মঙ্গল শোভাযাত্রা
১৫ এপ্রিল ২০১৩সেই মূলভাব প্রতিবাদের, ভালোবাসার এবং দ্রোহের৷ সেখানে অশুভের বিনাশ কামনা করা হয়৷ প্রার্থনা হয় সত্য এবং সুন্দরের জন্য৷
এই মঙ্গল শোভাযাত্রা প্রথম শুরু হয়েছিল ১৯৮৫ সালের ১লা বৈশাখে যশোরে৷ তখন ছিল দেশে সামরিক স্বৈরশাসন৷ উদ্দেশ্য ছিল দেশের লোকজ সংস্কৃতি উপস্থাপনের মাধ্যমে সব মানুষকে এক করা৷ এক যাত্রায় নিয়ে আসা৷ আর সেই শোভাযাত্রায় অশুভের বিনাশ কামনা করে শুভ শক্তির আগমনের প্রার্থনা করা৷ এই উদ্যোগ নিয়েছিলেন চারু শিল্পী মাহবুব জামাল শামিম৷ তিনি ঢাকার চারুকলা থেকে সর্বোচ্চ ডিগ্রি নিয়ে যশোরেই চারু পিঠ নামে একটি প্রতিষ্ঠান খোলেন তখন৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে জানান, ১লা বৈশাখে এই মঙ্গল শোভাযাত্রার উদ্দেশ্য ছিল দুটি৷ দেশের লোকজ সংস্কৃতিকে তুলে ধরা৷ আর তার মাধ্যমে সবাইকে সত্য এবং সুন্দরের পথে আহ্বান করা৷ তাই তাদের শোভাযাত্রায় স্থান পায় নানা ধরনের চিত্র, হাতে বানানো পাখা, ঘোড়া, হাতি, ঢোল, বাঁশি প্রভৃতি৷ শোভাযাত্রাটি থাকে নান্দনিকতায় পরিপূর্ণ৷
তবে শেষ পর্যন্ত যশোরে সীমাবদ্ধ থাকেনি এই মঙ্গল শোভাযাত্রা৷ ১৯৮৯ সালে ১লা বৈশাখে ঢাকার চারুকলা থেকেও শুরু হয় এই মঙ্গল শোভাযাত্রা৷ আর সেই শোভাযাত্রার মূলভাব ছিল অগণতান্ত্রিক শক্তির বিনাশ৷ মাহবুবু জামাল শামিম জানান, এখন সারা দেশেই এই মঙ্গল শোভাযাত্রা ছড়িয়ে পড়েছে৷ ১লা বৈশাখ বাংলা নববর্ষে মঙ্গল শোভাযাত্রা একটি প্রধান অনুষ্ঠানে পরিণত হয়েছে এবং সারা দেশে একই সময় ১লা বৈশাখ সকাল ১০টায় এই মঙ্গল শোভাযাত্রা বের হয়৷
এবারে ঢাকার চারুকলা থেকে যে মঙ্গল শোভাযাত্রা বের হয় তাতে হাজারো মানুষ অংশ নেন৷ ধর্ম, বর্ণ, নারী-পুরুষ, শিশু নির্বিশেষে সবাই অংশ নেন এই শোভাযাত্রায়৷ শোভাযাত্রার মূল ভাব ‘রাজাকার মুক্ত বাংলাদেশ, মুক্তিযুদ্ধ অনিঃশেষ'৷ এই মূল ভাবকে সামনে রেখেই বর্ণিল আর রঙিন করা হয় শোভাযাত্রাকে৷ বিশাল আকৃতির এক সরীসৃপ আর এর বিপরীতে শান্তির পায়রার প্রতিকৃতি মঙ্গল শোভাযাত্রায় অশুভের বিনাশের কথা বলেছে৷ আর বাংলার রয়েল বেঙ্গল টাগারের দিকে ধেয়ে আসা এক কুত্সিত দানব বলে দিয়েছে দেশের বর্তমান পরিস্থিতি৷ শোভাযাত্রায় হাতি, ঘোড়া, মুখোশ, নানা ধরণের পাখি, সরাচিত্র – সব কিছুই বাঙালির চিরায়ত সংস্কৃতিকে তুলে ধরে৷ শোভাযাত্রায় অংশ নেয়া সব শ্রেণির মানুষ বলেন, এটা তাদের শক্তি দেয়৷ বাঙালি হিসেবে গর্ব করার মত অনুপ্রেরণা দেয়৷
ঢাকায় এই মঙ্গল শোভাযাত্রার আয়োজন করে চারুকলা ইন্সটিটিউট৷ বরাবরের মতো এবারও শোভাযাত্রার আয়োজন, নানা ধরণের চিত্র, প্রতিকৃতি, মুখোশ তৈরি করেছেন চারুকলার ছাত্র এবং শিক্ষকরা প্রাণের টানে, স্বেচ্ছা শ্রমে৷