1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মহাকুম্ভ মেলা এবার হরিদ্বারে

১৩ এপ্রিল ২০১০

ভারতের বিভিন্ন স্থানে বিশেষ করে উত্তরভারতে হিন্দুদের সবথেকে বড় এবং সবথেকে পবিত্র ধর্মীয় মেলা হলো কুম্ভমেলা যেটা এখন চলছে হরিদ্বারে৷

https://p.dw.com/p/MvTa
হরিদ্বারের কুম্ভ মেলাছবি: UNI

কুম্ভমেলার খ্যাতি ও জনপ্রিয়তা বছরের পর বছর এত ব্যাপক আকার নিয়েছে যে, বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের লক্ষ লক্ষ মানুষের সমাগম হয় এই কুম্ভমেলা উপলক্ষে৷ এবারের জনসমাগম রেকর্ড মাত্রা ছুঁয়েছে৷ আগামিকাল মহাস্নান৷

পূর্ণকুম্ভ বা মহাকুম্ভ মেলা বসে ১২ বছর অন্তর আর অর্ধকুম্ভ মেলা হয় ৬বছর অন্তর৷ গ্রহ নক্ষত্রের অবস্থান গণনা করে স্থির হয় কবে কোথায় মহাকুম্ভ মেলা বসবে৷ সূর্য ও বৃহস্পতি গ্রহ যখন সিংহ রাশিতে প্রবেশ করে তখন মহাকুম্ভ মেলা হয় মহারাষ্ট্রের নাসিকে৷ সূর্য যখন মেষ রাশিতে প্রবেশ করে তখন মহাকুম্ভ মেলা হয় হরিদ্বারে৷ বৃহস্পতি যখন বৃষ রাশিতে এবং সূর্য যখন মকর রাশিতে প্রবেশ করে তখন মহাকুম্ভ মেলা বসে এলাহাবাদ বা প্রয়াগে৷ বৃহস্পতি ও সূর্য যখন বৃশ্চিক রাশিতে তখন হয় উজ্জয়িনীতে৷

ধর্মীয় রীতি মতে, প্রথমে নদীতে বিশেষ করে গঙ্গা নদীতে পূণ্যস্নান অপরিহার্য৷এই স্নানে সব পাপ ধুয়ে যায় এবং মোক্ষলাভ হয় এটাই হিন্দুদের ধর্মীয় বিশ্বাস৷ সেদিক থেকে হরিদ্বার সবথেকে প্রশস্ত৷ কারণ হিমালয়ের গঙ্গোত্রী হিমবাহ থেকে পবিত্র গঙ্গা নদীর জল প্রথম সমতলে প্রবাহিত এই হরিদ্বারে৷ পুণ্যস্নানের সময় মন্ত্র উচ্চারণ ও পাঠ এবং ধর্মীয় সঙ্গীত এক পবিত্র আবহ তৈরি করে৷ তারপর সাধুসন্ত ও অন্যান্য পূণ্যার্থীদের ভোজন৷ হিন্দু ধর্মের বিভিন্ন শাখার সাধু সন্তরা শোভাযাত্রা করে কুম্ভমেলায় আসেন৷ যেমন, নাগা সাধু, ঊর্ধবাহু, পরিব্রাজক, শীর্ষাসীন৷ বিভিন্ন শাখার সাধুসন্তরা দলবেঁধে স্নান করতে যান এটাই রীতি৷ সাধারণ মানুষ এদের দর্শন করে পূণ্য সঞ্চয় করেন৷ সাধারণত তাঁরা লোকালয়ের বাইরে থাকেন৷

Hindu Festival Flash-Galerie
কুম্ভমেলা উপলক্ষ্যে রাম, সীতার সাজছবি: AP

কুম্ভমেলার বাণিজ্যক দিক যেমন আছে, তেমনি আছে পরিবেশগত দিক৷ এত মানুষের সমাবেশে গঙ্গার জল হয়ে পড়ে দূষিত৷ পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা বিধি ঠিকমত পালিত না হওয়ায় জনস্বাস্থ্যের সমস্যা দেখা দেয়৷ হরিদ্বারের কুম্ভমেলায় গিয়েছিলেন জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ ডঃ চন্দন ঘোষ৷ ডয়েচে ভেলেকে তিনি বলেন, এখনকার কুম্ভমেলায় আধুনিকতার ছাপ এসে গেছে৷ সাধু মহারাজদের হাতে মোবাইল, আখড়ায় বৈদ্যুতিক আলো, এয়ার কন্ডিশনার, এয়ার কুলার৷ স্নানের জন্য বিশেষ ক্যানাল দিয়ে নির্দিষ্ট সময়ে জল ছাড়া হয়৷ সামগ্রিকভাবে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা খুব খারাপ নয়৷ তবে প্লাষ্টিক ব্যাগ দেখলাম একেবারে নিষিদ্ধ৷

পরিবেশ সম্পর্কে ডঃ ঘোষ ডয়েচে ভেলেকে জানান, গঙ্গার উজানে ৫০টি ছোট ছোট বাঁধ তৈরি করে মিনি জলবিদ্যুত প্রকল্প নির্মাণের কাজ চলেছে, যেটা নিয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের ঘোরতর আপত্তি৷ এই নিয়ে পরিবেশবাদীদের এক সভা হয় হরিদ্বারে তাতে উপস্থিত ছিলেন হিন্দুদের সর্বোচ্চ ধর্মগুরু চার জন শঙ্করাচার্যের মধ্যে তিন জন৷ তাঁরা এই বাঁধ নির্মাণের বিরোধিতা করেন৷ বলেন, জলবিদ্যুত প্রকল্প যদি করতেই হয় তাহলে এমনভাবে তা করা উচিত যা হবে স্থানীয় মানষজনদের জীবনধারা ও ধর্মবিশ্বাসের সঙ্গে হবে সঙ্গতিপূর্ণ৷ এই মর্মে তিনজন শঙ্করাচার্য ধর্মাদেশ জারি করেন এবং রাজনৈতিক স্তরে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আহ্বান জানান৷ স্থানীয় অধিবাসীদের অভিযোগ, জলবিদ্যুত প্রকল্পের জন্য পাহাড় কেটে টানেল বানানো হচ্ছে, নির্বিচারে ডিনামাইট ফাটিয়ে ইকো-সিস্টেমকে বিঘ্নিত করা হচ্ছে৷ ঘর বাড়িতে ও রাস্তাঘাটে এজন্য ফাটল দেখা দিচ্ছে৷

প্রতিবেদকঃ অনিল চট্টোপাধ্যায়, নতুনদিল্লি

সম্পাদনাঃ আব্দুল্লাহ আল-ফারূক