ভ্যাকসিন দেয়া শুরু হতে পারে এই মাসেই
১৯ জানুয়ারি ২০২১বুধবার অথবা বৃহস্পতিবার ভারতের উপহার অক্সফোর্ড-আস্ট্রাজেনেকার ২০ লাখ ডোজ টিকা হাতে পেতে পারে বাংলাদেশ৷ দূতাবাসের মাধ্যমে এই টিকা হস্তান্তর করা হবে বলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক মঙ্গলবার দুপুরে জানিয়েছেন৷
বিমানবন্দরে হাজির থেকে স্বাস্থ্যমন্ত্রী নিজেই তা গ্রহণ করবেন৷ ভারত যে উপহারের টিকা পাঠচ্ছে তার চিঠি এসে গেছে৷
স্বাস্থ্যসেবা সচিব আবদুল মান্নান ডয়চে ভেলেকে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বলেন, ‘‘আমরা বিভিন্ন পেশাজীবীদের ছোট ছোট গ্রুপকে এ মাসেই ভ্যাকসিন দেয়ার চিন্তা করছি৷ এর মাধ্যমে একটা অবজার্ভেশনও হবে৷ যেহেতু আমরা আগেই উপহারের ভ্যাকসিন পাচ্ছি, তাই এটা কাজে লাগাতে চাই৷ শুরুটা করতে চাই৷”
তিনি জানান, এই ২০ লাখ ডোজ টিকা তিন কোটি ডোজের চুক্তির বাইরে৷ এটার সাথে চুক্তির কোনো সম্পর্ক নাই৷ এটা অতিরিক্ত৷
তবে তিনি বলেন, এ মাসেই টিকা দেয়া শুরু হলেও মূল টিকা কর্মসূচির সাথে যেন সময়ের পার্থক্য বেশি না হয়, তাহলে অসন্তোষ দেখা দিতে পারে, সেটাও বিবেচনা করা হচেছ৷
বাংলাদেশের নাগরিকদের বিনামূল্যে টিকা দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যসেবা সচিব৷ তবে বেসরকারি উদ্যোগে টিকা আনার কয়েকটি আবেদন আছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে৷ তাদের অনুমতি দেয়া হলে সেই টিকা নাগরিকদের কিনতে হবে বলে জানান তিনি৷
মঙ্গলবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে এক বৈঠক শেষে দুপুরে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘যে শিডিউল আছে তাতে আগামীকাল (বুধবার) টিকা আসবে৷ পরশুদিনও (বৃহস্পতিবার) হতে পারে৷’’
তবে ওই ব্রিফিং-এ উপহারের টিকা নির্ধারিত সময়ের আগেই দেয়া হবে কিনা বা দেয়া হলে কারা পাবেন সে বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানান স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম৷ তিনি বলেন, বুধবার এ নিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের নেতৃত্বে বৈঠক আছে৷ সেখানেই এসব ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে৷
বাংলাদেশে টিকা দেয়ার যে খসড়া পরিকল্পনা প্রকাশ করা হয়েছে তাতে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে যে তিন কোটি ডোজ টিকা কিনছে তার প্রথম চালান আসবে ২১ থেকে ২৫ জানুয়ারির মধ্যে ৷ ২৬ জানুয়ারি থেকে হবে অ্যাপস-এর মাধ্যমে অনলাইনে নিবন্ধন৷ ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহ থেকে টিকা দেয়া শুরু হবে৷ প্রথম চালানের ৫০ লাখ টিকা ৫০ লাখ নাগরিককে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে দেয়া হবে৷
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, ভিআইপিদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে টিকা দেয়ার কোনো পরিকল্পনা নেই৷ বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী শুরুতেই টিকা নিচ্ছেন- বাংলাদেশে এমন হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি সাংবাদিকদের জানান, ‘‘এ ধরনের চিন্তা আপাতত নেই৷ যাদের সবচেয়ে আগে প্রয়োজন, ফ্রন্টলাইনার, তাদের আগে দেবো৷ ডাক্তার, নার্স, পুলিশ প্রথমে পাবেন৷ সাংবাদিকদেরও দেওয়া হবে৷ ভিভিআইপিরা আগে পাবেন না৷’’
কেন্দ্রীয়ভাবে তিনটি জায়গায় ভ্যাকসিন সংরক্ষণ করা হবে৷ মহাখালীর সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির প্রধান কার্যালয়, তেজগাঁর সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির (ইপিআই) নিজস্ব সংরক্ষণাগার ও তেজগাঁর কেন্দ্রীয় ওষুধাগার৷
স্বাস্থ্য মহাপরিচালক জানান, ভ্যাকসিন ‘ওয়াক ইন কুল’ নামে ছোট ঘরের মধ্যে নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করা হবে৷ দেশের ২৯টি জেলায় ওয়াক ইন কুল আছে৷ আরো ১৮টি জেলায় ভ্যাকসিন সংরক্ষণের জন্য ওয়াক ইন কুল তৈরি হচ্ছে৷
এ ছাড়া প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় ‘আইএলআর’ নামের হিমায়িত বাক্সের মধ্যে ভ্যাকসিন সংরক্ষণের ব্যবস্থা আছে৷ ভ্যাকসিন পরিবহন করা হবে আলাদা হিমায়িত বাক্সের৷
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ লেনিন চৌধুরী মনে করেন, ‘‘ভ্যাকসিন দেয়ার আগে দেশের মানুষকে মানসিকভাবে প্রস্তত করা প্রয়োজন৷ কারণ, বিশ্বের যেসব দেশে ভ্যাকসিন দেয়া শুরু হয়েছে, সেখানে কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার ঘটনাও ঘটেছে৷ ভারতেও মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে৷ তাই এসব ব্যাপারে আমাদের নাগরিকদের আগাম মানসিকভাবে প্রস্তুত করা প্রয়োজন৷’’
তিনি বলেন, রেজিষ্ট্রেশনের জন্য অ্যাপটি এখনো প্রস্তুত নয়৷ তাই মাত্র কয়েকদিন আগে রেজিষ্ট্রেশন শুরু করলে কীভাবে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে তালিকা করে ভ্যাকসিন দেয়া হবে সেটা বোঝা বেশ কঠিন৷ আর আগে একটি মহড়া বা ট্রায়াল হওয়া দরকার৷ তার প্রস্তাব- উপহারে ২০ লাখ ডোজ ভ্যাকসিনের একটি অংশ ফ্রন্ট লাইনার স্বাস্থ্যকর্মীদের একটি অংশকে আগে দিয়ে দেখা যেতে পারে৷ আর ভ্যাকসিন দেয়ায় যেন স্বাস্থ্যকর্মী, বিশেষ করে ইপিআই'র কর্মীদের প্রাধান্য থাকে৷ প্রশাসন আইন শৃঙ্খলার বিষয়টি দেখবে৷
প্রসঙ্গত, চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশের তিন কোটি ডোজ ভ্যাকসিন পেতে ৬ মাস লাগবে৷