মস্কোয় এর্দোয়ান, শেষ হাসি পুটিনের মুখে
৫ মার্চ ২০২০দুই নেতাই যে যার দেশে ‘লৌহ পুরুষ' হিসেবে পরিচিত৷ তাঁদের মধ্যে কখনো চরম সংঘাত, কখনো নিবিড় বন্ধুত্ব দেখা যায়৷ রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিন ও তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রেচেপ তাইয়িপ এর্দোয়ানের মধ্যে এমন জটিল সম্পর্ক সিরিয়ার পরিস্থিতির উপর বার বার প্রভাব ফেলে৷ পুটিন বাশার আল আসাদের ক্ষমতা জোরালো করতে বদ্ধপরিকর৷ অন্যদিকে এর্দোয়ান কুর্দিদের দমন করতে ও আসাদকে দুর্বল করার ব্রত নিয়েছেন৷ সম্প্রতি দুই নেতার মধ্যে সংঘাতের জের ধরে সিরিয়ার ইদলিব প্রদেশে মারাত্মক হিংসার শিকার হয়েছে সাধারণ মানুষ৷ গত সপ্তাহে সিরিয়ায় তুরস্কের সৈন্যদের উপর বিমান হামলার পর এর্দোয়ান ও পুটিনের মধ্যে সম্পর্কের আরও অবনতি হয়েছে৷
জটিল এই সংকট মেটাতে পুটিন বৃহস্পতিবার মস্কোয় এর্দোয়ানের সঙ্গে বৈঠক করলেন৷ দুই নেতাই আলোচনার মাধ্যমে সিরিয়ার ইদলিব প্রদেশে সংঘাত বন্ধ করার আশা প্রকাশ করেছেন৷ তুর্কি সৈন্যদের উপর হামলার ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেছেন রুশ প্রেসিডেন্ট৷ পুটিন দুই দেশের কিছু যৌথ পদক্ষেপ সম্পর্কে ঐকমত্যের উপর জোর দিচ্ছেন৷ তিনি চান, বাশার আল আসাদের বাহিনী গোটা দেশের উপর আবার নিয়ন্ত্রণ কায়েম করার যে উদ্যোগ নিচ্ছে, এর্দোয়ান যেন তাতে বাধা না দেন৷ অন্যদিকে এর্দোয়ান সেই অঞ্চলে আবার অস্ত্রবিরতির উপর জোর দিচ্ছেন৷ উল্লেখ্য, অতীতে এমন অস্ত্রবিরতি সম্পর্কে সমঝোতা শেষ পর্যন্ত কার্যকর করা সম্ভব হয় নি৷ দুই পক্ষ একে অপরের বিরুদ্ধে বোঝাপড়ার শর্ত অমান্য করার অভিযোগ এনেছে৷ এবার তিনি আসাদের বাহিনীকে ২০১৮ সালের সীমানায় পিছিয়ে যাবার জন্য চাপ দিচ্ছেন৷ বৃহস্পতিবার মস্কোয় যে বোঝাপড়া হচ্ছে, তার ফলে সিরিয়ার পরিস্থিতির উন্নতি হবে বলে এর্দোয়ান আশা প্রকাশ করেছেন৷
সিরিয়াকে কেন্দ্র করে রাশিয়া ও তুরস্কের মধ্যে সংঘাতে ইউরোপও পরোক্ষভাবে জড়িয়ে পড়ছে৷ এর্দোয়ান তাঁর নীতি কার্যকর করতে ইউরোপের সমর্থন ও সহায়তার দাবি করেছেন৷ কিন্তু ইতিবাচক সাড়া না পেয়ে তিনি গ্রিসের সীমান্ত খুলে দিয়ে শরণার্থীদের ইউরোপে প্রবেশের সুযোগ দিচ্ছেন৷ তবে এভাবে চাপ সৃষ্টি করেও এর্দোয়ান ইউরোপের সহায়তা পাচ্ছেন না৷ গ্রিস সীমান্ত বন্ধ করে দেওয়ায় শরণার্থীদের অবস্থা কঠিন হয়ে উঠেছে৷ তুরস্কের কর্তৃপক্ষকেই সীমান্তে শরণার্থীদের ভিড় সামলাতে হচ্ছে৷
তর্জনগর্জন ও চাপ সত্ত্বেও এর্দোয়ান শেষ পর্যন্ত রাশিয়া ও ইউরোপের সামনে নতি শিকার করতে বাধ্য হবেন, এমন সম্ভাবনাই উজ্জ্বল হয়ে উঠছে৷ পুটিন আনুষ্ঠানিকভাবে অস্ত্রবিরতি মেনে নিলেও আসাদ বাহিনীর উপর সম্ভবত কোনো চাপ সৃষ্টি করবেন না৷ উলটে সিরিয়ায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক শক্তি হিসেবে তিনি রাশিয়ার প্রভাব আরও জোরদার করছেন৷
২০১৫ সালের শরণার্থী সংকটের পর ইউরোপও বহির্সীমানা আরও মজবুত করে তুলেছে৷ একাধিক পদক্ষেপের মাধ্যমে শরণার্থীদের অবৈধ প্রবেশের পথে নানা বাধা সৃষ্টি করা হয়েছে৷ মানবিক বিপর্যয় এড়াতে কিছু শরণার্থীকে আশ্রয় দিলেও বিশাল সংখ্যক শরণার্থীদের ঢল নামার সম্ভাবনা এবার প্রায় নেই বললেই চলে৷
এসবি/জেডএইচ (ডিপিএ, এএফপি)