক ডিপ জিওথার্মাল এনার্জি অবিরাম জ্বালানি সরবরাহ করে, সৌর বা বায়ুশক্তির ক্ষেত্রে যেটা সম্ভব নয়৷ নতুন এই জ্বালানি কোন ভূমিকা পালন করবে? ইয়াভর কোম্পানির কর্ণধার ম্যোল্ক বলেন, ‘‘বিভিন্ন উৎস থেকে জ্বালানির মিশ্রণই সমাধানসূত্র হতে চলেছে৷ আমরা সেই কাঠামোর অংশ হিসেবেই কাজ করতে চাই, আধিপত্য বিস্তার করতে চাই না৷ আমাদের ইয়োভারলুপ ‘হিট এক্সচেঞ্জার' পরিস্থিতি অনুযায়ী কাজ করে৷ খুব রোদ বা বাতাসের দিনে আমরা ব্যবহার কমাতে পারি৷ বাতাস বা সূর্যের আলো না থাকলে উৎপাদন বাড়াতে পারি৷ সেই অর্থে আমরা সম্পূরক পূনর্ব্যবহারযোগ্য জ্বালানির ব্যবস্থা করছি৷''
গ্যাসচালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ‘ডিস্ট্রিক্ট হিটিং'-এর চাহিদা এখন আর নেই৷ সে কারণে এই স্থাপনা মিউনিখ শহরে ২০২৬ সাল থেকে পরিবেশবান্ধব উত্তাপ সরবরাহ করবে৷ আর জার্মানির উত্তরের এক বড় শহরে দুই বছর পর খনন শুরু হবার কথা৷
ক্রিস্টিয়ান প্রিসেলিউস/এসবি