মধ্যবর্তী নির্বাচনের সম্ভাবনা ক্ষীণ
২৫ জানুয়ারি ২০১৪
প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতা এবং মন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বৃহস্পতিবার স্পষ্ট করেই বলেছেন যে, পাঁচ বছরের আগে নির্বাচন এবং বিএনপির সঙ্গে সংলাপ কোনোটাই হবে না৷ এর আগে একাধিক মন্ত্রী বার বার বলেছেন, ৫ই জানুয়ারির নির্বাচনের মাধ্যমে এই সরকার পাঁচ বছরে জন্য ক্ষমতায় এসেছে৷ এমনকি জাতীয় পার্টির নির্বাচিত সংসদ সদস্যরাও মনে করেন যে, তাঁরা পাঁচ বছরের জন্য নির্বাচিত হয়েছেন৷ এছাড়া নির্বাচনের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংবাদ সম্মেলনে বলেন, যখন নির্বাচন হবে তখন আলোচনা হবে৷ তিনি আলোচনার জন্য জামায়াতের সঙ্গ ত্যাগ করার জন্য বলেছেন বিএনপিকে৷
এদিকে নির্বাচনের পর বিদেশি কূটনীতিকরা আলোচনা এবং সমঝোতার কথা বললেও, বিএনপিকে সহিংসতা ছাড়ার কথাও বলেছেন তাঁরা৷ কিন্তু তার পরেও, নতুন সরকার যে আন্তর্জাতিক চাপের মুখে পড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছিল তা আপাতত বাস্তবতা পায়নি৷ ৫ই জানুয়ারির নির্বাচনের বিরুদ্ধে সবচেয়ে উচ্চকণ্ঠ যাঁরা ছিলেন, তাঁরাও সরকারের সঙ্গে সহযোগিতার সম্পর্ক বজায় রাখার ঘোষণা দিয়েছেন৷ এমনকি কোনো ধরণের অর্থনৈতিক অসহযোগিতার লক্ষণও দেখা যাচ্ছে না, যা নতুন সরকারকে স্বাভাবিকভাবেই উজ্জীবিত করেছে৷ তাই তারাও কূটনৈতিক তত্পরতা জোরদার করেছে৷ আর ভারত, রাশিয়াসহ বেশ কিছু দেশ সরকারের সরাসরি পক্ষেই আছে৷
ওদিকে বিএনপি তার আন্দোলনের কৌশল পরিবর্তন করেছে৷ তারা জামায়াতের সঙ্গে এক ধরণের দূরত্ব বজায় রাখছে৷ সহিংসতার সুযোগ আছে এমন ধরণের সরকারবিরোধী কর্মসূচি থেকে আপাতত বিরত আছে দলটি৷ তারা আগামী ছয় মাস এভাবেই চলবে বলে জানা গেছে৷ বিএনপির চেয়ারপার্সন বর্তমান সরকারকে অবৈধ বললেও, তিনি সংলাপ-সমঝোতা এবং নতুন নির্বাচনের দাবি তুলছেন এই সরকারের কাছেই৷
জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষক পরিষদ জানিপপ-এর চেয়ারম্যান ড. নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ সার্বিক পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে ডয়চে ভেলেকে বলেন, ৫ই জানুয়ারির নির্বাচনের পর পরিস্থিতির পরিবর্তন হয়েছে৷ নির্বাচনের আগের অবস্থা আর নেই৷ সরকার এখন তার অবস্থান শক্ত করেছে৷ তাই তিনি মধ্যবর্তী নির্বাচনের কোনো সম্ভাবনা দেখছেন না৷ তাঁর মতে, যদি মধ্যবর্তী নির্বাচন হয়ও তা ২০১৬ সালের আগে হবে না৷ তাছাড়া, সেই নির্বাচন যে বিএনপির চাপের কারণে হবে, তাও নয়৷ সেটাও হবে বর্তমান সরকারের কৌশলের কারণে৷
নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ বলেন, তারা আগেই একটি একপাক্ষিক নির্বাচনের আশঙ্কা করেছিলেন এবং তাই হয়েছে৷ বিএনপি নির্বাচনের আগে আন্দোলনের যে কৌশল নিয়েছিল, তা দেশে-বিদেশে শেষ পর্যন্ত গ্রহণযোগ্য হয়নি৷ ভবিষ্যতেও সহিংস আন্দোলন দিয়ে কিছু করা যাবে না৷ বিএনপি কিছু করতে চাইলে জনগণকে সম্পৃক্ত করে আন্দোলনে যেতে হবে৷ তবে তাও সফল হতে কতদিন লাগবে, তা নিয়ে সন্দিহান তিনি৷ তিনি মনে করেন, সংলাপ হলেও তা হবে একাদশ সংসদ নির্বাচন কোন ধরণের সরকার ব্যবস্থার অধীনে হবে – শুধুমাত্র তা নিয়ে৷
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক ড. শান্তনু মজুমদার ডয়চে ভেলেকে বলেন, বিএনপির জন্য সংলাপ প্রয়োজন৷ সংলাপ হলে বিএনপি তার সহিংস আন্দোলন থেকে রাজনৈতিক আন্দোলনের একটি জায়গা পাবে৷ তবে সরকারের মধ্যে ‘সবকিছু জয় করে ফেলেছি' ধরণের যে মনোভাব কাজ করছে, তাতে তারা সংলাপ নিয়ে টালাবাহানা করলেও অবাক হওয়ার কিছু নেই৷ ড. মজুমদার মধ্যবর্তী নির্বাচন নিয়েও সন্দিহান৷ তবে তিনি মনে করেন, সব দলের অংশগ্রহণে একটি নির্বাচন হওয়া প্রয়োজন৷