মহাকাশের অজানা রহস্য উন্মোচন করছেন বিজ্ঞানীরা
২৪ মে ২০১৪আনাড়িদের কাছে এটা একটা ডিজাইন মাত্র, কিন্তু বিশেষজ্ঞদের কাছে চাঞ্চল্যকর ঘটনা৷ একে বলে কসমিক মাইক্রোওয়েভ ব্যাকগ্রাউন্ড৷ এই ছবির উৎস নাকি অভিকর্ষ তরঙ্গ৷ কয়েক দশক ধরে জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা এমন তরঙ্গের খোঁজ করছেন৷ জ্যোতির্বিজ্ঞানী অধ্যাপক ডিটার ব্রাইটশ্ভেয়ার্ট বলেন, ‘‘এখন যদি আমরা অভিকর্ষ-তরঙ্গ ভিত্তিক জ্যোতির্বিদ্যা চর্চা করতে পারি, তাহলে বিশ্বব্রহ্মাণ্ড পর্যবেক্ষণের ক্ষেত্রে আমাদের হাতে বাড়তি একটা অস্ত্র এসে যাবে৷ তা কাজে লাগিয়ে আমরা হয়ত এমন সব জিনিস দেখতে পাবো, যা এতকাল আমাদের নজরের আড়ালে ছিল৷ শুধু অভিকর্ষ-তরঙ্গের মধ্যেই তার দেখা মেলে৷''
আলবার্ট আইনস্টাইন বেঁচে থাকলে খুবই রোমাঞ্চ অনুভব করতেন৷ তিনি তাঁর ‘থিওরি অফ রিলেটিভিটি'-তে অভিকর্ষ তরঙ্গের পূর্বাভাষ দিয়েছিলেন৷ তবে সেটা যে কখনো দেখা যাবে, তিনি সেটা ভাবতে পারেননি৷
কোনো বস্তু পুকুরে পড়লে পানিতে যে ভাবে তরঙ্গ দেখা যায়, ঠিক সেভাবে ব্ল্যাক হোল-এর মতো কোনো মহাজাগতিক বস্তু ও ‘হাই এনার্জি' মহাকাশে তরঙ্গের সৃষ্টি করে৷ তখন প্রায় আলোর গতিতে অভিকর্ষ-তরঙ্গ চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে৷ সদ্য আবিষ্কৃত তরঙ্গের উৎস এমন এক যুগের, যা বিজ্ঞানীদের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ৷
তখন আমাদের বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের বয়স ছিল সেকেন্ডের ক্ষুদ্র এক ভগ্নাংশ৷ অধ্যাপক ব্রাইটশ্ভেয়ার্ট বলেন, ‘‘শুরুতেই অত্যন্ত কম সময়ের মধ্যে অনেক পরিবর্তন ঘটেছিল৷ এই সময়ে যা ঘটেছিল, তা আমরা বুঝতে চাই৷ তাহলে বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের বিবর্তনের অনেক পর্যায়ও আমরা বুঝতে পারবো৷ এতটা পিছিয়ে না গেলে এই হেঁয়ালির সমাধান করতে পারবো না৷''
তত্ত্ব অনুযায়ী ‘বিগ ব্যাং' বিস্ফোরণের ঠিক পরে বিশ্বব্রহ্মাণ্ড ফুলে-ফেঁপে উঠেছিল৷ গবেষকরা এই পর্যায়কে ‘ইনফ্লেশন' বলেন৷ এটা অনেকটা মাধ্যাকর্ষণের বিপরীত শক্তির মতো৷ এটি মহাকাশকে ঠেলে ফুলিয়ে দেয়৷ সেই সম্প্রসারণ এখনো চলছে৷ পদার্থবিজ্ঞানীদের কাছে এই ধারণা কিছুটা চমকপ্রদ হলেও গুরুত্বপূর্ণ, যাতে ‘বিগ ব্যাং' তত্ত্বের সঙ্গে বাস্তবের সামঞ্জস্য ঘটে৷
এই মডেল যদি বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের জন্মলগ্নের অভিকর্ষ তরঙ্গের হয়, তাহলে সেটা হবে এই তত্ত্বের সপক্ষে প্রমাণ, যে আমাদের বিশ্বব্রহ্মাণ্ড একটা ইনফ্লেশন পর্যায়ের মধ্য দিয়ে গেছে৷ তথ্য বিশ্লেষণ করে এও জানা যাবে, সে সময় সম্প্রসারণের মাত্রা কতটা ছিল এবং কত দ্রুত ও কত সময় ধরে সেটা ঘটেছিল৷ অধ্যাপক ব্রাইটশ্ভেয়ার্ট বলেন, ‘‘এতে আবার প্রমাণ হচ্ছে, যে সত্যি এমনটাই ঘটেছিল৷ গত দুই দশকে জ্যোতির্বিদ্যার ক্ষেত্রে অনেক যুগান্তকারী পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে৷ এখন মনে হচ্ছে, এই প্রবণতা এখনো চলছে৷''
এগুলি অভিকর্ষ তরঙ্গই ছিল কিনা, তা জানতে আরও কয়েক মাস অপেক্ষা করতে হবে৷ তখন ইউরোপীয় এক স্যাটেলাইটের মাধ্যমে পাওয়া তথ্য প্রকাশিত হবে৷ সেটিও একই তরঙ্গ পর্যবেক্ষণ করছিলো৷ অতএব ফলাফলও একই হওয়ার কথা৷