মশা মারতে পুলিশ, ডেঙ্গু রুখতে হিমশিম পুরসভা
২৩ আগস্ট ২০২২নীরবে বাড়ছে ডেঙ্গু
কোভিডের দিকে যখন সবার নজর, তখন নীরবে বেড়েছে ডেঙ্গু৷ কলকাতা-সহ একাধিক জেলায় মশাবাহিত রোগে আক্রান্তের সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে৷ কলকাতা শহরে আক্রান্তের সংখ্যা গতবারের তুলনায় সাত গুণ বেশি৷ গত বছর জানুয়ারি থেকে আগস্টের প্রথম সপ্তাহে মহানগরে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৪৫৭৷ চলতি বছরে একই সময়ে তা বেড়ে হয়েছে তিন হাজার ১০৪৷ কলকাতা পুরসভা এলাকার মধ্যে ছ'টি ওয়ার্ডে প্রকোপ বেশি৷ রাজ্যের ক্ষেত্রে আক্রান্তের সংখ্যা চার হাজারের উপরে৷ যদিও ডেঙ্গুর মরশুম সবে শুরু হয়েছে, চলবে আগামী দু'মাস৷ এখনই যদি এই পরিস্থিতি হয়, তা হলে আগামীতে কী হবে, এটা ভেবে ঘুম ছুটেছে প্রশাসনের৷
মশা মারতে কামান!
ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ করতে পুরসভা আগে থেকেই কাজ শুরু করেছে৷ জল জমতে না দেওয়ার লক্ষ্যে নাগরিক সচেতনতার বাড়াতে প্রচার চলছে নিয়মিত৷ পড়ুয়াদেরও সচেতন করা হচ্ছে৷ পুরকর্মীরা বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে পরিস্থিতি খতিয়ে দেখছেন৷ তাতেও ডেঙ্গুর দাপট রোখা যাচ্ছে না৷ তাই পুরসভার সিদ্ধান্ত, পুলিশকে নামানো হবে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে৷ পুলিশের সাহায্য নেওয়া হবে পুরসভার অভিযান চলাকালীন৷ কেন মশা মারতে পুলিশ ডাকতে হল? কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিমের বক্তব্য, ‘পুরনো বাড়ি যেখানে আছে, সেখানে ডেঙ্গুর প্রকোপ বেশি৷ এসব ক্ষেত্রে আইনি সমস্যা আছে৷ সেখানে পুরসভার কর্মীরা যেতে পারছেন না৷ তাদের বাধা দেওয়া হচ্ছে, ঠেলাঠেলি করা হয়েছে কর্মীদের৷ এই পরিস্থিতিতে আমরা পুলিশের সাহায্য নিতে চাইছি৷''
কেন হঠাৎ বৃদ্ধি?
ডেঙ্গু মোকাবিলায় মশার লার্ভা নিধন খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রক্রিয়া৷ চিরাচরিত পদ্ধতি নিধনের কাজ করার সঙ্গে লার্ভা চিহ্নিত করতে পুরসভা ড্রোনের সাহায্যও নিয়েছে৷ অনলাইনে নজরদারি করা হচ্ছে৷ তা সত্ত্বেও কেন ডেঙ্গু বাড়ছে? পুরসভার গাফিলতির দিকে আঙুল তুলছে বিরোধীরা৷ বিজেপি পুর ভবনের সামনে মশারি খাটিয়ে বিক্ষোভ দেখিয়েছে৷ পুরসভার গাফিলতির অভিযোগ খারিজ করে কলকাতার ডেপুটি মেয়র অতীন ঘোষের দাবি, আবহাওয়ার জন্য ডেঙ্গু বাড়ছে৷ এই বক্তব্য একেবারে উড়িয়ে দিচ্ছেন না চিকিৎসকরা৷ জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. সুবর্ণ গোস্বামীর মন্তব্য, ‘‘বৃষ্টিপাতের ধরন বদলাচ্ছে৷ বর্ষায় বৃষ্টি কম হচ্ছে, সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে বেশি হওয়ার সম্ভাবনা৷ ফলে যখন জল জমার কথা তখন জমছে না৷ আবার যে জায়গায় জমার কথা, অন্যত্র জমছে৷''
কোভিডের কলকাঠি
অনেক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ গতবারের সঙ্গে চলতি বছরের আক্রান্তের সংখ্যাকে মিলিয়ে দেখতে রাজি নন৷ তাদের মতে, কোভিডের দাপট থাকায় অন্য রোগ নির্ণয় কম হয়েছে৷ জ্বর হলে সাধারণ মানুষ হাসপাতালের কাছে ঘেঁষেননি৷ দোকান থেকে ওষুধ খেয়ে সেরে উঠেছেন৷ রক্ত পরীক্ষা না হওয়ায় ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ২০২০-২১ সালে যথেষ্ট কম ছিল৷ তাই তুলনা হওয়া দরকার ২০১৮-১৯ সালের সঙ্গে৷ ডেঙ্গুর জেরে হাসপাতালে ভর্তির সংখ্যাও এবার তেমন উল্লেখযোগ্য নয়৷ কিন্তু পরীক্ষা বেশি হওয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা নিয়মিত বাড়ছে৷
প্রশাসনের গাফিলতি?
ইতিমধ্যে ডেঙ্গু মোকাবিলার জন্য জরুরি বৈঠক সেরেছে রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তর৷ এ বার বর্ষার বৃষ্টি বেশ কম হলেও গত কয়েকদিনে নিম্নচাপের বৃষ্টি ভালই হয়েছে বঙ্গে৷ জেলায় জেলায় দপ্তরের বার্তা, জল জমতে দেওয়া যাবে না৷ দ্রুত জল সরানোর উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে৷ তা হলে কি এই কাজে দেরিই হয়ে গিয়েছে? ভাইরোলজিস্ট, অধ্যাপক সিদ্ধার্থ জোয়ারদার বলেন, ‘‘কোন পকেটে জল জমে আছে, সেটা প্রশাসনকে দেখতে হবে ঠিকই৷ তবে মশার বাসস্থলে বদল হল কি না, সেই দিকটাও খতিয়ে দেখা দরকার৷ ভাইরাসের জিনগত কোনো পরিবর্তন হলেও আক্রান্তের সংখ্যা বেশি হতে পারে৷''
বর্গি গেল গ্রামে
ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব সাধারণভাবে কলকাতা ও তার আশপাশের জেলায় বেশি হতো৷ মূলত যেসব জায়গায় শহুরে জীবনযাত্রার ছোঁয়া রয়েছে৷ কিন্তু এখন প্রত্যন্ত গ্রামেও ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে৷ এর কারণ ব্যাখ্যায় সুবর্ণ গোস্বামী বলেন, ‘‘দ্রুত নগরায়ন হচ্ছে৷ এর ফলে শহরের জীবনযাত্রা গ্রামকে গ্রাস করছে৷ শহরে যে ধরনের পাত্র, বোতল ব্যবহার করা হয়, সেসব এখন গ্রামের দোকানেও মিলছে৷ এগুলি পরিত্যক্ত হলে জল জমছে৷ তাতে বাড়ছে মশা ও ডেঙ্গু৷ তাই শুধু প্রশাসনের কথা বললে হবে না, মানুষকে সজাগ হতে হবে৷''