মহাকাশেও সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র গড়ার স্বপ্ন
১৭ এপ্রিল ২০২৩মানুষের জায়গার বড় অভাব৷ কিন্তু একই সঙ্গে গাছপালা গজানো ও জ্বালানি উৎপাদন করতে পারলে কেমন হয়?
এবার অ্যাগ্রিভল্টায়িকের সময় এসে গেছে৷ ফসল দ্বিগুণ করাই এই আইডিয়ার মূলমন্ত্র! সেই লক্ষ্যে এমন মডিউল তৈরি করা হচ্ছে, যার আওতায় ভবিষ্যতেও নীচের মাটিতে গাছপালা চাষ করা সম্ভব৷ কী কী সম্ভাব্য মডিউল রয়েছে?
সৌর-বেড়া একটা সমাধানসূত্র৷ বেড়াগুলির মাঝের অংশ চাষবাস, পশুপালন বা ফুলগাছ লাগানোর জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে৷ অথবা মডিউলগুলি এমনভাবে তৈরি করা যায়, যাতে সূর্যের দিকে ঘোরার জন্য প্যানেলের যথেষ্ট জায়গা থাকে৷
কিন্তু প্যানেলের নীচে বা কাছাকাছি যে সব গাছপালা গজাচ্ছে, সেগুলির অবস্থা কীরকম? ভূ-বিজ্ঞানী হিসেবে গেয়র্গ বারোন-গ্যাফোর্ড বলেন, ‘‘আমরা নানা ধরনের শাকসবজি চাষ করেছি৷ স্থানীয় চাষিদের হাটে যেমনটা দেখা যায় – টমেটো, ক্যাপসিকাম, কুমড়ো, বেগুন ইত্যাদি৷ মনে হয় এই সব গাছই বেশ ভালোভাবে বেড়ে উঠছে৷''
অর্থাৎ গাছগুলি সব সময়ে যথেষ্ট আলো পাচ্ছে৷ সোলার কালেক্টরের ছায়ায় থাকলে এমনকি টমেটো ও মরিচের উৎপাদন প্রায় দ্বিগুণ হয়ে যাচ্ছে৷ কারণ গাছগুলি অতিরিক্ত মাত্রায় সূর্যের আলো পেলে বাড়তি চাপ অনুভব করে এবং সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়া বন্ধ করে দেয়৷ অর্থাৎ গাছের বৃদ্ধি থমকে যায়৷
পৃথিবীর তাপমাত্রা বেড়েই চলেছে৷ এই মডিউলগুলি কম পানিতে সেচের ব্যবস্থা করছে৷ এমন প্রবণতার বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে৷ একটি গবেষণার ফল অনুযায়ী আগামী পাঁচ বছরে বিশ্ব বাজারের প্রায় ৪০ শতাংশ বৃদ্ধি ঘটবে৷
বিশেষ করে কৃষির উপর অতিরিক্ত নির্ভরশীল শুকনা অঞ্চল ও দেশগুলি অ্যাগ্রি ফোটোভল্টাইক প্রযুক্তি ব্যবহার করে অনেক জমি ও পানি সাশ্রয় করতে পারবে৷ ভারত, ইন্দোনেশিয়া তথা আফ্রিকা ও দক্ষিণ অ্যামেরিকার অনেক দেশ এমন ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে৷
অন্য কোনো জায়গায় কি সোলার সেল বসানো যেতে পারে? মহাকাশের কথাও ভাবা হচ্ছে৷ যতটা সম্ভব সূর্যের কাছে যাওয়াই লক্ষ্য৷ মহাকাশে ২৪ ঘণ্টাই সূর্যের আলো পাওয়া যায়, পৃথিবীর মতো সেখানে জমিরও প্রয়োজন নেই৷
তাহলে আমরা পৃথিবীর কক্ষপথে সোলার সেল গড়ে তুলছি না কেন? ব্রিটেনের নেতৃত্বে ‘স্পেস এনার্জি ইনিশিয়েটিভ'-এর আওতায় শিল্পজগত, রাজনীতি ও বিজ্ঞান জগতের প্রায় ৫০ সহযোগী ২০৩৫ সালের মধ্যে মহাকাশে একটি সৌরবিদ্যুৎ স্যাটেলাইট পাঠানোর পরিকল্পনা নিয়েছে৷
সেই প্রযুক্তি এভাবে কাজ করতে পারে৷ পৃথিবী থেকে প্রায় ৩৫,০০০ কিলোমিটার দূরে জিওস্টেশনরি কক্ষপথে স্যাটেলাইটগুলি বিশাল সৌর প্যানেলের সাহায্যে সৌরশক্তি সংগ্রহ করবে৷ তারপর সেই শক্তি মাইক্রোওয়েভ বিকিরণের মাধ্যমে পৃথিবীতে পাঠিয়ে দেওয়া হবে৷
ভূ-পৃষ্ঠে ‘রেক্টেনা' নামে অ্যান্টেনার নেটওয়ার্ক সেই মাইক্রোওয়েভ গ্রহণ করে গ্রিডের জন্য বিদ্যুতে রূপান্তরিত করবে৷ প্রত্যেকটি স্যাটেলাইট অবিরাম দুই গিগাওয়াট পরিমাণ জ্বালানি উৎপাদন করবে, যা প্রায় ৭০০ বায়ুচালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সমান৷
এমন স্যাটেলাইট প্রায় এক দশমিক সাত কিলোমিটার ব্যাস ও কয়েক হাজার টন ওজনের হতে পারে৷ সেগুলি ২৪ ঘণ্টা ধরে একনাগাড়ে পৃথিবীতে জ্বালানি পাঠাতে পারবে বলে ধরে নেওয়া হচ্ছে৷ দুপুরের চড়া রোদের এক চতুর্থাংশ মাত্রার সেই রশ্মি প্রাণী ও মানুষের জন্য নিরাপদ হবে বলে দাবি করা হচ্ছে৷
কিন্তু ট্রান্সমিশন ও রুপান্তরের সময় অনেক জ্বালানি নষ্ট হবে৷ তাছাড়া এমন মডিউল মহাকাশে পাঠানোর ব্যয় অভাবনীয় হতে পারে৷ আগামী দশকগুলিতে আমরা যথেষ্ট অর্থ ব্যয় করে মহাকাশে সৌরবিদ্যুৎ স্যাটেলাইট পাঠাতে পারলেও এমন উদ্যোগের সার্থকতা নিয়ে সংশয় থেকে যাচ্ছে৷
অত্যন্ত প্রয়োজনীয় জমিতে ভাগ না বসিয়েও দ্রুত সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনের আরও বাস্তবসম্মত উপায় রয়েছে৷ সেই সব পদ্ধতিই তুলনামূলকভাবে আরও সস্তা, দ্রুত ও সম্ভাবনাময়৷
মোনিকা সাক্স/এসবি