মহাকাশে চীন
২৫ জুন ২০১২ম্যানুয়াল ডকিং মানে হচ্ছে, কোনো স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতি অনুসরণ না করে জয়স্টিকের মতো দেখতে একটি যন্ত্রের সাহায্যে দুটো মহাকাশযানকে একসঙ্গে জোড়া লাগানো৷ ব্যাপারটা শুনতে সহজ মনে হলেও মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ কাজ এটি৷ কেননা সামান্য এদিকওদিক হলেই ভেঙেচুরে যাবে যান দুটো৷ কারণ মহাকাশে সেগুলো প্রতি ঘন্টায় হাজার হাজার কিলোমিটার বেগে চলতে থাকে৷
জটিল এই কাজটিই সফলতার সঙ্গে সম্পন্ন করে দেখালেন চীনের নভোচারীরা৷ এ লক্ষ্যে মাত্র এক সপ্তাহ আগে ‘শেনঝু-৯' যান নিয়ে মহাকাশে রওয়ানা হয়েছিলেন তিন চীনা নভোচারী৷ যাদের মধ্যে একজন নারীও রয়েছেন৷ গত সোমবার মহাকাশে থাকা ‘তিয়ানগং-১' মডিউলের সঙ্গে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ডকিং করে ‘শেনঝু-৯'৷ এরপর থেকে তিয়ানগং এই ছিলেন ঐ তিন নভোচারী৷ এরপর ম্যানুয়াল ডকিং এর লক্ষ্যে রবিবার সকালে প্রথমে তারা তিয়ানগং থেকে আলাদা হয়ে যান৷ এরপর আবার জোড়া লাগান৷ তবে এবার আর স্বয়ংক্রিয়ভাবে নয়৷ এবার তারা ব্যবহার করেন জয়স্টিকের মতো দেখতে একটি যন্ত্র৷
এর আগে শুধু অ্যামেরিকা আর রাশিয়ার মহাকাশবিজ্ঞানীরাই এই সাফল্য দেখাতে পেরেছেন৷ এবং সেটা গত শতকের ষাটের দশকে৷
কিন্তু কেন গুরুত্বপূর্ণ এই ম্যানুয়েল ডকিং? উত্তর হচ্ছে, কখনো কখনো এমন পরিস্থিতি আসতে পারে যখন পৃথিবী থেকে আর মহাকাশের কোনোকিছু নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না৷ তখন ম্যানুয়ালভাবেই সব করতে হবে৷ চীন যেহেতু ২০২০ সালের মধ্যে মহাকাশে তাদের নিজস্ব একটি স্টেশন গড়ে তুলতে চাইছে তাই তাদের এখন নিয়মিতভাবেই মহাকাশে আসা যাওয়া করতে হবে৷ তাই ম্যানুয়াল ডকিং বিষয়ে অভিজ্ঞতা অর্জনটা জরুরি৷
বাস্তবিকভাবে ম্যানুয়াল ডকিং করার আগে চীনা নভোচারীরা কৃত্রিম উপায়ে প্রায় দেড় হাজার বার ডকিং এর অনুশীলন করেছেন৷
এই নিয়ে মোট চারবার মহাকাশে মানুষ পাঠালো চীন৷ এবারকার চীনা দলে রয়েছেন জিং হাইপেং, লিউ ওয়াং এবং লিউ ইয়াং৷ এদের মধ্যে লিউ ওয়াং ম্যানুয়াল ডকিং এর কাজটি করেছেন৷ জিং হাইপেং এই দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন৷ আর অপরজন লিউ ইয়াং হচ্ছেন ৩৩ বছর বয়সি এক চীনা নারী৷ চীনের ইতিহাসের প্রথম নারী হিসেবে তিনি এবার মহাকাশে গেছেন৷ ইয়াং এর কাজ হচ্ছে নভোযানে নারীদের জন্য পর্যাপ্ত ব্যবস্থা আছে কীনা সেটা পরীক্ষা করে দেখা৷
২০০৩ সালে চীন প্রথমবারের মতো মহাকাশে মানুষ পাঠাতে সফল হয়৷ ২০০৮ সালও চীনের জন্য একটা গুরুত্বপূর্ণ বছর৷ কেননা সেসময় প্রথমবারের মতো চীনা এক নভোচারী সফলভাবে মহাকাশে হেঁটে বেড়ান৷
এদিকে, এবার যারা মহাকাশে গেছেন তাঁরা সবাই সুস্থ আছেন বলে জানিয়েছে চীনের সরকারি বার্তা সংস্থা শিনহুয়া৷ জুন ১৬ তারিখে রওয়ানা দেয়া এই বিজ্ঞানীরা ১৩ দিনের অভিযান শেষে পৃথিবীতে ফিরে আসবেন৷
শেষ করবো চীনের আরেকটি সাফল্যের খবর দিয়ে৷ সেটাও রবিবারের৷ সেদিন চীনা এক ডুবোজাহাজ বিখ্যাত মারিয়ানা ট্রেঞ্চের প্রায় সাত কিলোমিটার গভীর পর্যন্ত গিয়ে ঘুরে এসেছে৷ কোনো চীনা ডুবোজাহাজের জন্য এটা একটা রেকর্ড৷ উল্লেখ্য, মারিয়ানা ট্রেঞ্চ হলো প্রশান্ত মহাসাগরের সেই জায়গা যেখানে পৃথিবীর গভীরতম তলদেশ অবস্থিত৷ যার পরিমাণ প্রায় ১১ কিলোমিটার৷ টাইটানিকখ্যাত জেমস ক্যামেরন গত মার্চ মাসে সেখান থেকে ঘুরে এসেছেন৷
জেডএইচ / আরআই (এএফপি)