ভেনিসে আন্তর্জাতিক চিত্রকলার প্রদর্শনী বিয়েনালে
২১ জুন ২০১১প্রাচীন কিন্তু উত্তম৷ এই আইডিয়া থেকেই ইটালির ভেনিসে শিল্পকলার প্রদর্শনী বিয়েনালের যাত্রা শুরু ১৮৯৫ সালের ৩০ এপ্রিল৷ প্রথম প্রদর্শনীর দ্বার উন্মোচন করেন ইটালির রাজ দম্পতি৷
সূচনাতেই দর্শকদের আকৃষ্ট করে ভেনিস বিয়েনালে৷ দুই লাখেরও বেশি মানুষ উপভোগ করেন এই প্রদর্শনী৷ তারপর থেকে বিশ্বযুদ্ধের কারণে কিছুটা অনিয়মিত হলেও প্রতি দুবছর পর পর অনুষ্ঠিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক শিল্পাঙ্গনের তাৎপর্যপূর্ণ এই প্রদর্শনী৷ ছয় মাস চলবে এই প্রদর্শনী৷ শিরোনাম ‘ইলিউমিনেশন': লাইট অ্যান্ড নেশন - আলো ও জাতি৷ পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছেন সুইজারল্যান্ডের শিল্পকলাবিদ বিস কুরিগার৷
প্রথমবারের মত যোগ দিচ্ছে বাংলাদেশ
প্রথমবারের মত বাংলাদেশের পাঁচ শিল্পীও যোগ দিচ্ছেন বিয়েনালেতে৷ তাঁরা হলেন চিত্রশিল্পী মাহবুবুর রহমান, কবির আহমেদ মাসুম চিশতি, ইমরান হোসেন পিপলু, প্রমথেশ দাস পুলক ও তৈয়বা বেগম লিপি৷ বেঙ্গল ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ প্যাভিলিয়নের ওপর ‘প্যারাবলস-প্যাভিলিয়ন অব বাংলাদেশ, বিয়েনালে আর্ট ২০১১' নামে একটি গ্রন্থ প্রকাশ করেছে৷ গ্রন্থটির মোড়ক উন্মোচন করেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ইটালির রাষ্ট্রদূত জর্জিও গুইলিয়েলমিনো৷
স্বর্ণসিংহ জয় করলো জার্মান প্যাভিলিয়ন
জার্মান প্যাভিলিয়নে থিয়েটার, অপেরা ও চলচ্চিত্র পরিচালক প্রয়াত শিল্পী ক্রিশ্টফ শ্লিংগেনজিফ'এর প্রতি বিশেষ শ্রদ্ধাঞ্জলি জানান হয়েছে৷ বহুমুখী প্রতিভাবান এই শিল্পী ছিলেন এক রাজনীতি সচেতন ব্যক্তিত্ব, প্রথাগত সব কিছুর বাইরে থাকা এক মানুষ৷ ২০১০ সালে ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে মাত্র ৪৯ বছর বয়সে মারা যান তিনি৷ এর কয়েক মাস আগে জার্মান প্যাভিলিয়নের পরিচালক সুজানে গ্যানজহাইমার শ্লিংগেনজিফকে অনুরোধ করছিলেন জার্মান প্যালিভিলিয়নটির সাজসজ্জার দায়িত্ব নিতে৷ কিন্তু পরিকল্পনার খুঁটিনাটি বিষয় নিয়ে চিন্তাভাবনা করার অবকাশ হয়নি এই শিল্পীর৷ তার আগেই অকালে চলে যেতে হয় তাঁকে৷ শ্লিংগেনজিফের কল্পনার মাধুরী দিয়ে সাজানো সম্ভব না হলেও তাঁর শিল্পকর্মের ছোঁয়া বড় একটা স্থান জুড়ে আছে প্যাভিলিয়নে৷ আর তারই সুবাদে এবছরের বিয়েনালের স্বর্ণসিংহ জয় করলো জার্মান প্যাভিলিয়ন৷ জার্মান পররাষ্ট্র দপ্তরের প্রতিমন্ত্রী কর্নেলিয়া পিপার এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘এই শিল্পীকে হারানো বেদনার সঙ্গে অনুভব করব আমরা, তবে তাঁর শিল্পকর্ম দীর্ঘকাল অবিনশ্বর থাকবে৷''
প্রয়াত শিল্পী শ্লিংগেনজিফের স্ত্রী আইনো লাবারেন্স জার্মান প্যাভিলিয়নের সাজসজ্জার দায়িত্ব নেন৷ স্বামীর ইন্সটেলেশন আর্ট, ছায়াছবি, মঞ্চ ইন্সটেলেশন ইত্যাদি স্থান পেয়েছে প্যাভিলিয়নে৷ তিন রুমে বিভক্ত প্যাভিলিয়নের মাঝখানেই রয়েছে শ্লিংগেনজিফ নির্মিত মঞ্চ ইন্সটেলেশনটি, যাতে শিল্পী বলেছেন, ‘আমার ভেতরের অজানাকে নিয়ে আতঙ্কের অনুভূতি'৷ ক্যানসার রোগ, জীবন ও মৃত্যুর টানাপোড়েনের কথা প্রকাশ পেয়েছে এতে৷ পাশের ঘরেই শ্লিংগেনজিফ নির্মিত ‘মেনু টোটাল', ডয়েচলান্ড ট্রিলজি' ইত্যাদি ছায়াছবি প্রদর্শিত হচ্ছে৷ এ প্রসঙ্গে জার্মান প্যাভিলিয়নের পরিচালক সুজানে গ্যানজহাইমার বলেন, ‘‘আমার মনে হয়, ক্রিশ্টোফ শ্লিংগেনজিফ গত কয়েক বছরে দেখাতে পেরেছেন যে, নানা ধরনের মাধ্যমে দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে শিল্পকর্ম সৃষ্টি করতে সক্ষম তিনি৷ আমি বলব জার্মানির এক বিশাল মাপের শিল্পী তিনি৷''
মিশরের প্যাভিলিয়নে প্রয়াত শিল্পীর প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি
মিশরের প্যাভিলিয়নটি প্রয়াত ভিডিও ও পারফর্ম্যানস শিল্পী আহমেদ বাসিয়োনির নামে উৎসর্গ করা হয়েছে৷ অন্যান্য শিল্পকর্মের মধ্যে শিল্পীর ভিডিও ইনস্টেলেশন ‘থার্টি ডেজ অফ রানিং ইন দ্য স্পেস' প্রদর্শিত হচ্ছে৷ তরুণ এই শিল্পী মিশরে সরকার বিরোধী আন্দোলনের ছবি তোলার সময় নিহত হন৷ ‘এই শিল্পীর মৃত্যু অর্থহীন নয়, তিনি এখন এখানে', বলেন মিশর প্যাভিলিয়নের এক পরিচালক আইদা এলতোরি৷ মৃত্যুর আগ মুহূর্তে তোলা আহমেদ বাসিয়োনির ভিডিও চিত্র দেখা যাবে এই প্যাভিলিয়নে৷
ইরাকি প্যাভিলিয়নে প্রবাসী ইরাকিদের সমকালীন চিত্রকলা স্থান পেয়েছে৷ বাংলাদেশ ছাড়াও এই প্রথমবারের মত সৌদি আরব, মালয়েশিয়া ও বাহরাইনও যোগ দিয়েছে এবারের বিয়েনালেতে৷ ডয়চে ভেলের সাংবাদিক সাবিনে কিজেলবাখ এবারের বিয়েনালে সম্পর্কে বলেন, ‘‘৫৪তম এই বিয়েনালে আগের তুলনায় অনেক বেশি বর্ণাঢ্য ও সমকালীন৷ অংশগ্রহণকারী দেশগুলির তালিকার দিকে নজর দিলে দেখা যাবে বহু সংঘাতপূর্ণ অঞ্চলও যোগ দিয়েছে এই প্রদর্শনীতে৷''
প্রতিবেদন: রায়হানা বেগম
সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল ফারূক