মজাদার, লোভনীয় যত পিঠা
পিঠা বাংলার নিজস্ব এক সংস্কৃতি৷ আমাদের দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন রকমের পিঠা দেখা যায়৷ গ্রামাঞ্চলে সাধারণত নতুন ধান তোলার পর থেকেই পিঠা তৈরির ধুম লাগে৷ নানা ধরনের পিঠা নিয়ে আমাদের এই বিশেষ ছবিঘর...
ভাপা পুলি
পুর ভরা থাকে এবং ভাপ দিয়ে তৈরি হয় বলে এ পিঠার নাম ভাপা পুলি পিঠা৷ পুর হিসেবে পছন্দ অনুযায়ী নারকেল, ক্ষীর বা ঝালযুক্ত উপকরণ দেয়া হয়৷ রুটি তৈরি করে চাঁদের মতো করে কাটা হয় বলে একে চন্দ্রপুলি পিঠাও বলা হয়৷
ডিম সুন্দরী
চালের গুঁড়ার সাথে ভাজা ডিম চুবিয়ে পরতে পরতে ভাজা হয়৷ সুন্দর ঘ্রাণের জন্য এলাচ-দারচিনির গুঁড়াও মিশানো হয় এতে৷ কুমিল্লা, ব্রাক্ষণবাড়িয়া অঞ্চলে এ পিঠাটির প্রচলন বেশি৷
পোয়া/তেলে
সবচেয়ে পরিচিত, সহজ ও দ্রুত তৈরি করা যায় এই পিঠা৷ ফলে শীত-গ্রীষ্ম সারা বছরই এর চাহিদা বেশি থাকে৷ চালের গুঁড়ার সাথে খেজুর বা আখের গুড় মিশিয়ে গোলা তৈরি করে ডুবো তেলে ভেজে এ পিঠা তৈরি করা হয়৷ কখনো কখনো এতে নারকেলও মিশানো হয়৷
মুগ পাক্কন
মুগের ডালের সাথে চালের গুঁড়া ও নারকেল মিশিয়ে কাই তৈরি করে বিভিন্ন আকৃতিতে কাটা হয়৷ তারপর তেলে ভেঁজে পিঠাটিকে চিনি বা গুড়ের সিরায় চুবিয়ে খাওয়া হয় ৷
নকশি পিঠা
কোনো পিঠার উপর যখন নকশা করা হয়, তখন তাকে নকশি পিঠা বলে৷ খেজুর কাঁটা, খোঁপার কাঁটা, সুচ, পাটকাঠি, খড়কা ইত্যাদির সাহায্যে হাতে দাগ কেটে-কেটে নকশা তোলা হয়৷ হাতের পরিবর্তে ছাঁচের সাহায্যেও এ নকশা তৈরি করা যায়৷
মেরা বা হাতমুঠি
এটিকে শীতকালীন পিঠাও বলা যেতে পারে৷ হেমন্তে নতুন ধানের চালের গুঁড়া দিয়ে তৈরি করা হয় বলে এ পিঠার স্বাদই হয় অন্যরকম৷ মূলত চালের গুঁড়াকে পানিতে মিশিয়ে তা প্রয়োজনমতো সিদ্ধ করে কাই বানানো হয়৷ এ কাইকে ছোট ছোট বিভিন্ন আকৃতি দিয়ে তা আবার সিদ্ধ করে নেয়া হয়৷ কেউ কেউ আবার এতে চিনি বা গুড়ও মেশান৷
ভাপা পিঠা
শীতকালীন এ পিঠাটি মূলত চালের গুঁড়া দিয়ে তৈরি করা হয়৷ ছোট বাটিতে প্রথমে মাখানো চালের গুঁড়ার সাথে নারকেলের গুঁড়া ও খেজুর গুড় বাটিতে রাখা হয়৷ এরপর বাটির মুখ পাতলা কাপড় দিয়ে মুড়ে ফুটন্ত হাঁড়ির ছিদ্রতে বসিয়ে এ পিঠাটি তৈরি করা হয়৷ তবে গুড় ও নারিকেলের পরিবর্তে কেউ কেউ চালের গুঁড়ার সাথে শুধু ধনে পাতা মিশিয়েও এটি তৈরি করে থাকেন৷
মালপোয়া
মালাই ও চালের গুঁড়া মিশিয়ে তৈরি করা হয় এই পিঠা৷ তবে সাধারণ পোয়া পিঠার মতো ফুলকো থাকে না৷ ভীষণ নরম ও খেতে সুস্বাদু হয় পিঠাটি৷
ঝাল পাক্কন
স্বাদে ঝাল বলে একে বলা হয় ঝাল পাক্কন পিঠা৷ চালের গুঁড়ার সাথে, ডিম, কাঁচা মরিচ, ধনে পাতা, পিয়াজ ইত্যাদি মিশিয়ে কাই তৈরি করা হয়৷ তারপর পছন্দ অনুযায়ী কেটে তেলে ভেজে এ পিঠাটি তৈরি করা হয়৷
লবঙ্গলতিকা
লবঙ্গ দিয়ে এ পিঠাটির উপর গাঁথুনি দেয়া হয় বলে একে বলা হয় লবঙ্গলতিকা পিঠা৷ মিষ্টি স্বাদের এ পিঠাটির ভেতরে থাকে নারকেলেন পুর৷ চিনির শিরায় ডুবিয়ে পিঠাটির উপরে দেয়া হয় চিনির প্রলেপ৷
খোলা জালি
চালের গুঁড়ার সাথে ডিম আর প্রয়োজন মতো লবন মিশিয়ে মাটির খোলায় এ পিঠা তৈরি করা হয় বলে এর নাম খোলা জালি পিঠা৷ কুমিল্লা, ব্রাক্ষণবাড়িয়া ও বিক্রমপুর এলাকায় পিঠাটির প্রচলন বেশি৷
চন্দ্রপুলি
এ পিঠাটি বাংলাদেশের প্রায় সব অঞ্চলেই জনপ্রিয়৷ নারকেলের গুঁড়া, দুধ, সুজি, এলাচের গুঁড়া ও বাদাম ইত্যাদি মিশিয়ে তৈরি করা হয় এ পিঠাটি৷
চিতই
মূলত শীত কালে এ পিঠাটি বেশ জনপ্রিয়৷ বাংলাদেশ এবং পশ্চিমবঙ্গে এ পিঠার জনপ্রিয়তা রয়েছে৷ চালের গুঁড়া দিয়ে পাতলা ‘কাই’ বানিয়ে খোলায় সেঁকে এ পিঠাটি তৈরি করা হয়৷বিভিন্ন রকমের ভর্তা দিয়ে শীতকালে এ পিঠা খাওয়া হয়৷
দুধ পুলি/দুধ চিতই
দধে চুবিয়ে তৈরি করা হয় বলে এর নাম দুধ পুলি পিঠা৷ চালের গুঁড়ার কাই দিয়ে ছোট ছোট রুটি বানানো হয়৷ তারপর নারকেলের পুর দিয়ে রুটিকে এঁটে দিয়ে জাল দিয়ে রাখা দুধে মিশিয়ে সামান্য আগুনের আঁচে প্রয়োজনমতো জ্বাল দিয়ে তৈরি করা হয় সুস্বাদু এ পিঠাটি৷ একই পদ্ধতিতে বানানো হয় দুধ চিতইও৷
চাপড়ি/চাপটি
বাংলাদেশের প্রায় সব অঞ্চলের ভীষণ পরিচিত পিঠা চাপড়ি বা চাপটি৷ চালের গুঁড়ার সঙ্গে ঝাল মশলা মিশিয়েই গোলা তৈরি করে তাওয়ায় পাতলা করে ভাজা হয় এই পিঠা৷ মাংস বা সবজি তরকারি দিয়ে এই চাপটি খাওয়া হয়৷ কোথাও কোথাও চাপড়ি বানানোর সময়েই মাংস তরকারি বা সবজি মিশিয়ে বানানো হয়৷
বাহারি চিতই
শুধু চালের গুঁড়া আর লবণ দিয়েই চিতই বানানো হয়৷ এরপর সেই চিতই দুধে ভিজিয়ে কিংবা তরকারি দিয়ে খাওয়া হয়৷ তবে অনেক স্থানেই চিতই গোলানোর সময় ইচ্ছামতো মাংস, সবজি ও ডিম দেওয়ার রেওয়াজ আছে৷ এটি বাহারি চিতই নামে পরিচিত৷
বিবিখানা
দেখতে কেকের মতো এ পিঠাটি চালের গুঁড়া, লবণ, ঘন দুধ, ঘি ও নারকেলের গুঁড়া দিয়ে তৈরি৷ বিক্রমপুরে এ পিঠাটির প্রচলন বেশি৷