ভেনিস চলচ্চিত্র উৎসবে প্রথম বাংলাদেশি ছবি
৮ সেপ্টেম্বর ২০১০হ্যাঁ, কথা সত্যি৷ কিন্তু এই সত্যির মাঝেও ঘটছে সূক্ষ্ম পরিবর্তন৷ নইলে, ইশতিয়াক জিকো নামক এক তরুণ, বাংলাদেশি ছবি নিয়ে ভেনিসে গেলো কীভাবে? তাও আবার পাঁচ মিনিটের সংলাপহীন এক স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র৷ তারচেয়েও বড় কথা, ভেনিস চলচ্চিত্র উৎসবে এই প্রথম কোন বাংলাদেশি ছবি মনোনয়ন পেল৷ বিশ্বাস হচ্ছে না? জিকোর নিজের জানালেন এই তথ্য৷ তিনি বলেন, ভেনিস আর্ন্তজাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে প্রথম বাংলাদেশি ছবি এটি৷ এই উৎসবের আর্কাইভের দায়িত্বরত কর্মকর্তা আমাকে জানিয়েছেন একথা৷ একজন জার্মান প্রোগ্রামারও বলেছেন যে, বাংলাদেশ থেকে নির্বাচিত প্রথম ছবি এটি৷
৭২০ ডিগ্রি
জিকোর ছবির নাম ‘৭২০ ডিগ্রি'৷ সেখানে অভিনয় করেছেন মাত্র পাঁচজন৷ এদের কেউই আবার পেশাদার শিল্পী নয়৷ পুরো ছবিটার শুটিং হয়েছে একদিনে, কক্সবাজারের হিমছড়িতে৷ একটি ছবির বেঁচে যাওয়া ফিল্ম ব্যবহার করে তৈরি হয়েছে এই ‘৭২০ ডিগ্রি'৷ বর্তমানে ভেনিসে অবস্থানরত ইশতিয়াক জিকো এই প্রসঙ্গে জানান, আমি তখন মেহেরজান নামক একটি পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রে কাজ করছিলাম৷ কক্সবাজারে সেটার শুটিং চলছিল৷ শুটিং শেষ হবার পরে বাকি থেকে যায় ফিল্মের তিনটি রিল৷ সেগুলো ব্যবহার করে এই ছবিটি করা হয়েছে৷
একরাতেই চিত্রনাট্য
‘৭২০ ডিগ্রি'র চিত্রনাট্য তৈরি হয়েছে একরাতে৷ এর কাহিনীর শুরুতে দেখা যায় শান্ত সাগরতীরের দৃশ্য৷ সেখানে গামছা পেতে ধ্যানে বসে আছে এক লোক৷ এরপর ক্যামেরা চলে যায় এক মোটর বাইক চালক রোমিওর কাছে৷ এভাবে একের পর এক চরিত্রের দেখা মেলে৷ মাঝে আবার শোনা যায় বারাক ওবামার ভাষণও৷ শেষদৃশ্যে ক্যামেরা থিতু হয় বালুতে পোতা ভাঙা আয়নায়৷
এক টেকে ছবি
পুরো ছবিটা চিত্রায়ণ করা হয়েছে এক টেকে৷ তবে, এর সাউন্ড ডিজাইনে ব্যয় করা হয়েছে বেশ খানিকটা সময়৷ ইশতিয়াক জিকোর কথায়, পোস্টপ্রডাকশনটা হয় মুম্বাইতে৷ মুম্বাই এবং কলকাতায় আমি কাজ করি সাউন্ড নিয়ে৷ সাউন্ড ডিজাইনটা করতে কয়েকমাস লেগেছে৷
ওরিজন্তি বিভাগে ৭২০ ডিগ্রি
জিকোর এই ছবি ভেনিস চলচ্চিত্র উৎসবে মনোনয়ন পেয়েছে ওরিজন্তি বিভাগে৷ মূলত চলচ্চিত্রভাষা নিয়ে নিরীক্ষাধর্মী ছবিগুলোই জায়গা পায় এই বিভাগে৷ সেখানে স্বল্পদৈর্ঘ্য শাখায় দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র প্রতিনিধি ৭২০ ডিগ্রি। পরিচালক তাই, মনোনয়নকেই দেখছেন বড় সাফল্য হিসেবে৷ জিকো বলেন, এখানে আমি বড় কোন আশা করছি না৷ আমি নমিনেশন পেয়েছি তাতেই খুশি৷ এটাই বড় পাওয়া৷
ইশতিয়াক জিকো তাঁর এই ছবিটিকে উৎসর্গ করেছেন টুশকিকে৷ টুশকি তাঁর বিড়ালের নাম৷ গত বছর মারা গেছে টুশকি৷ ২৭ বছর বয়সী এই তরুণ ব্লগিং করেন জিকোবাজি শিরোনামে৷ তাঁর ধ্যানজ্ঞান এখন চলচ্চিত্র, কাজ চালিয়ে যেতে চান এই খাতেই৷
প্রতিবেদন: আরাফাতুল ইসলাম
সম্পাদনা: সাগর সরওয়ার