মহাকাশের জঞ্জাল সাফাই
২০ জুন ২০১৪পৃথিবীতে অনেক দেশে আবর্জনা সাফাই ভালো ব্যবসা হয়ে উঠেছে৷ তাহলে মহাকাশই বা বাদ থাকে কেন? বহু দশক ধরে পৃথিবীর কক্ষপথে যে সব স্যাটেলাইট ও মহাকাশযান পাঠানো হয়েছে, তার অনেকগুলি বাতিল হয়ে ভেসে বেড়াচ্ছে – কখনো আস্ত অবস্থায়, কখনো বা ভেঙে টুকরো হয়ে৷ নোবো ওকাডা মানবজাতিকে এই সব ‘জাংক' থেকে মুক্তি দিতে চান৷ কারণ তাঁর আশঙ্কা, এরপর আর স্যাটেলাইট সংকেত পৃথিবী পর্যন্ত পৌঁছাবে না৷ ঝড়ের পূর্বাভাস পাওয়া যাবে না, জিপিএস ন্যাভিগেশন ঠিকমতো না চলায় গাড়ি ভুল রাস্তায় চলে যাবে৷
এই সমস্যার সমাধান করতে একেবারে আটঘাট বেঁধে আসরে নেমেছেন ওকাডা৷ সিঙ্গাপুরে ‘অ্যাস্ট্রোস্কেল' নামের কোম্পানি খুলেছেন তিনি৷ তিনি একা নন, মহাকাশে বেসরকারি উদ্যোগের জোয়ার এসেছে, যাকে বলা হচ্ছে ‘নিউস্পেস ইন্ডাস্ট্রি'৷
মার্কিন মহাকাশ সংস্থা নাসার অনুমান অনুযায়ী, মহাকাশে এই মুহূর্তে ৫ লক্ষেরও বেশি জঞ্জালের টুকরো ভেসে বেড়াচ্ছে৷ বিকল স্যাটেলাইট থেকে মারবেল আকারের লেন্স কভার – কী না নেই সেই তালিকায়! আরও লক্ষ লক্ষ আবর্জনা আছে – যেগুলি এতই ছোট, যে তার হিসাব রাখা অসম্ভব৷ প্রবল বেগে ধেয়ে চলেছে এই সব ছোট-বড় বস্তু৷ সংঘর্ষ ঘটলে যে কোনো মহাকাশযানকে ধ্বংস করে ফেলতে পারে এগুলি৷
তবে আশার আলো হলো, এই জঞ্জাল অনন্তকাল ধরে ভেসে বেড়ায় না৷ কোনো না কোনো সময় বায়ুমণ্ডলের সঙ্গে ঘর্ষণের ফলে জ্বলে উঠে ছাই হয়ে যায়৷ এই প্রক্রিয়া তরান্বিত করতে এখনো পর্যন্ত অনেক প্রস্তাব শোনা গেছে৷ যেমন বিশেষ বিদ্যুৎ তরঙ্গের মাধ্যমে মহাকাশ জঞ্জালের গতি কমিয়ে সেগুলিকে দ্রুত বায়ুমণ্ডলের উপর ফেলার কথা শোনা গেছে৷ টাংস্টেন ধুলার মাধ্যমে জঞ্জাল ঝেঁটিয়ে মহাকাশে ঠেলে দেওয়ার পরামর্শও দিয়েছেন কিছু বিজ্ঞানী৷ তবে এত বড় কর্মযজ্ঞের ব্যয়ভার বহন করতে কোনো সংস্থা এগিয়ে আসেনি৷
এই শূন্যস্থান পূর্ণ করতে চায় ‘অ্যাস্ট্রোস্কেল' কোম্পানি৷ তারা এমন এক প্রযুক্তি প্রস্তুত করছে, যার ব্যয় কম এবং অনেক বেশি বাস্তবধর্মী৷ এর আওতায় একটি বড় মহাকাশযান কক্ষপথে পাঠানো হবে, যার মধ্যে থাকবে ছয়টি ছোট যান৷ সেগুলি ২০০ বড় জঞ্জালের টুকরোর সংস্পর্শে এসে সেগুলিকে বায়ুমণ্ডলের দিকে ঠেলে দেবে৷ সম্ভব হলে বিকল স্যাটেলাইট মেরামত করে তার আয়ুও বাড়িয়ে তোলার চেষ্টা করবে এই সব যান৷
ওকাডার এই উদ্যোগ নিয়ে সংশয় কম নেই৷ প্রথমত মহাকাশ প্রযুক্তির ক্ষেত্রে তাঁর কোনো অভিজ্ঞতা নেই৷ আর্থিক বিনিয়োগ কোথা থেকে আসবে, তাও স্পষ্ট নয়৷ আইনগত কিছু জটিলতাও এমন প্রচেষ্টার পথে জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে৷ সবচেয়ে বড় কথা, ‘বিজনেস মডেল' হিসেবে এই উদ্যোগ কতটা সফল হতে পারে? নিন্দুকদের জবাব দিতে ওকাডা আপাতত জাপানের ‘পোকারি সোয়েট' নামের এক সফট-ড্রিংক কোম্পানির সঙ্গে কথা বলছেন৷ বিজ্ঞাপনের চমক হিসেবে চাঁদের বুকে সেই ড্রিংকের ‘পাউডার সংস্করণ' পাঠিয়ে ‘অ্যাস্ট্রোস্কেল' কোম্পানি যে অর্থ আয় করবে, তা দিয়ে জঞ্জাল সাফাইয়ের কাজ শুরু করতে চান ওকাডা৷
এসবি/ডিজি (রয়টার্স, এপি)