ভোটের আগে বাবরি মসজিদ ধ্বংসের কবর খোঁড়া কেন?
৬ এপ্রিল ২০১৪১৯৯২ সালের ৬ই ডিসেম্বর অযোধ্যার রামজন্মভূমি আন্দোলনের নামে ষোড়শ শতাব্দীর বাবরি মসজিদ গুঁড়িয়ে দিয়েছিল মৌলবাদী হিন্দু সংগঠন বজরং দল এবং বিশ্ব হিন্দু পরিষদের কিছু ধর্মান্ধ সদস্য৷ এতদিন পর্যন্ত দাবি করা হতো, নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়া উন্মত্ত জনতা নাকি ধ্বংসের জন্য দায়ী৷ কিন্তু কোবরাপোস্ট নামে এক বেসরকারি সংস্থার স্টিং অপারেশনে বদলে গেল ধ্বংসের নেপথ্য কাহিনিটা৷ বিস্ফোরক এই নেপথ্য কাহিনিটা কী?
রামজন্মভূমি আন্দোলনের গবেষণাধর্মী ইতিহাস রচনার নামে কোবরাপোস্টের অ্যাসোশিয়েটেড এডিটর অযোধ্যা, ফয়জাবাদ, মথুরা, লক্ষ্ণৌ, মোরাদাবাদ, মুম্বই, গোয়ালিয়র-সহ ১১টি জায়গা সফর করে আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত ২৩জন শীর্ষ ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলেন৷ তাঁদের কথোপকথনের গোপন রেকর্ডিং-এর ভিত্তিতে দাবি করা হয় যে, ‘অপারেশন জন্মভূমি' নামে বাবরি মসজিদ ভাঙার ছক কষা হয়েছিল অনেক আগে থেকে পরিকল্পনা করে৷
ধ্বংসকাণ্ড যাতে নিখুঁতভাবে সম্পন্ন করা হয়, তার জন্য সংঘ পরিবারের বিভিন্ন শাখার ৩৮ জন স্বেচ্ছাসেবককে বেছে নিয়ে তাঁদের ঐ কাজের জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছিল লোকচক্ষুর আড়ালে৷ ‘লক্ষণ সেনা' নামে ঐ ৩৮ জনকে প্রশিক্ষণ দিয়েছিল সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কিছু কর্মী৷ প্রথম চেষ্টায় যদি বাবরি মসজিদ ভাঙা না যায়, তাহলে দ্বিতীয় বিকল্প হবে ডিনামাইট ব্যবহার করা৷ কথিত এই চক্রান্তের কথা জানতেন লালকৃষ্ণ আডবানি, উত্তর প্রদেশের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী কল্যাণ সিং-সহ বিজেপির কিছু শীর্ষ নেতা৷ শুধু তাই নয়, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী নরসিমা রাও নাকি পরিকল্পনার কথা টের পেয়েছিলেন. কিন্তু ঠেকাবার কোনো কড়া পদক্ষেপ নেননি – এমনও অভিযোগ করা হয়৷
এই প্রসঙ্গে এক উর্দু সংবাদপত্রের সম্পাদক মনে করেন, বাবরি মসজিদ এমন প্রযুক্তিতে তৈরি, যা ধ্বংস করা সাধারণ লোহার রড, শাবল, কোদাল, গাঁইতির দ্বারা সম্ভব নয়৷ ব্যবহার করা হয়েছিল কম শক্তির বিস্ফোরক, যার জন্য দরকার হয়েছিল বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ব্যক্তি এবং বিশেষজ্ঞের৷
বিতর্ক শুরু হয়েছে এই সব চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশের সময় নিয়ে৷ আর দিন কয়েক পরেই ২০১৪ সালের সাধারণ নির্বাচন৷ ঠিক তার আগের সময়টাকেই বেছে নেয়া হলো কেন? সাম্প্রদায়িকতা উসকে দিয়ে বিজেপি দুর্গে তোপ দাগায় স্বভাবতই বিচলিত বিজেপি শিবির৷ বিজেপির দাবি, এটা একটা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ‘স্পনসর্ড' অপারেশন৷ ধর্মীয় মেরুকরণের লক্ষ্যে বিজেপি-র বিরুদ্ধে ঘুঁটি সাজানো হচ্ছে, এমনও অভিযোগ তুলেছে বিজেপি৷ বিজেপির পালের হাওয়া কেড়ে নিতে চাইছে তারা, যারা হালে পানি পাচ্ছে না৷
নির্বাচন কমিশনকে দেয়া এক চিঠিতে বিজেপি বলেছে, নির্বাচনি প্রচার যখন নির্বিঘ্নে এবং শান্তিপূর্ণভাবে চলেছে, তখন এই সব তথ্য আবহাওয়া বিষিয়ে তুলবে৷ অবিলম্বে এর প্রকাশ ও প্রচার নিষিদ্ধ করা জরুরি৷ আম জনতার কাছে সাম্প্রদায়িকতা এখন আর বিজেপির নির্বাচনি ইস্যু নয়৷ নির্বাচনি ইস্যু হলো কংগ্রেসের অপশাসন৷ নাগরিক সমাজ ক্ষুব্ধ এই কারণে যে, ২৩ বছর আগে বাবরি মসজিদ ধ্বংসকাণ্ডের কঙ্কাল তুলে আনা অহেতুক৷