1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মধ্যপ্রাচ্যের আঁচ ভারতেও পড়বে

অনিল চট্টোপাধ্যায়, নতুনদিল্লি৯ জুন ২০১৭

সন্ত্রাসে মদদ দেয়ার অভিযোগে কাতারের সঙ্গে সৌদি আরবসহ সাতটি পশ্চিম-এশীয় দেশ কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করেছে৷ বিমান, স্থল ও জলপথে যোগাযোগ বন্ধ৷ আটকা পড়েছে ঐসব দেশে কর্মরত লক্ষ লক্ষ ভারতীয় শ্রমিক৷

https://p.dw.com/p/2ePyb
Arbeiter Doha
ছবি: picture-alliance/dpa

কৌশলগত এবং নিরাপত্তার দিক থেকে পশ্চিম এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে ভারতের স্বার্থ জড়িত বিভিন্ন কারণে৷ ‘শিয়াপন্থি' কাতার এবং তাদের ঘনিষ্ট ইরানের বিরুদ্ধে সৌদি আরবসহ সুন্নি প্রধান সাতটি দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাত, মিশর, বাহরাইন, লিবিয়া, ইয়েমেন ও মালদ্বীপ সংঘাতে নেমেছে৷ ছিন্ন করেছে কূটনৈতিক সম্পর্ক৷ স্থলপথে, জলপথে এবং বিমানপথের সব যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন৷ অভিযোগের কেন্দ্রবিন্দু– সন্ত্রাস৷ কাতার নাকি সন্ত্রাসে মদত দিয়ে চলেছে৷ তারসঙ্গে হাত মিলিয়েছে ইরান৷ এই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে কাতার৷ এই সংঘাতে পরিস্থিতি ক্রমশই উত্তাল হয়ে উঠছে৷ এই উত্তাপের আঁচ ভারতের উপর কতটা পড়তে পারে সেই নিয়ে দিল্লির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চলেছে শলাপরামর্শ৷

পরিস্থিতির দিকে সবসময় নজর রাখতে বলা হয়েছে পশ্চিম এশীয় দেশগুলোর ভারতীয় রাষ্ট্রদূতদের৷ বলা হয়েছে, পরিস্থিতির হাল-হকিকত সম্পর্কে রিপোর্ট পাঠাতে৷ 

আরব দেশগুলোর এই বিবাদে ভারতের অবস্থান কী হবে ? পররাষ্ট্র মন্ত্রী সুষমা স্বরাজ খোলসা করে বলেছেন, ‘‘এই পরিস্থিতিতে ভারত নিজেকে জড়াতে চায় না৷ কারণ, এটা আরব দেশগুলির নিজস্ব বিষয়, উপসাগরীয় সহযোগিতা পরিষদের অভ্যন্তরীন বিষয়৷ দ্বিতীয়ত, ঐসব দেশের সঙ্গে ভারতের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক হৃদ্যতাপূর্ণ৷

অধ্যাপক ইমন কল্যান লাহিড়ি

কাজেই একটা সমদূরত্ব বজায় রেখে চলতে চায় ভারত৷'' তবে এই মুহূর্তে দিল্লির প্রধান চিন্তা ঐসব দেশে কর্মরত ভারতীয়দের নিরাপত্তা এবং দরকার হলে তাঁদের দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করা৷ দরকার হলে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী এম.জে আকবরকে পাঠানো হতে পারে৷

শুধু কাতারেই আটকা পড়েছেন প্রায় সাড়ে ছয় লাখ ভারতীয়৷ কাতার ভারতীয় যাত্রীদের জন্য একটা বড় ট্রানজিট রুট৷ কাতার হয়েই বেশির ভাগ ভারতীয় যাত্রী ইউরোপ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যান৷ তাঁদের টিকিট আগে থেকে বুক করা ছিল তাঁদের টিকিট বাতিল করে ঘুরপথে যেতে হবে, তাতে খরচ পড়বে অনেক বেশি৷ বর্তমান অবস্থায় উপসাগরীয় ৬টি এয়ারলাইন্স কাতার থেকে তাদের ফ্লাইট বা উড়ান স্তগিত রেখেছে৷

আরব দেশগুলির মধ্যে সংঘাত প্রসঙ্গে ভারতের উপর এর অভিঘাত কী এবং কতটা হতে পারে সে সম্পর্কে জানতে চাইলে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ইমন কল্যান লাহিড়ি ডয়চে ভেলেকে বললেন, ‘‘ভারতের মতো বড় রাষ্ট্রের পক্ষে জাতীয় স্বার্থ সুরক্ষিত রাখাই প্রধান বিবেচ্য৷ বহু ভারতীয় শ্রমিক মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে কর্মরত৷ তাঁদের জানমাল এবং আর্থিক নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করাই মোদী সরকারের প্রথম এবং প্রধান দায়িত্ব৷

অর্থাৎ কর্মসংস্থানের জায়গাটা সুরক্ষিত রাখা দরকার৷ বহু ভারতীয় কর্মসূত্রে সব দেশে গিয়ে সমস্যায় পড়েছে, তাঁদের পাসপোর্ট কেড়ে নেওয়ার মতো বহু ঘটনা ঘটেছে৷ সত্যি বলতে কি, কাতার যেমন বলতে পারে না সে সন্ত্রাসবাদকে একেবারেই মদদ দিচ্ছে না, তেমনি সৌদি আরবসহ পশ্চিম এশিয়ার অন্য দেশগুলোও জোর গলায় বলতে পারে না সন্ত্রাসবাদের প্রতি তাদের প্রচ্ছন্ন সমর্থন নেই৷ কাজেই এইসব দূরে সরিয়ে রেখে আপাতত ভারতীয়দের কর্মসংস্থানের জায়গাটা সুরক্ষিত রাখার পাশাপাশি একটা নিরপেক্ষ ভূমিকা নিয়ে দিল্লির উচিত সন্ত্রাসবাদের নিন্দা করা৷''

ভারত সৌদি আরব এবং ইরানের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে চলায় বিশ্বাসী৷ ইরানের উপর সাম্প্রতিক সন্ত্রাসী হামলায় পররাষ্ট্র মন্ত্রী সুষমা স্বরাজ ফোনে কথা বলেন ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রী মোহাম্মদ জাভেদ জারিফের সঙ্গে৷

অন্যদিকে আরব দেশগুলির মধ্যে সংঘাতের আঁচ ভারতের অর্থনৈতিক ক্ষেত্রের উপরও পড়বে৷ উপসাগরীয় দেশগুলো ভারতের জ্বালানি সরবরাহের প্রধান ভরসা৷ কাতার ভারতের তরল প্রাকৃতিক গ্যাসের ৭৫ শতাংশ চাহিদা পূরণ করে৷ অশোধিত তেল আসে মূলত সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরশাহী থেকে৷ কাজেই এই সরবরাহ লাইন ব্যাহত হলে মার খাবে ভারতের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড৷ আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের এবং গ্যাসের দাম বাড়বে এবং বেড়েছে৷ কাতার ও পশ্চিম এশীয় দেশগুলির সঙ্গে ভারতের দ্বিপাক্ষিক ব্যবসা বাণিজ্য মার খাবে৷ শুধু কাতারের সঙ্গে ভারতের আমদানি-রপ্তানির পরিমাণ বছরে ১৮০০ কোটি ডলার৷ অতীতে উপসাগরীয় যুদ্ধ, লিবিয়া-ইয়েমেন সংঘর্ষের সময় ভারত পড়েছিল তীব্র জ্বালানি সংকটে৷ কূটনৈতিক মহলের মতে, এই সংকট সৃষ্টির পেছনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যেমন প্রভাব আছে, তেমনি এর সমাধানেও যুক্তরাষ্ট্র প্রভাব খাটাতে পারে৷