ফের ‘ম্যার্স’ আতঙ্ক
৩০ এপ্রিল ২০১৪২০১২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ধরা পড়ার পর, শুধুমাত্র সৌদি আরবেই অন্তত ৩২৩ জন এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন৷ মিশর, সংযুক্ত আরব আমিরাত, জর্ডান, কুয়েত, এমনকি মধ্যপ্রাচ্যের কাছাকাছি উত্তর আফ্রিকা ও এশিয়ার কয়েকটি দেশেও ম্যার্সের সংক্রমণ ধরা পড়েছে৷
বলা বাহুল্য, এ রোগের কোনো প্রতিষেধক এ পর্যন্ত তৈরি করা যায়নি৷ তাই আতঙ্ক বেড়েই চলেছে৷ যুক্তরাষ্ট্রের গবেষকরা অবশ্য দাবি করেছেন যে, ম্যার্সের টিকা তৈরির কাজে অনেকটা এগিয়েছেন তাঁরা৷
ম্যার্স করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটলে টানা কয়েকদিন ধরে জ্বর, শ্বাসকষ্ট, কাশি এবং নিউমোনিয়ার মতো উপসর্গ দেখা দিতে পারে৷ কখনো কখনো অকেজো হয়ে যেতে পারে কিডনি৷ সৌদি আরবের রিয়াদ, জেদ্দা ও দাম্মানে তিনটি বিশেষায়িত হাসপাতালে এ রোগে আক্রান্তদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছ কর্তৃপক্ষ৷
কেবল জেদ্দা শহরে গত এক মাসে ম্যার্স সংক্রমণের হার বেড়েছে ৪৭ শতাংশ৷ এছাড়া সেখানে নতুন করে যাঁরা এ রোগে আক্রান্ত হয়েছেন, তাঁদের একটি বড় অংশ স্বাস্থ্যকর্মী৷ তাছাড়া, এ রোগে আক্রান্তদের মৃত্যুর হার ৪০ শতাংশেরও বেশি৷ তাই অন্য শহর থেকে যাঁরাই জেদ্দা আসছেন, তাঁদের মুখে দেখা যাচ্ছে সাদা ‘পেপার মাস্ক'৷ ওদিকে আতঙ্ক বাড়তে থাকায় পদত্যাগ করতে হয়েছে সৌদি আরবের স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে৷
জেদ্দার একটি হাসপাতালের সাবেক নার্স লামিয়া গাজ্জাজ বলেন, ‘‘আমার বন্ধু, প্রতিবেশী, আত্মীয়-স্বজন, আমি যাঁদের চিনি – সকলেই আসলে অন্ধকারে আছি৷ সবার মধ্যে অনেক ‘কনফিউশন'৷ অনেকেই তাঁদের বাচ্চাকে ঘর থেকে বের হতে দিচ্ছে না৷ অনেকে প্রয়োজন থাকার পরও হাসপাতালে যেতে ভয় পাচ্ছে৷''
রাওলা নামে ৩৫ বছর বয়সি এক তরুণী বলেন যে, তার পরিচিত মহলেও ম্যার্স আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে৷
‘‘আমার এক বন্ধুর চাচা হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পরপরই মারা গেছেন৷ কিন্তু ভয়ে আমি তাঁকে শেষবার দেখতেও যাইনি, যদি আমার মধ্যেও সংক্রমণ ঘটে...৷''
ম্যার্স সংক্রমণের আতঙ্ক আরো বাড়িয়ে দিচ্ছে ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে আসা বিভিন্ন মন্তব্য ও গুজব৷ বলা হচ্ছে – সরকার ম্যার্সে আক্রন্ত রোগীর যে সংখ্যা প্রকাশ করেছে, পরিস্থিতি তার চেয়ে অনেক বেশি খারাপ৷ সংক্রমণ ঠেকাতে সব হাসপাতালে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নাকি নেয়া হয়নি৷ সরকার অনেক বিষয় আড়াল করছে বলেও অভিযোগ করেছেন কেউ কেউ৷
ম্যার্স ছড়িয়ে পড়ার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ইতোমধ্যে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে৷ ঠিক কীভাবে এ রোগ ছড়াচ্ছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা তা বলতে না পারলেও উটের মাধ্যমে এটা মানুষের দেহে সংক্রমিত হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করেছন বিশেষজ্ঞরা৷
মূলত ঘনবসতিপূর্ণ এলাকাতেই ম্যার্সের প্রকোপ বেশি৷ এছাড়া শরীরের সংস্পর্শ, হাঁচি বা কাশির মাধ্যমেও এ রোগ মানুষ থেকে মানুষে ছড়াতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে৷
ম্যার্সের জন্য দায়ী ভাইরাস এসেছে সার্স ভাইরাসের গোত্র থেকে, যে রোগে ২০০২ সালের পর থেকে অন্তত ৮০০ লোকের মৃত্যু হয়েছে৷ তবে ম্যার্স তুলনামূলকভাবে কম সংক্রামক বলেই এখন পর্যন্ত মনে করা হচ্ছে৷
জেকে/ডিজি (রয়টার্স, এএফপি)