মঙ্গলে যাওয়ার রকেটের নকশা দেখালো নাসা
২৫ সেপ্টেম্বর ২০১১ক'দিন আগে শেষ হয়েছে নাসার শাটল কর্মসূচি৷ এরপর থেকে গর্ব করার মতো আর কিছু নেই নাসার৷ আন্তর্জাতিক মহাকাশ কেন্দ্র আইএসএস'এ নিজেদের নভোচারী পাঠাবে তাও নির্ভর করতে হচ্ছে অন্যের উপর৷ এমন পরিস্থিতে অবশেষে একটা সুখবর নিয়ে এলো নাসা৷ সংস্থাটি বলছে এবার তাদের লক্ষ্য এমন জায়গায় যেখানে যেতে পারেনি বিশ্বের আর কেউ৷
কী সেটা? নাসা বলছে তারা একটি রকেট তৈরি করতে যাচ্ছে যেটা মানুষকে নিয়ে যাবে অনেকদূর৷ সেটা মঙ্গলগ্রহও হতে পারে৷ যেখানে কেবল যেতে পেরেছে মনুষ্যবিহীন যান৷ সম্প্রতি এই রকেটের নকশা মার্কিন শীর্ষ কর্মকর্তাদের সামনে দেখিয়েছে নাসা৷ এসময় সংস্থার অন্যতম এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জেনারেল চার্লস বোল্ডেন বলেন, অ্যামেরিকার মহাকাশ গবেষণার ইতিহাসে নতুন এক যুগের সূচনা হলো৷ তিনি বলেন, প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা আমাদেরকে বড় স্বপ্ন দেখার কথা বলেছেন৷ এসএলএস'এর নকশা সেই বড় কিছুরই একটা অংশ৷ নিজের অভিজ্ঞতা উল্লেখ করে নাসার ঐ কর্মকর্তা বলেন, ‘‘আমরা স্পেস শাটলে চড়ে গর্ব অনুভব করতাম আর ভবিষ্যতের নভোচারীরা মঙ্গলে হাঁটার স্বপ্ন দেখতে পারে৷''
এবার জানবো কী এই এসএলএস? এটা হচ্ছে একটা রকেট যেটা কোনো নভোযানকে মহাকাশের গভীরে নিয়ে যাবে৷ বর্তমানে মানুষ নভোযানে করে আইএসএস পর্যন্ত যেতে পারে, যেটার অবস্থান লোয়ার আর্থ অর্বিট মানে নিম্ন কক্ষপথে৷ নাসা বলছে, এসএলএস হবে অ্যামেরিকার সবচেয়ে শক্তিশালী রকেট৷ এমনকি সেটা ‘স্যাটার্ন ৫' রকেটের চেয়েও শক্তিশালী হবে, যেটা চাঁদে যাওয়া ‘অ্যাপোলো' যানকে বহন করেছিল৷
এসএলএস রকেটের উপরে ‘অরিয়ন' ক্যাপসুলকে বসানোর পরিকল্পনা করছে নাসা, যে ক্যাপসুলে থাকবেন নভোচারীরা৷ ইতিমধ্যে অরিয়ন প্রায় তৈরিই হয়ে আছে৷ চাঁদে যাবার জন্য এটি তৈরি করা হচ্ছিল৷ কিন্তু পরবর্তীতে বাজেট সমস্যার কারণে প্রেসিডেন্ট ওবামা সেই পরিকল্পনা বাতিল করে দিয়েছিলেন৷ অরিয়নে আপাতত ৭০ টনের মতো জিনিস নেয়া যাবে বলে জানাচ্ছে নাসা, যেটা ভবিষ্যতে ১৩০ টন পর্যন্ত হতে পারে৷ ফলে মহাকাশে একসঙ্গে অনেক কিছু নেয়া যাবে বলে আশা করছেন নাসার বিজ্ঞানীরা৷ উল্লেখ্য, বর্তমানের সবচেয়ে বড় লঞ্চ ভেহিকল যেমন ‘অ্যারিয়ান ৫' বা ‘ডেল্টা ৫' ২০ টনের বেশি মাল নিতে পারেনা৷
এসএলএস'এর নকশার অনেকটা স্পেস শাটল থেকে ধার করা হয়েছে বলে জানালেন জর্জ ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটির স্পেস পলিসি ইনস্টিটিউটের প্রাক্তন পরিচালক জন লগসডন৷ যেমন হাইড্রোজেন ও অক্সিজেন চালিত শাটলের ক্রিয়োগেনিক ইঞ্জিন ব্যবহার করবে এসএলএস৷
এবার নতুন এই রকেটকে নিয়ে নাসার পরিকল্পনার খবর৷ ২০১৭ সালে মনুষ্যবিহীন অবস্থায় একটা পরীক্ষামূলক ফ্লাইট চালানোর কথা ভাবা হচ্ছে৷ আর ২০২৫ সালে কোনো এক গ্রহে মিশন পরিচালনা করার কথা বলছে নাসা৷ তবে মঙ্গলগ্রহে মানুষ পাঠাতে ২০৩০ সাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হতে পারে৷
যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে চলছে বাজেট কমানোর ঘটনা৷ এরই মধ্যে এরকম একটা ব্যয়বহুল প্রকল্প হাতে নিতে পেরেছে নাসা৷ কারণ এটা অনেকের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করবে৷ এছাড়া মহাকাশ গবেষণায় অ্যামেরিকার কর্তৃত্ব বজায় রাখবে৷ আর বিষয়টা অনুপ্রাণিত করবে পৃথিবীর অনেককেই৷
তাই মার্কিন কংগ্রেস নাসার এই প্রকল্পকে স্বাগত জানিয়েছে৷ কেননা তারা মনে করছিলেন যে, শাটল কর্মসূচি বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর নাসায় অনেকে বেকার হয়ে পড়েছিলেন৷ এছাড়া নাসা যেন দিকনির্দেশনাহীন হয়ে পড়েছিল৷
বাজেটের ব্যাপারে নাসা বলছে, তারা শাটল কর্মসূচি বন্ধ করে দেয়ায় যে অর্থ বেঁচে যাবে সেটা কাজে লাগাবে এসএলএস প্রকল্পে৷ অর্থাৎ বিষয়টা এরকম - নিম্ন কক্ষপথে যাওয়ার জন্য যান তৈরি করবে বেসরকারি কোম্পানি আর তার চেয়ে দূরে যাওয়ার জন্য মহাকাশযান বানাবে নাসা৷ এভাবেই পুরো মহাকাশে রাজত্ব করতে চায় যুক্তরাষ্ট্র!
প্রতিবেদন: জাহিদুল হক
সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক