1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ভোটার আনার চ্যালেঞ্জ কি সফল হয়েছে?

৭ জানুয়ারি ২০২৪

বিএনপিসহ বেশকিছু দল নির্বাচন বর্জন করায় বড় কোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে পড়তে হবে না আওয়ামী লীগকে, এমনটা নিশ্চিতই ছিল৷ তবে কে কতটা আসন পাবে, কারা হবে বিরোধী দল, এটিই এখন বড় প্রশ্ন।

https://p.dw.com/p/4ax2v
ব্যালট বাক্স
নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে ভোট পড়েছে ৪০ শতাংশ ছবি: Indranil Mukherjee/AFP

বাংলাদেশে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটের আনুষ্ঠানিক পুরো ফল জানতে সোমবার পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হতে পারে৷ কিন্তু বিশেষজ্ঞদের আলোচনায় বাংলাদেশের গণতন্ত্র এবং ভোটাধিকার বিষয়গুলো গুরুত্ব পাচ্ছে৷ নির্বাচনের পর বাংলাদেশের পরিস্থিতি কোন দিকে যাবে?

নির্বাচন বর্জন করেছে বিএনপি ও তাদের সমমনা দলগুলো৷ তারা ভোটের দিনসহ ৪৮ ঘণ্টার হরতাল কর্মসূচি পালন করছে৷ ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে আসতে নিরুৎসাহিতও করেছে৷ অন্যদিকে নির্বাচনে আওয়ামী লীগ, সরকার ও নির্বাচন কমিশনের নানা ধরনের তৎপরতা ছিলো ভোটার উপস্থিতি যাতে বেশি হয়৷ বিএনপি নির্বাচনে না থাকায় শাসক দল আওয়ামী লীগের প্রধান চ্যালেঞ্জ ছিলো ভোটকেন্দ্রে ভোটার আনা৷ সেই চ্যালেঞ্জে তারা কতটা সফল হয়েছে সেটাই এখন বড় প্রশ্ন৷

বাংলাদেশে নির্বাচন ভোটের হার

ভোটের যে গতি-প্রকৃতি রোববার সারাদিন দেখা গেছে, তাতে অনেকে ভেবেছিলেন, ভোটের হার ৩০ শতাংশের বেশি হবে না৷ ঢাকার দুই-একটি আসন ছাড়া আর সবখানেই ভোটারের উপস্থিতি ছিলো খুবই কম৷ প্রথম এক ঘণ্টায় এক-দুই শতাংশের বেশি ভোট পড়েনি৷ বিকেল ৩টা পর্যন্ত সারাদেশে ভোট পড়েছে ২৭ দশমিক ১৫ ভাগ বলে জানান কমিশন সচিব৷ এর এক ঘণ্টা পর বিকাল ৪টায় ভোট গ্রহণ শেষ হয়৷ কিন্তু ভোট শেষ হওয়ার পর প্রধান নির্বাচন কমিশনার হাবিবুল আউয়াল সংবাদ সম্মেলনে জানান, সারাদেশে ভোটের হার ৪০ শতাংশ৷ তিনি অবশ্য বলেছেন, এটা প্রাথমিক হিসাব৷ পরে এ হার কিছুটা বেশি কম হতে পারে৷

সুশাসনের জন্য নাগরিকের ( সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার ভোটের এ হার অসম্ভব বলে মন্তব্য করেন৷ তিনি বলেন, ‘‘আমাদের পর্যবেক্ষণে ভোটার উপস্থিতি খুবই কম ছিলো৷”

যে হারের কথা বলছে তা বিশ্বাসযোগ্য নয়: ড. বদিউল আলম মজুমদার

ভোটের হার কম হওয়া ছাড়াও নির্বাচনে জাল ভোট, ভোটকেন্দ্র দখলের ঘটনা ঘটেছে৷ কমিশন কয়েকটি ভোট কেন্দ্রের ভোট বাতিলও করেছে৷ নরসিংদীতে শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুনের ছেলে মঞ্জুরুল মজিদ মাহমুদ সাদীকে গ্রেপ্তারের নির্দেশ দিয়েছে কমিশন৷ চট্টগ্রাম-১৬ আসনে নৌকার প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমানের প্রার্থীতা বাতিলও করা হয়েছে৷ তবে প্রধান নির্বাচন কশিনার (সিইসি) হাবিবুল আউয়াল সন্তুষ্ট এই কারণে যে কোনো প্রাণহানির ঘটনা ঘটেনি৷ নির্বাচনে ১৪০টি কেন্দ্রে অনিয়মের ঘটনা ঘটেছে৷ গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৪২ জনকে৷ নির্বাচন কমিশন এ তথ্য জানিয়েছে৷

নব্বইয়ের গণঅভ্যুত্থানের পর ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারির পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট পড়েছিলো ৫৫ দশমিক চার শতাংশ৷ নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে ওই নির্বাচনে বিএনপি জয়ী হয়৷ এরপর ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি বিএনপি সরকারের অধীনে ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগসহ আরো কয়েকটি দল অংশ নেয়নি৷ ওই নির্বাচনে ভোট পড়েছিলো ২১ শতাংশ৷ বিএনপি জয়ী হলেও ওই নির্বাচন গ্রহণযোগ্য না হওয়ায় বিএনপি সরকার পদত্যাগে বাধ্য হয়৷ ফলে চার মাস পর ওই বছরেরই ১২ জুন সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট পড়ে ৭৫.৬ ভাগ৷ কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জয়ী হয়৷ ২০০১ সালের ১ অক্টোবর কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে নির্বাচনে ভোট পড়ে ৭৪.৯৭ ভাগ৷  ওই নির্বাচনে বিএনপি জয়ী হয়৷ ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয় সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে৷ ওই নির্বাচনে ৮৭.১৩ শতাংশ ভোট পড়ে এবং আওয়ামী লীগ জয়ী হয়৷ ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয় আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে এবং বিএনপি ওই নির্বাচন বর্জন করে৷ ওই নির্বাচনে আওয়ামী লগি জয়ী হয় এবং ভোট পড়ে ৩৯.৫৮ শতাংশ৷ ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে হলেও বিএনপি ওই নির্বাচনে অংশ নেয়৷ ভোট পড়ে ৮০.২ শতাংশ৷ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জয়ী হয়৷ এই নির্বাচনে  আগের রাতেই ভোট হয়ে যাওয়ার অভিযোগ আছে৷ আর সর্বশেষ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনও বর্জন করেছে বিএনপি৷ এই নির্বাচন হয়েছে আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে৷ কমিশন দাবি করেছে ভোট পড়েছে ৪০ ভাগ৷

গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন

এবারের নির্বাচনে ভোটারের কম উপস্থিতি নিয়ে সকালে প্রধান নির্বাচন কমিশনার হাবিবুল আউয়াল সকালে ভোট দিতে গিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন," ভোটারের উপস্থিতি কম কি বেশি সেগুলো আমি কিছুই জানি না৷ আমি এসে আমার ভোটটা দিয়ে গেছি, এতটুকুই জানি৷ শেষ পর্যন্ত অপেক্ষা করুন, দেখবেন৷'

চলমান সহিংসতার কারণে ভোটার উপস্থিতি কম এমন শঙ্কা করছেন কি না জানতে চাইলে হাবিবুল আউয়াল বলেন, "আমি ওগুলো নিয়ে কোনো চিন্তা-ভাবনা করিনি৷ আমার কাজটা ভোটটা আয়োজন করা৷ কে ভোট দিতে আসবেন, কে আসবেন না, সহিংসতা হবে কি হবে না; সহিংসতার ব্যাপারটা আমাদের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দেখবে৷”  

সাবেক নির্বাচন কমিশনার মো. রফিকুল ইসলাম ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আইনে  শতকরা কতভাগ ভোট পড়ল তার ওপর ভিত্তি করে নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতার বিষয়ে প্রশ্ন তোলা যায়না৷ কারণ আইনে এরকম কিছু নাই৷ পাশের দেশ ভারতেও ভোট কম পড়ে৷ কিন্তু সমস্যা হলো পাবলিক পারসেপশন নিয়ে৷ আর আন্তর্জাতিকভাবে কমপক্ষে শতকরা ৫০ ভাগ ভোট পড়লে নির্বাচনকে গ্রহণযোগ্য ধরা হয়৷ এবারের নির্বাচন নিয়ে দেশে এবং বিদেশে ব্যাপক আলোচনা ছিলো৷ ফলে  এই নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা সেইভাবেই দেখতে হবে৷”

তিনি বলেন, "বিএনপি এই নির্বাচন বর্জন করার কারণে ভোট কম পড়েছে৷ এমনিকেই মানুষের ভোট নিয়ে এখন আগ্রহ কম৷ তার ওপর এই বর্জন ভোটের ওপর প্রভাব ফেলেছে৷ কারণ বিএনপির কমপক্ষে ৩৬ শতাংশ ভোট আছে৷”

সমস্যা হলো পাবলিক পারসেপশন নিয়ে: মো. রফিকুল ইসলাম

তিনি মনে করেন, "এই ভোটের মাধ্যমে সাংবিধানিক সংকট কেটেছে কিন্তু রাজনৈতিক সংকট কাটেনি৷ বিএনপি যদি তার আন্দোলনে মানুষকে আরো সম্পৃক্ত করতে পারে তাহলে সংকট আরো বাড়বে৷ আগেও রাজনৈতিক সংকটের সমাধান হয়নি, এখনো হলো না৷ বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিলে হয়তো সংকট কাটত৷”

এদিকে সুশাসনের জন্য নাগরিকের সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, "আমরা যতটুকু দেখেছি এবং শুনেছি তাতে ভোটারের উপস্থিতি ছিলো খুবই কম৷ নির্বাচন কমিশন যে হারের (৪০ ভাগ)কথা বলছে তা বিশ্বাসযোগ্য নয়৷ ওই হারের চেয়ে অনেক কম ভোট পড়েছে৷”

তার মতে, ‘‘এই নির্বাচনের মাধ্যমে ও রাজনৈতিক সংকট কাটবেনা আরো গভীর হবে৷ বিভাজন আরো বাড়বে৷ মানুষের ভোটাধিকার আবারো হরণ করা হলো।”

তিনি বলেন, "এই নির্বাচন তো আগেই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়নি৷ এই কারণেই তো ইউরোপীয় ইউনিয়ন পর্যবেক্ষক দল পাঠায়নি৷ এখন যা হলো তাতে আমাদেও মাথা হেট হয়ে গেল৷ তারা এখন তাদের কোর্স অব অ্যাকশনে যেতে পারে৷ আমাদের সার্বভৌমত্ব বিপন্ন হতে পারে৷”

জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য হলে নির্বাচন গ্রহণযোগ্য: শেখ হাসিনা

'বিএনপি সরকার পতনের আন্দোলনেই থাকবে'

অন্যদিকে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন," জনগণ ধারণা করেছিলো, আমরাও বলেছিলাম এটা কোনো ভোট না৷ তাই হয়েছে৷ ভোট কেন্দ্র খালি ছিলো৷ জনগণ এই ভোট বর্জন করেছে৷ যে ভোট দেখানো হয়েছে তা কিছু লোক গিয়ে জাল ভোট দিয়েছে৷”

তিনি জানান, ‘‘সরকার পতন এবং নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের জন্য আমাদের আন্দোল চলবে৷ হরতাল শেষ হওয়ার পর আরো কঠোর কর্মসূচি দেব আমরা৷”

'জনগণ বিএনপিকে বর্জন করেছে'
আর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সন্ধ্যায় এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ‘‘এই নির্বাচনের মাধ্যমে সারা বিশ্বের মানুষ, বাংলাদেশের মানুষ প্রত্যক্ষ করেছে জনগণের বিজয়৷ জনগণ তাদের পছন্দমতো প্রার্থীদেরকে ভোট দিয়েছে৷ ভোট প্রদানে কোনো প্রকার ভয়-ভীতি বা হস্তক্ষেপ হয়নি৷ এই নির্বাচন গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রা থেকে শক্তিশালী করবে৷”

বিএনপির ভোট বর্জনের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘‘এই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে জনগণ তাদের (বিএনপি) বর্জন করেছে৷ তারা গণতন্ত্রকে হত্যা করেছে৷ হরতাল-অবরোধ দিয়ে অগ্নিসন্ত্রাস করেছে৷ এই নির্বাচনের মধ্যমে জনগণ বিএনপি-জামায়াতকে প্রত্যাখ্যান করেছে৷”

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য