কাম্বোডিয়ায় রক্তাক্ত বিক্ষোভ
৯ জানুয়ারি ২০১৪লাঠিসোঁটা ও পেট্রোল বোমা নিয়ে শ্রমিকরা বিক্ষোভে নামেন৷ বিক্ষোভ দমন করতে নিরাপত্তা বাহিনীও সর্বশক্তি প্রয়োগ করে৷ গুলিতে মারা গেছেন তিন জন৷ আহত হয়েছেন অনেকে৷ ঘটনাটি ঘটেছে রাজধানী নম্পেনে৷
দ্বিগুণ বেতনের দাবি
গার্মেন্টস শ্রমিকদের দাবি, তাঁদের মাসিক বেতন দ্বিগুণ করে ১৬০ মার্কিন ডলার করতে হবে৷ এ কারণে ডিসেম্বরের মাঝামাঝি থেকে হাজার হাজার শ্রমিক রাস্তায় বের হন, প্রতিবাদে ফেটে পড়েন৷ সরকার ২৫ শতাংশ বেতন বাড়ানোর আশ্বাস দিয়েছে৷ শ্রমিক ইউনিয়ন ও ভুক্তভোগীরা এটাকে নিতান্ত কম বলে মনে করেন৷
শ্রমিক অসন্তোষের কারণে অনেক কারখানা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে৷ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দরিদ্র এই দেশটি এ কারণে আর্থিক সমস্যার মুখে পড়ছে৷ পোশাক শিল্প বৈদেশিক মুদ্রার এক বড় উৎস৷ প্রায় পাঁচ লাখ মানুষ এই শাখায় কর্মরত৷ বেশিরভাগই আন্তর্জাতিক টেক্সটাইল ব্র্যান্ড গ্যাপ, নাইকি এবং এইচঅ্যান্ডএম-এর জন্য পোশাক তৈরি করেন৷
পরিস্থিতি আরো জটিল হয়ে উঠেছে এই কারণে যে, বিষয়টি শুধু মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে শ্রমিক অসন্তোষেই সীমাবদ্ধ নয়, এটি সরকার ও বিরোধী দলের মধ্যে এক শক্তির লড়াই ও বটে৷
শান্তিপূর্ণ মিছিলের আহ্বান
বিরোধী দলের প্রধান স্যাম রেইনসি শান্তিপূর্ণ মিছিলের আহ্বান জানিয়েছিলেন৷ তাঁর মতে প্রধানমন্ত্রী হুন সেন-এর সরকার অবৈধ৷ তিনি তাঁর বিরুদ্ধে নির্বাচনি প্রতারণার অভিযোগ আনেন৷ পোশাক শ্রমিকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘‘হুন সেনকে আমাদের দাবি দাওয়া শুনতে হবে৷ তিনি কাম্বোডিয়ার জনতার ইচ্ছার বিরুদ্ধে কিছু করতে পারবেন না৷''
এই কথাগুলি পোশাক কর্মী টাচ-এর কাছে বিশ্বাসযোগ্য মনে হয়েছে৷ বছর দশেক ধরে তিনি কাজ করছেন অ্যামেরিকান কোম্পানি লেভি স্ট্রাউস-এর জন্য৷ মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে তিনিও রাস্তায় নেমেছেন৷ তাঁর ও স্বামীর উপার্জনের টাকায় রাজধানীতে দুই ছেলে নিয়ে সংসার চালানো কষ্টকর৷
টাচ দুটি লক্ষ্য নিয়ে প্রতিবাদে নেমেছেন, ‘‘প্রথমত: তাঁদের ন্যূনতম মজুরি ১৬০ ডলার করতে হবে৷ দ্বিতীয়ত: প্রধান মন্ত্রী হুন সেনকে পদত্যাগ করতে হবে৷''
ঐক্যমতে পৌঁছানো যায়নি
অবশ্য সরকার ও শ্রমিক সমিতিগুলির মধ্যে কয়েকবার আলাপ আলোচনা হলেও ঐক্যমতে পৌঁছানো সম্ভব হয়নি৷ সে পর্যন্ত গার্মেন্টস কারখানার অনেকগুলি বন্ধ থাকবে৷ এই পরিস্থিতিতে এটা সম্ভবও নয়৷ জানিয়েছে পোশাক উৎপাদানকারীদের সংগঠন জিএমএসি৷
সংগঠনটি বিরোধী দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছয়টি শ্রমিক সমিতিকে এই ব্যাপারে দোষারোপ করে বলেছে তারা শ্রমিকদের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে এবং কারখানাগুলিকে ধ্বংস করছে৷ জিএমএসি অবশ্য শ্রম মন্ত্রণালয়েরও সমালোচনা করে বলেছে এটি শ্রমিকদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না৷ ‘‘আমরা চাই মন্ত্রণালয় ও শ্রমিক সমিতিগুলি আমাদের সম্পদ রক্ষা করবে এবং কাজ করতে ইচ্ছুক শ্রমিকদের নিরাপত্তা দেবে৷'' এই সব দাবি পূরণ হলেই কেবল তারা সরকার ও শ্রমিক সমিতিগুলির সঙ্গে আলাপ আলোচনা আবার চালাবেন৷
নিজস্ব প্রতিবাদ বিক্ষোভ
সরকার ঘেঁষা শ্রমিক সমিতিগুলি জানিয়েছে, আগামীতে তারা নিজস্ব প্রতিবাদ বিক্ষোভের আয়োজন করবে৷ তাদের মতে পোশাক শ্রমিকদের সবাই এই লড়াই সমর্থন করেন না৷ তাদের ভাষায়, ‘‘বিনিয়োগকারীরা কিংবা কারখানার মালিকরা গার্মেন্টস শাখা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলে বিরোধী দলের প্রতিনিধিরা অনাহারে থাকবেন না বরং শ্রমিকরাই হবেন ক্ষুধার শিকার৷''
বেসরকারি সংস্থা, কাম্বোডিয়ার মানবাধিকার কেন্দ্রের প্রসিডেন্ট ওউ ভিরাক বলেন, ‘‘অনেক কাম্বোডিয়ানই এখন দুর্নীতিপরায়ন সরকারের বিরুদ্ধে আর বেশিদিন মুখ বন্ধ করে রাখতে চাইছেন না৷ আমার মতে এটা ভালোই৷''
একই কাঠামোর দাবি
বিরোধী দলের উচিত হবে এই আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া৷ এতে শক্তিশালী অবস্থানে থেকে তারা দাবি আদায়ের ব্যাপারে আলাপ-আলোচনা করতে পারবে৷ তবে তাদের দাবিগুলিও একটা কাঠামোর মধ্যে থাকতে হবে৷ বিরোধী দলের নেতা যদি শ্রমিকদের আহ্বান করেন, ন্যূনতম মজুরি ১৬০ ডলার করা না হলে অনির্দষ্ট কালের জন্য ধর্মঘট চালিয়ে যেতে হবে, তাহলে তা বিনিয়োগকারীদের মনে ভীতির সঞ্চার করতে পারে৷
অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রী হুন সেনকে এটাও বুঝতে হবে যে, তার জনপ্রিয়তা তেমন উঁচুতে নয়৷ তাঁর উচিত হবে ‘প্রস্থানের কৌশল' নিয়ে ভাবা এবং একজন যোগ্য উত্তরাধিকারী খোঁজা৷ এটা সফল হলে সরকারি দল সিপিপি সত্যিকারের কিছু সংস্কার সাধন করতে পারবে৷