মন্দির-মসজিদ বিবাদের নিষ্পত্তি হতে আর কত দেরি?
১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৮সুপ্রিম কোর্ট অযোধ্যার রাম জন্মভূমি-বাবরি মসজিদ বিবাদের পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করেছেন আগামী ১২ই মার্চ৷ তার আগে প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্রের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বেঞ্চ স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছেন যে, বিতর্কিত জমির মালিকানা সংক্রান্ত মামলাটিই আদালতের একমাত্র বিচার্য৷ জমি সংক্রান্ত মামলায় ধর্ম, সংস্কার, রাজনীতি ইত্যাদির কোনো জায়গা নেই৷ জমি বিতর্কে দরকার সংশ্লিষ্ট নথিপত্র৷ আদালতে অনেক নথি জমা পড়েছে, কিন্তু সেসবের প্রাঞ্জল অনুবাদ এখনও বাকি৷ আদালতের চূড়ান্ত রায়ের জন্য সেই সব অনুবাদ জরুরি৷ ২০১০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে এলাহাবাদ হাইকোর্ট অযোধ্যার ২ দশমিক ৭৭ একর বিবাদিত জমির মালিকানা এক-তৃতীয়াংশ করে ভাগ করে দেন সংশ্লিষ্ট তিন পক্ষ নির্মোহী আখাড়া, রামলালা এবং সুন্নি ওয়াকফ বোর্ডের মধ্যে৷
কিন্তু এই রায়ের বিরুদ্ধে ১৩টি আর্জি পেশ করা হয় সুপ্রিম কোর্টে৷ এর ফলে সুপ্রিম কোর্ট এখন এক কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে৷ বিষয়টির সংবেদনশীলতার কথা মাথায় রেখে অনতিবিলম্বে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে হবে শীর্ষ আদালতকেই৷ যতদিন যাচ্ছে ততই বিষয়টি বিতর্কিত হয়ে উঠছে৷ অতি সক্রিয় হয়ে উঠছে প্রতিষ্ঠিত ধর্মীয় সংগঠনগুলি৷ পাশাপাশি আদালতের বাইরে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলি নিজেদের মধ্যে জমি সংক্রান্ত বিষয়টি শান্তিপূর্ণভাবে আপোষ মীমাংসা করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে৷ তাতেও বাধাবিপত্তি ভুল বোঝাবুঝি দেখা দিচ্ছে৷ আর্ট অফ লিভিং সংগঠনের গুরু শ্রী শ্রী রবিশংকর মুসলিম সম্প্রদায়ের অনেকের সঙ্গে দ্বিতীয় দফায় বৈঠক করেছেন৷ বৈঠকের পর অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল' বোর্ডের নির্বাহী সদস্য মওলানা সালমান নাদভি এক বিবৃতিতে বলেন, মসজিদের জন্য অন্যত্র জমি দেওয়া হলে আপত্তি নেই৷ বিতর্কিত জমিতে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা যেতে পারে৷ এই বিবৃতির পর অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল' বোর্ড (এআইএমপিএলবি)-তে দেখা দিয়েছে মতবিরোধ৷ গত রবিবার হায়দ্রাবাদে এআইএমপিএলবি-এর ২৬তম পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনের পর নাদভীকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়৷ বলা হয়, মুসলিমরা বাবরি মসজিদের অধিকার কখনোই ছেড়ে দিতে পারে না৷
সেই অধিকার কায়েম করতে এবং বাবরি মসজিদ পুনর্নির্মাণের জন্য সুপ্রিম কোর্টে তাঁদের আইনি লড়াই চলছে, চলবে৷ এর বিপ্রতীপ অবস্থান নিয়ে হাজি মেহবুব বলেন, তিনি নিজেদের সংগঠনের উলেমা ও মুসলিম স্কলারদের সঙ্গে শলা-পরামর্ষ করার পর বলেন, তাঁরা অযোধ্যায় মসজিদ বিবাদের সমাধানসূত্র নিয়ে শিগগিরই প্রধানমন্ত্রী মোদীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন৷
উত্তরবঙ্গের নজরুল হাফেজ সবার কাছে ‘হাজি সাহেব' হিসেবে পরিচিত৷ রামমন্দির-বাবরি মসজিদ ইস্যুতে তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি জানতে চাইলে ডয়চে ভেলেকে তনি বললেন, ‘‘লড়াইটা এখন চলছে সুপ্রিম কোর্টে৷ জমি সংক্রান্ত বিবাদে সুপ্রিম কোর্টের রায় আমরা মাথা পেতে নেবো৷ আস্থার ওপর দাঁড়িয়ে যদি বিচার না হয়, তাহলে ভারতের সংবিধানে মনে হয় কোথাও চিড় ধরবে৷ জমি সংক্রান্ত বিষয়ে এআইএমপিএলবির অবস্থানকেই আমি সমর্থন করি৷ আদালতের বাইরে যদি গ্রহণযোগ্য সমাধান হয়৷ সেক্ষেত্রে আমাদের দিক থেকে খুব একটা আপত্তির কারণ নেই৷ সালমান নাদভী সাহেবের বক্তব্যের সঙ্গে আমরা একমত নই৷ উনি হলেন, সেই নাদভী, যিনি ইরাকের আইসিস (আইএসআইএস) শাখার সন্ত্রাসী আবু বকর অল-বাগদাদিকে সার্টিফিকেট দিয়েছিলেন৷ তবে হ্যাঁ, ওনার নিজস্ব মত থাকতেই পারে৷ কিন্তু এআইএমপিএলবি একা চলে না৷ সেখানেই তাঁকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়৷ এআইএমপিএলবি-এর সকলেই যদি নিজের নিজের মত দিতে থাকেন, তাহলে সংগঠনের গুরুত্বই থাকে না৷ এআইএমপিএলবিতে সব শ্রেণির মুসলিম আছে৷ শিয়া আছে, সুন্নি আছে, বেরিলি আছে, দেওবন্দি আছে৷ মতামতের লড়াইটা ওখানেই হোক, বাইরে নয়৷''
অন্যদিকে ফের শুরু হচ্ছে অযোধ্যা থেকে রথযাত্রা৷ ঘুরবে ৬টি রাজ্য৷ রাম রাজ্য রথযাত্রা নামে এর সূচনা হবে করসেবকপুরম থেকে৷ একটি স্বয়ংসেবী সংস্থা এর আয়োজন করলেও পেছনে বিশ্বহিন্দু পরিষদ আছে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহলের একাংশ৷ স্মরণ করা যেতে পারে, ১৯৯০ সালে এই ধরনের রথযাত্রা শুরু করেছিলেন বিজেপি শীর্ষ নেতা লালকৃষ্ণ আদভানি৷ পরিণামে করসেবকদের হাতে ধ্বংস হয় বাবরি মসজিদ৷ হিন্দু সংগঠনগুলি মনে করছে, উত্তরপ্রদেশে বিজেপি সরকার, কেন্দ্রেও বিজেপি সরকার, তাই ২০১৯ সালে সাধারণ নির্বাচনের আগে রামমন্দির নির্মাণের সুযোগ হাতছাড়া করতে তারা রাজি নয়৷ যেভাবেই হোক, সুযোগ কাজে লাগাতে চায় তারা৷ আসলে ভোটের আগে রাজনৈতিক জল মাপতে চাইছে বিজেপি৷ মুসলিম সংগঠনগুলির আইনজীবী গত ডিসেম্বরের শুনানিতে ২০১৯ সালের আগে আদালতের রায় ঘোষণা না করর আর্জি জানিয়েছিলন সুপ্রিম কোর্টে৷ তাতে নাকি সামাজিক অসন্তোষ বাড়ার আশংকা আছে৷ গভীর সংকট এড়াতে সবাই এখন তাকিয়ে আছে সুপ্রিম কোর্টের দিকে৷