ভরে গেছে কক্ষপথ
৫ জুলাই ২০১৩গত শতাব্দীর পঞ্চাশের দশক যাবৎ দক্ষিণ অ্যামেরিকার ফরাসি গুইয়ানায় ইউরোপের মহাকাশবন্দর কুরু থেকে ছয় হাজারের বেশি কৃত্রিম উপগ্রহ কক্ষপথে পাঠানো হয়েছে৷ এককালে মহাকাশ মহাশূন্যই ছিল৷ এখন সেখানে পাঁচ লাখের বেশি ভাঙাচোরা যন্ত্রপাতির টুকরো ঘুরছে ঘণ্টায় আটাশ হাজার কিলোমিটার গতিতে৷ এগুলো হল পুরনো স্যাটেলাইট আর রকেটের টুকরো৷ মহাকাশে যা অকল্পনীয় বিপদ ঘটাতে পারে৷
জার্মান এয়ারোস্পেস সেন্টারের আডল্ফ গিসেন বলেন, ‘‘আমরা যদি এই মহাকাশ আবর্জনার বিরুদ্ধে কিছু না করি, তাহলে এমন একটা সময় আসবে, যখন আমরা স্যাটেলাইটগুলোকে কক্ষপথে রাখতেই পারব না৷ ইতিমধ্যে এই মহাকাশ আবর্জনা হালের স্যাটেলাইটগুলোর পক্ষেই বিপজ্জনক হয়ে দাঁড়িয়েছে৷ স্যাটেলাইট বিকল হয়ে যাচ্ছে, স্যাটেলাইটে-স্যাটেলাইটে ধাক্কা লাগছে৷ একদিকে হাজার খানেক স্যাটেলাইট রয়েছে কক্ষপথে৷ অন্যদিকে রয়েছে সাত লাখের মতো বিপজ্জনক লোহালক্কড়ের টুকরো৷''
জার্মান এয়ারোস্পেস সেন্টারে ঠিক এই সমস্যার সমাধান নিয়ে কাজ করছেন আডল্ফ গিসেন৷ তিনি একটি নতুন ধরনের লেজার ব্যবস্থা তৈরি করছেন, যা অত্যন্ত জোরালো ও নিখুঁত হবে৷ এই লেজারের সাহায্যে মহাকাশে আবর্জনা কমানো হবে৷
প্রথম কাজ হবে, পৃথিবীর চারপাশে যে সাত লাখের মতো টুকরো-টাকরা ঘুরপাক খাচ্ছে, সেগুলোর একটা তালিকা করা – যদিও কিছু টুকরোর আয়তন এক সেন্টিমিটারের বেশি নয়৷ দ্বিতীয়ত, ভূপৃষ্ঠ থেকে হাজার হাজার কিলোমিটার দূরে ঘুরপাক খাওয়া আবর্জনার টুকরোগুলোর গতি কমানো হবে লেজারের কামান দিয়ে, যাতে সেগুলো পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে ঢোকার সময় জ্বলেপুড়ে ছাই হয়ে যায়৷
মহাকাশ আবর্জনার তালিকা তৈরি করাটাই কঠিন কাজ, কেননা মহাকাশে নিত্যনতুন পরিবর্তন ঘটছে, পরিস্থিতি পাল্টে যাচ্ছে৷ আডল্ফ গিসেন বলেন, ‘‘একদিকে স্যাটেলাইটগুলো ধ্বংস হচ্ছে৷ অন্যদিকে তার ফলে নতুন আবর্জনা সৃষ্টি হচ্ছে, যা বাকি স্যাটেলাইটগুলির জন্য বিপজ্জনক৷ এছাড়া মহাকাশ আবর্জনার টুকরোগুলোর কক্ষপথ প্রায়ই বদলে যায়, এক সপ্তাহ নজর না রাখলেই সেগুলো যে কোথায়, তা নতুন করে খুঁজে দেখতে হয়৷ কাজেই আমাদের সর্বক্ষণ নজর রাখতে হয়৷''
একটি হাই-টেক গবেষণাগারে গিসেন ও তাঁর সহকর্মীরা তাঁদের লেজার কামান নিয়ে কাজ করছেন৷ মহাকাশ আবর্জনার টুকরোগুলোকে দিনরাত পর্যবেক্ষণ করার জন্য বিষুবরেখা বরাবর সারা পৃথিবী জুড়ে নজর রাখা চাই৷ এযাবৎ এ ধরনের কোনো বাইরের পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র নেই, কিন্তু সারা বিশ্বের বিজ্ঞানী ও গবেষকদের সঙ্গে সহযোগিতার পরিকল্পনা চলেছে৷ আডল্ফ গিসেন বলেন, ‘‘শেষমেষ আমাদের লক্ষ্য হল আবর্জনা সরানো, যেটা একটা বিরাট চ্যালেঞ্জ৷ আজ যে ধরনের ছোট ছোট টুকরো ঘোরে, তা একমাত্র লেজার দিয়ে ধ্বংস করা সম্ভব৷ কিন্তু সেই লেজার তৈরি করতে দশ বছরের বেশি সময় লেগে যাবে৷''
মহাকাশে আবর্জনা বেড়েই চলেছে৷ কিন্তু এভাবে বাড়তে থাকলে বহু ব্যবহৃত কক্ষপথগুলোতে সচল স্যাটেলাইটদেরও বিপদ ঘটতে পারে, দুর্ঘটনা ঘটতে পারে৷ আবার ধাক্কা এড়াতে গেলে জ্বালানি খরচা হয়৷ বর্তমানে এই সব কারণে বছরে প্রায় ১৪ কোটি ইউরো খরচ হয়৷
আজই প্রতি বছর একাধিক টন অচল স্যাটেলাইট বায়ুমণ্ডলে বাতাসের ঘর্ষণে ভস্মীভূত হয় ও মাটিতে ভেঙে পড়ে৷ ভবিষ্যতে যাতে তার প্রয়োজন না পড়ে, সেটা নিশ্চিত করাই হল জার্মান গবেষকদের প্রচেষ্টা৷
এসি / এসবি