ভেগানদের জন্য সুপার মার্কেট
৩১ মে ২০১১তাহলে যাঁরা ভেগান তাঁরা কী খান? জার্মানির ডর্টমুন্ড শহরে খোলা হয়েছে ভেগানদের জন্য বিশাল একটি সুপার মার্কেট৷ সুস্থ থাকার আরেক উপায় কী তাহলে ভেগান হয়ে যাওয়া?
গ্রীষ্মকালে জার্মানি গ্রিল পার্টির উৎসবে মেতে ওঠে৷ বাড়ির উঠানে, ব্যালকনিতে বা পার্কে দেখা যায় ছোট ছোট দল গ্রিল পার্টিতে ব্যস্ত৷ গ্রিল পার্টির মূলে সবসময়ই মাংস, মাছ এবং সব্জি থাকে৷ তবে যাঁরা নিরামিষাশী, তাঁদের গ্রিল পার্টি হয় একটু ভিন্ন ধরণের৷ মার্কুস বেজিটেরিয়ান নন, তিনি ভেগান৷ তিনি বললেন,‘‘আমি ভাত আর টমেটোর পেস্ট দিয়ে এক ধরণের খাবার তৈরি করেছি৷ তা-ই গ্রিলে তুলে দেব৷ খেতে অত্যন্ত সুস্বাদু৷ এতে মেশানো হয়েছে কয়েক ধরণের মসলা৷ মনে হয় খেতে দারুণ হবে!''
যে খাবারটি তৈরি করা হয়েছে তার নাম মেট-ইগেল৷ সাধারণত এই খাবার তৈরিতে প্রচুর মাংস ব্যবহার করা হয়৷ তবে নিরামিষাশীরা তা তৈরি করেছে একেবারে তাদের মত করে৷ রুটি দিয়ে খুব সহজেই তা খাওয়া যায়৷ যারা মাছ বা মাংস একেবারেই খায় না তারা ঝাঁপিয়ে পড়ছে এই ভেজিটেরিয়ান মেট-ইগেলের ওপর৷
ডর্টমুন্ডে প্রথম ভেগান সুপার মার্কেট
ডর্টমুন্ডে একটি খাবারের দোকানের নাম ‘তারান্তা বাবু'৷ সেখানে শুধু নিরামিষ জাতীয় খাবার পাওয়া যায়৷ অনেকেই সেখান থেকে খাবার কিনে এনেছেন গ্রিল পার্টির জন্য৷ যাঁরা গ্রিল পার্টিতে এসেছেন, তাঁরা সবাই বয়সে তরুণ৷ ছেলে-মেয়ে সবার গায়ে উল্কি আঁকা, তরুণ ঝটপটে, আনন্দ উচ্ছ্বাসে ভরা – এরা সবাই ভেগান৷ অর্থাৎ দুধ, ডিম, পনির, মাখন, মধু কোন কিছুই এরা খান না৷ সবাই বেশ বেছে বেছে খাওয়া-দাওয়া করেন৷ ডানিয়েল একজন শিক্ষক৷ ড্যানিয়েল জানালেন কীভাবে শুরু হয়েছিল, ‘‘ভেগান হওয়ার পর বেশ কিছু সমস্যার সম্মুখীন হয়েছি আমি৷ অনেকেই খুব বাঁকা চোখে তাকায়, যেন বুঝতে পারছে না আমি কী বলছি৷ তবে আমি কখনোই দমে যাইনি৷ বড় শহরগুলোতে অনেক ভেগান চোখে পড়বে৷ বিভিন্ন ধরণের বেকারি, পেস্ট্রির দোকানও ভেগানদের জন্য খাবার বিক্রি করে৷ এছাড়া বেশ কিছু সুপার মার্কেটে ভেগানদের জন্য বিশেষ একটি শেল্ফ রয়েছে৷''
প্রায় ১৫ বছর আগে ডানিয়েল সিদ্ধান্ত নেন ভেগান হিসেবে খাওয়া-দাওয়া শুরু করার৷ শুরুতে সবাই তাঁকে পাগল ভাবতো৷ কারণ তখনো ম্যাড-কাউ-ডিজিজ, ডায়ক্সিন বা মাছ-মাংসে কোন ধরণের বিষাক্ত উপকরণের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়নি৷ আর কথা সত্যি যে, ইদানিং এসব সমস্যার কারণে অনেকেই ভেজিটেরিয়ান বা ভেগান হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন৷ ‘ভেগান গেজেলশাফ্ট ডয়েচলান্ড' বার্লিনের একটি সংস্থা৷ সংস্থাটি জানিয়েছে খুব শীঘ্র জার্মানিতে ভেগানের সংখ্যা ১০ লক্ষ ছাড়িয়ে যাবে৷
মাংসের পরিপূরক ময়দা এবং গ্লুটোন
কিম কালকোভস্কির বয়স ২৬ বছর৷ সারা গায়ে উল্কি আঁকা৷ নাকে আর ঠোঁটে ঝুলছে রিং৷ সম্প্রতি কিম এবং তাঁর বন্ধু ডর্টমুন্ডে জার্মানির প্রথম ভেগান সুপার মার্কেট চালু করেছেন৷ এই মার্কেটের কোন খাবারে মাছ, মাংস এবং দুধের উপস্থিতি নেই৷ অন্য সাধারণ সুপার যা পাওয়া যায় এখানেও সেসব পণ্য পাওয়া যায় – শুধু পার্থক্য হল, এখানে ভেগানরা এসে স্বচ্ছন্দে কেনাকাটা করতে পারবেন৷ দোকান ঘুরিয়ে দেখাতে দেখাতে কিম জানান, ‘‘এটা ভার্জিনিয়া স্টেক৷ এর মধ্যে বেশ কিছু মসলা দিয়ে ঝাল করা হয়েছে৷ তবে এতে সত্যিকার অর্থে কোন মাংস ব্যবহার করা হয়নি৷ কিন্তু খেতে ঠিকই মাংসের মত মনে হবে৷ এটা দিয়ে গ্রিল পার্টিও করা সম্ভব৷ এটা তেরি করা হয়েছে ময়দা আর গ্লুটোন দিয়ে৷ এটা মাংসের পরিপূরক৷''
বাড়িতে পোষা কুকুর বা বিড়ালকেও ভেগান করে তোলা সম্ভব – তাও জানানো হচ্ছে এই সুপার মার্কেটে৷ কুকুর এবং বিড়ালের জন্য রয়েছে বিশেষ ধরণের খাবার৷ প্রশ্ন উঠেছে পোষা প্রাণীকেও নিরামিষাশী করে তোলার প্রয়োজন রয়েছে কিনা!
তবে একথা ঠিক জার্মানির প্রথম ভেগান সুপার মার্কেট দেখতে, সেখান থেকে কেনাকাটা করতে নানা শহর থেকে মানুষরা আসছেন৷ ইন্টারনেট বা অনলাইনেও এসব ভেগান খাবার বিক্রি করা হচ্ছে৷ ডর্টমুন্ডের এই সুপার মার্কেটে প্রায় আঠারশো বিভিন্ন ধরণের খাবার পাওয়া যাচ্ছে এবং তার সবগুলোই মাছ-মাংস-ডিম-দুধ বিহীন৷
প্রতিবেদন: মারিনা জোয়ারদার
সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক