মরুভূমি বেড়েই চলেছে
ফসল ফলানোর জমি কমে আসছে, বাড়ছে মাটির ক্ষয়৷ মরুকরণের বিরুদ্ধে সংগ্রাম চুক্তির মাধ্যমে জাতিসংঘ এই অশুভ বিকাশধারায় বাঁধ দেবার চেষ্টা করেছে৷
বন্ধ্যা পৃথিবী
পাথর, বালি আর লবণসর্বস্ব মরুপ্রান্তর৷ ভূপৃষ্ঠের এক-তৃতীয়াংশই হলো রুক্ষ, নিষ্ফলা জমি, যার অনুপাত বেড়েই চলেছে৷ এ ধরনের রুক্ষ জমির অধিকাংশই সৃষ্টি হয়েছে গত হাজার বছরে৷ যেমন আলজেরিয়ার হগার মরু অঞ্চলের এই পাহাড়গুলি৷ আজ কিন্তু মরুকরণ বাড়ছে মানুষের গতিবিধির ফলে৷
শুষ্ক থেকে শুষ্কতর
মরুকরণ বলতে বোঝায় শুকনো, ক্ষয় হয়ে যাওয়া জমি৷ আফ্রিকা, অ্যামেরিকা কিংবা এশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে দেখা যাবে এই নতুন ধরনের মরুকরণ৷ টেক্সাসের এই গমের ক্ষেতটি ২০১১ সালের গ্রীষ্মের খরাকে সামাল দিতে পারেনি৷
মানুষেরই কাজ
প্রতিবছর প্রায় ৭০ হাজার বর্গকিলোমিটার জমি মরুতে পরিণত হয় – আয়ারল্যান্ডের যা আয়তন৷ জলবায়ু পরিবর্তনই শুধু নয়, মানুষও এর জন্য দায়ী৷ এখানে যেমন ব্রাজিলের এই চাষিটি কোদাল চালাচ্ছেন৷ ভবিষ্যতে ভালো ফসল পাবার জন্য কি করা দরকার, সেটা কি তার জানা আছে?
গোচারণ থেকে খরা
গৃহপালিত পশু বাড়ার অর্থ আরো বেশি গোচারণ, যার ফলে জমি শুকিয়ে আসছে৷ জীবজন্তুরা ঘাস, ছোট গাছপালা ইত্যাদি খেয়ে ফেলে, যার ফলে বৃষ্টি-বাদলা থেকে মাটিকে বাঁচানোর আর কোনো আস্তরণ থাকে না৷ খরা হলে, তা সহজেই মরুকরণের দিকে নিয়ে যায়৷ মাটি আরো আলগা, আরো দুর্বল হয়ে পড়ে, সহজেই ক্ষয়ে যায়৷
ব্যাপক চাষ, অসংখ্য খামার
খরা ছড়িয়ে পড়ার ফলে চাষিরা ইতিমধ্যেই বিপদে পড়েছেন – মেক্সিকোর এই ভু্ট্টার খেত যার প্রমাণ৷ বছরে একাধিক ফসল তোলার ফলে মাটি পুনরায় সঞ্জীবিত হবার সময় পাচ্ছে না৷ ফলে জমি তার পুষ্টি হারাচ্ছে, ফসলের পরিমাণ কমছে, বাড়ছে ভূমির ক্ষয়৷
ফিরে দাও সে অরণ্য
গাছের সংখ্যা কমছে৷ রান্নার কাঠ অথবা জ্বালানি হিসেবে গাছ কাটা হচ্ছে, চাষের জমি তৈরির জন্য, শিল্পাঞ্চল বা আবাসিক এলাকা গড়ার জন্য৷ অথচ গাছেরাই জলে-বাতাসে টপসয়েল বা ওপরের হালকা মাটির ক্ষয় রোধ করে৷ গাছ কেটে ফেললে জমি নিরাবরণ, নিরাভরণ হয়ে পড়ে৷
জলের নাম জীবন
বিশ্বের জনসংখ্যা বাড়ছে, সেই সঙ্গে বাড়ছে পানির ব্যবহার৷ গত পঞ্চাশ বছরে বিশ্বে পানির ব্যবহার হয়েছে দ্বিগুণ৷ এর কারণ বিশেষ করে নতুন ধরনের চাষ-আবাদ, যেমন সবজির ক্ষেতে অনেক বেশি সেচ দিতে হয়৷
পরিবেশের কার্যকারণ
মরুকরণ একবার শুরু হলে চেইন রিয়্যাকশনের মতো চলে৷ উদ্ভিদ প্রকৃতির অন্তর্ধানের ফলে পানি উপে গিয়ে মাটি শুকিয়ে যায়; জমিতে লবণের পরিমাণ বাড়ে, মাটি ফুটিফাটা হয়ে যায়, যেমন ভারতের কোনো কোনো প্রদেশে৷ তখন মাটির ক্ষয় রোধ করা শক্ত হয়ে ওঠে৷
সুদূরপ্রসারী ফলশ্রুতি
মরুকরণের ফলে শুধু পরিবেশেরই ক্ষতি হয় না৷ মরুকরণের ফলে বিভিন্ন প্রজাতির উদ্ভিদ ও জীবজন্তু বিলুপ্ত হতে পারে, দেখা দিতে পারে দারিদ্র্য, ক্ষুধা, জলাভাব৷ বুরকিনা ফাসোর মতো দেশের মানুষজন যার শিকার হন৷
বন্ধ্যা পৃথিবীকে আবার সুজলা সুফলা..
মরুকরণ রোখা, এমনকি কমানোও সম্ভব, কিন্তু সেজন্য বিপুল অর্থের প্রয়োজন৷ কাজেই পুনর্বনানীকরণ একটি পন্থা হিসেবে৷ ডমিনিকান রিপাবলিকের এই বৃক্ষবিহীন ঢালগুলিতে নতুন গাছ লাগানো হচ্ছে৷ তবে সাফল্য এখনও সীমিত৷
‘‘আমাদের যুগের বৃহত্তম পরিবেশগত চ্যালেঞ্জ’’
জাতিসংঘের মরুকরণের বিরুদ্ধে সংগ্রাম চুক্তি কার্যকরি হয় ১৯৯৬ সালে৷ লক্ষ্য ছিল, শুষ্ক, নিষ্ফলা জমি হ্রাস করে মরুকরণ রুখে দেওয়া৷ জাতিসংঘের মরুকরণ রোধ দিবস ১৭ই জুন৷