ভেগান – লাইফস্টাইল না সিদ্ধান্ত?
২৭ এপ্রিল ২০১৪
‘‘কাপুচিনো-টা সয়াদুধ না কাঠবাদামের দুধ দিয়ে চাও?’’ আংকে কক্স তাঁর খদ্দেরদের এই ধরনেরই প্রশ্ন করেন৷ তারপর তাঁদের ইচ্ছামত কফি বানিয়ে এগিয়ে দেন৷
বনের প্রথম ভেগান ক্যাফের মালিক কক্স৷ খোলেন ২০১৩ সালের অক্টোবর মাসে৷ এতে কোনো ধরনের প্রাণীজাত খাবার থাকে না৷ ভেগানরা মাছ-মাংস তো বটেই দুধ-ডিমের মতো প্রাণীজাত কোনো খাবারই স্পর্শ করেন না৷
ভেগান ক্যাফের যাত্রা শুরু
অনেক দিন ধরেই এ রকম একটি ক্যাফে খোলার ইচ্ছা ছিল আংকে কক্সের৷ নিজে পাঁচ বছর ধরে ভেগান জীবনযাপন করছেন৷ প্রথম দিকে অসুবিধা হতো৷ বাজার করতে ঘণ্টা দুয়েকের বেশি লাগতো৷ প্রতিটি প্যাকেট খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে হতো, প্রাণীজাত কোনো কিছু রয়ে গিয়েছে কিনা৷ ‘‘রেস্টুরেন্টেও একই অবস্থা৷ ওয়েটার ও বাবুর্চিদের সঙ্গে আলোচনা করতে করতে আর শুধু সাইড-ডিশ খেতে খেতে হতাশ হতে হতো৷’’ বলেন কক্স৷
অনলাইন ম্যাগাজিন
ভেগান রেস্টুরেন্টের প্রণোদনা পেয়েছিলেন তিনি ইন্টারনেট থেকে৷ এই অনলাইন ম্যাগাজিনটি জার্মানির ভেগানদের জন্য যোগাযোগের কেন্দ্রবিন্দু৷ ভেগান খাদ্যদ্রব্য, সংশ্লিষ্ট প্রকল্প ও অনুষ্ঠান সম্পর্কে নানারকম তথ্য পাওয়া যায় এই ম্যাগাজিনে৷
কোন ধরনের ভেগান খাদ্যদ্রব্য সুপার মার্কেটে পাওয়া যায়, সে সম্পর্কে অনেকে জানতে চান৷ এই ধরনের আর্টিকেলগুলিতে সবচেয়ে বেশি ক্লিক আসে৷ ‘‘এতে বোঝা যায় ‘ভেগানিজম’ সমাজের কেন্দ্রে এসে পৌঁছেছে৷ বিষয়টি দ্রুতগতিতে এগিয়ে যাচ্ছে৷’’ বলেন ম্যাগাজিনটির প্রধান সম্পাদক পাট্রিক বল্ক৷
আনলাইন ম্যাগাজিনের লেখকরা নৈতিক বিশ্বাস থেকে ভেগান জীবনধারা বেছে নিয়েছেন৷ দ্বিতীয় পদক্ষেপে তাঁরা স্বাস্থ্যের দিকটি নিয়ে চিন্তাভাবনা করেন৷ এক্ষেত্রে আরো কিছু কারণও রয়েছে৷
বাজার-গবেষণার একটি সমীক্ষায় জানা গিয়েছে, ভেগানদের একটি বড় অংশই অন্য ধরনের জীবনযাপন বা লাইফস্টাইলের জন্যই প্রাণীজাত খাবার বর্জন করেন৷
‘‘আদতে পশুরক্ষা আন্দোলন থেকে উঠে এসেছে এই জীবনদর্শন৷ এখন অবশ্য সুস্বাস্থ্যের জন্যও অনেকে ছেড়ে দিচ্ছেন প্রাণীজাত খাবার৷ ভেগানিজমকে আকর্ষণীয় ও স্বাস্থ্যকর এক জীবন পদ্ধতি মনে করা হয়৷’’ জানান পাট্রিক বল্ক৷
সংবেদনশীল হতে হবে
হামবুর্গ শহরের ভোক্তা সুরক্ষা কেন্দ্রের প্রধান সিলকে শোয়ার্টাউ বলেন, ভেগান হতে হলে নিজের খাবারের ব্যাপারে সংবেদনশীল হতে হবে৷ সম্প্রতি তাঁর টিম প্রক্রিয়াজাত ভেগান খাদ্যদ্রব্য নিয়ে এক মার্কেট চেক চালান৷ ফলাফল মোটামুটি ভালো হলেও কিছু খাবার অতিরিক্ত তৈলাক্ত ও লবণাক্ত বলে প্রমাণিত হয়েছে৷
‘‘ইন্টারনেটে এ ব্যাপারে একটি জোরালো আলোচনা হয়৷ প্রতিক্রিয়াটা যে সর্বক্ষেত্রে ইতিবাচক তা বলা যায় না৷ অনেকে লিখেছেন স্বাস্থ্যের দিকটা তাদের কাছে গৌণ৷ পশুনির্যাতন ও পশুহত্যা না হলেই হলো৷’’ জানান শোয়ার্টাউ৷ এমনিতেই ভেগানরা প্রক্রিয়াজাত খাবার খুব কমই খান৷ সুষম খাদ্য তাঁদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ৷
‘‘ভেগান জীবনযাপন মানেই যে স্বাস্থ্যকর তা বলা যায় না৷ যেমন বলা যায় না বেশি মাংস খাওয়ার অর্থই হলো অস্বাস্থ্যকর৷’’ বলেন পুষ্টি বিশেষজ্ঞ শোয়ার্টাউ৷
আগ্রহ বৃদ্ধি পাচ্ছে
অবশ্য তিনিও লক্ষ্য করেছেন ভেগনিজমের ব্যাপারে সমাজের আগ্রহ বৃদ্ধি পাচ্ছে৷ ২০ বছর আগেও এটা ভাবা যায়নি৷ তাঁর ভাষায়, ‘‘৮০-এর দশকে ভেগানরা ছিলেন এক প্রান্তিক গোষ্ঠী৷ এমনকি মাঝে মাঝে অপুষ্টিতেও আক্রান্ত হতেন তাঁরা৷ কেননা তখন পুষ্টিকর বিকল্প খাবার পাওয়া সহজ ছিল না৷’’ আজ তো ভোক্তা সুরক্ষা কেন্দ্রগুলিতে প্রতিদিনই ভেগান খাদ্যের ব্যাপারে জানতে চান অনেকে৷
তবে খদ্দেরদের খাদ্যাভ্যাস যাই হোক না কেন৷ কিংবা তাঁরা যে ধরনের জীবনদর্শনেই বিশ্বাস করুন না কেন আংকে কক্স-এর ক্যাফে ‘মায়েস’-এ সেটা কোনো বিষয়ই নয়৷ অনেক খদ্দেরই জানেন না যে, তাঁদের সামনের মেন্যুটিতে শুধু ভেগান-খাবার ও পানীয়ই রয়েছে৷ ক্যাফের মালিকও এমনটি চান৷ ‘মায়েস’-এ সবাই স্বাগত৷