1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মন্দার কবলে বাংলাদেশ, ভরসা শুধু কৃষি

৬ এপ্রিল ২০২০

মহামন্দায় চাহিদা বা যোগান যেকোনো এক দিকে সংকট তৈরি হয়৷ কিন্তু এবার চাহিদা ও যোগান দুই ক্ষেত্রেই সংকটে পড়েছে বাংলাদেশ৷ এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) অর্থনেতিক প্রাক্কলনে বলছে বাংলাদেশ ৭ দশমিক ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হবে৷

https://p.dw.com/p/3aXws
ফাইল ফটোছবি: R. Hassan

কিন্তু পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক, অর্থনীতিবিদ ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘‘এখনো আমাদের কাছে পূর্নাঙ্গ তথ্য নেই৷ তারপরও পর্যবেক্ষণ বলছে এখন এক কোটির বেশি লোক কাজ হারিয়েছেন৷ ক্ষতির মুখে পড়েছেন তাদের পরিবারের সদস্যসহ চার কোটি লোক৷ এশীয় উন্নয়ন ব্যংক যে প্রবৃদ্ধির কথা বলছে তা একমাস আগের তথ্যের ভিত্তিতে ফলে ওটার ওপর আস্থা রাখার কোনো কারণ নেই৷ আমরা মন্দার কবলে পড়ে গেছি৷'' 

‘‘বাংলাদেশ হয়তো কম ক্ষতিগ্রস্থ হবে’’

এখন বাংলাদেশের একমাত্র কৃষিখাত ছাড়া আর সব খাতই করেনার ছোবলে চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত৷ আর এই কৃষিখাতকেও কতদিন ধরে রাখা যাবে তা নির্ভর করছে সার, বীজ ও কীটনাশকের সরবরাহের উপর৷ এর ওপরে পণ্য পরিবহণ ব্যবস্থা কতটা সচল রাখা যায় তাও খুবই গুরুত্বপূর্ণ৷ আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য অভ্যন্তরীণ শিল্প ও সেবাখাত ধস৷ আর সবার ওপরে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাত প্রায় বন্ধ হয়ে যাওয়া মন্দাকে গভীর করবে৷ কারণ করোনা শেষ পর্যন্ত কোথায় গিয়ে থামবে কেউ বলতে পারেন না৷ করোনা প্রতিরোধের উপায় হলো বিচ্ছিন্নতা৷ বিচ্ছিন্নতাই মন্দার পেছনে কাজ করে৷ অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, মন্দার যতগুলো লক্ষণ আছে আছে তার সবগুলোই এখন বাংলাদেশে দেখা যাচ্ছে৷

এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) মাসখানেক আগের পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে অর্থনেতিক প্রাক্কলনে বলছে বাংলাদেশ ৭ দশমিক ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হবে৷ বাংলাদেশের আর্থিক ক্ষতির পরিমান হবে ক্ষতির পরিমাণ ৩২০ কোটি মার্কিন ডলার (১ ডলার ৮৫ টাকা হিসাবে ২৭ হাজার ২০০ কোটি টাকা)৷ জিডিপির শূন্য দশমিক ২ থেকে শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ ক্ষতি হবে৷ তবে সারা বিশ্বে প্রবৃদ্ধি দুই শতাংশের বেশি কমার আশঙ্কা করা হচ্ছে৷ 

এডিবি বলছে বাংলাদেশে প্রায় পাঁচ লাখ মানুষ চাকরি হারাবে৷ মার্চে বাংলাদেশে রেমিটেন্স এসেছে ১.২৮ বিলিয়ন ডলার, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ১২ ভাগ কম৷

এদিকে, বিজিএমইএর হিসেবে বিদেশি ক্রেতারা ৫ এপ্রিল পর্যন্ত তৈরি পোশাকের অর্ডার বাতিল করেছে তিন বিলিয়ন ডলারের বেশি৷ বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের ৮০ ভাগেরও বেশি আসে এই খাত থেকে৷ পোশাক শিল্পের সাথে ৫০ লাখেরও বেশি শ্রমিক জড়িত৷ বিআইডিএস-এর অর্থনীতিবিদ ড. নাজনীন আহমেদ বলেন, ‘‘ফেব্রুয়ারির তুলনায় মার্চে রপ্তানি ২৩ ভাগ কমেছে৷ আমদানি কমেছে নয় ভাগ৷ সবচেয়ে ভয়াবহ ব্যাপার হলো শিল্পের কাঁচামাল আমদানি কমে গেছে৷ এর মানে হলো সব ধরনের শিল্প উৎপাদন কমে গেছে৷ এটা আরো খারাপ হওয়ার আশঙ্কা আছে৷''

বাংলাদেশে বিভিন্ন কাজে নিয়োজিত মানুষের সংখ্যা সাড়ে ছয় কোটি৷ এদের বেশির ভাগই কাজ করেন অনানুষ্ঠানিক খাতে৷ তারা রিকশা চালান, বাসাবাড়িতে কাজ করেন, দিনমজুরি করেন৷ তারা কাজ হারাচ্ছেন৷ দেশের বড় একটি অংশ মানুষ কাজ হারাচ্ছেন জানিয়ে ড. নাজনীন বলেন, ‘‘এই মানুষগুলো এমনিতেই দিন আনে দিন খায়৷ এখনতো খাবারই পাচ্ছেন না৷ একমাত্র কৃষিখাত এখনো টিকে আছে৷'' 

‘‘মন্দার সব উপাদান আমরা এখন দেখছি'’

তার মতে, মহামন্দার সময় দেখা গেছে সরবরাহ বা চাহিদা যেকোনো একটায় সংকট হয়৷ কিন্তু এবার দুটোতেই সংকট৷ ‘মন্দার সব উপাদান আমরা এখন দেখছি', ড. নাজনীন বলেন৷
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোববার ৭২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকার প্যাকেজ ঘোষণার সময় অর্থনীতির ক্ষতির পরিমান এডিবি যা বলছে তার চেয়ে বেশি হবে বলে আশঙ্কা করেছেন৷
আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘‘এখন করোনা প্রতিরোধে ভালো ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে কৃষিখাতকে সচল রাখতে হবে৷ সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে কৃষি উৎপাদন ও তা সরবরাহ ব্যবস্থা টিকিয়ে রাখতে হবে৷ সেবাখাতের মধ্যে প্রাইভেট চিকিৎসা ব্যবস্থা করোনায় বরং আয় বাড়াতে পারত৷ কিন্তু সঠিক ব্যবস্থাপনা ও নীতির অভাবে এই খাতটিও প্রায় বসে গেছে৷ বাংলাদেশ হয়তো কম ক্ষতিগ্রস্থ হবে৷ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষতি অর্থনীতির ৪০ ভাগ হলে বাংলাদেশের কমপক্ষে ২০ ভাগ ক্ষতি হবে৷''