মহাকুম্ভ মেলা এবার হরিদ্বারে
১৩ এপ্রিল ২০১০কুম্ভমেলার খ্যাতি ও জনপ্রিয়তা বছরের পর বছর এত ব্যাপক আকার নিয়েছে যে, বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের লক্ষ লক্ষ মানুষের সমাগম হয় এই কুম্ভমেলা উপলক্ষে৷ এবারের জনসমাগম রেকর্ড মাত্রা ছুঁয়েছে৷ আগামিকাল মহাস্নান৷
পূর্ণকুম্ভ বা মহাকুম্ভ মেলা বসে ১২ বছর অন্তর আর অর্ধকুম্ভ মেলা হয় ৬বছর অন্তর৷ গ্রহ নক্ষত্রের অবস্থান গণনা করে স্থির হয় কবে কোথায় মহাকুম্ভ মেলা বসবে৷ সূর্য ও বৃহস্পতি গ্রহ যখন সিংহ রাশিতে প্রবেশ করে তখন মহাকুম্ভ মেলা হয় মহারাষ্ট্রের নাসিকে৷ সূর্য যখন মেষ রাশিতে প্রবেশ করে তখন মহাকুম্ভ মেলা হয় হরিদ্বারে৷ বৃহস্পতি যখন বৃষ রাশিতে এবং সূর্য যখন মকর রাশিতে প্রবেশ করে তখন মহাকুম্ভ মেলা বসে এলাহাবাদ বা প্রয়াগে৷ বৃহস্পতি ও সূর্য যখন বৃশ্চিক রাশিতে তখন হয় উজ্জয়িনীতে৷
ধর্মীয় রীতি মতে, প্রথমে নদীতে বিশেষ করে গঙ্গা নদীতে পূণ্যস্নান অপরিহার্য৷এই স্নানে সব পাপ ধুয়ে যায় এবং মোক্ষলাভ হয় এটাই হিন্দুদের ধর্মীয় বিশ্বাস৷ সেদিক থেকে হরিদ্বার সবথেকে প্রশস্ত৷ কারণ হিমালয়ের গঙ্গোত্রী হিমবাহ থেকে পবিত্র গঙ্গা নদীর জল প্রথম সমতলে প্রবাহিত এই হরিদ্বারে৷ পুণ্যস্নানের সময় মন্ত্র উচ্চারণ ও পাঠ এবং ধর্মীয় সঙ্গীত এক পবিত্র আবহ তৈরি করে৷ তারপর সাধুসন্ত ও অন্যান্য পূণ্যার্থীদের ভোজন৷ হিন্দু ধর্মের বিভিন্ন শাখার সাধু সন্তরা শোভাযাত্রা করে কুম্ভমেলায় আসেন৷ যেমন, নাগা সাধু, ঊর্ধবাহু, পরিব্রাজক, শীর্ষাসীন৷ বিভিন্ন শাখার সাধুসন্তরা দলবেঁধে স্নান করতে যান এটাই রীতি৷ সাধারণ মানুষ এদের দর্শন করে পূণ্য সঞ্চয় করেন৷ সাধারণত তাঁরা লোকালয়ের বাইরে থাকেন৷
কুম্ভমেলার বাণিজ্যক দিক যেমন আছে, তেমনি আছে পরিবেশগত দিক৷ এত মানুষের সমাবেশে গঙ্গার জল হয়ে পড়ে দূষিত৷ পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা বিধি ঠিকমত পালিত না হওয়ায় জনস্বাস্থ্যের সমস্যা দেখা দেয়৷ হরিদ্বারের কুম্ভমেলায় গিয়েছিলেন জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ ডঃ চন্দন ঘোষ৷ ডয়েচে ভেলেকে তিনি বলেন, এখনকার কুম্ভমেলায় আধুনিকতার ছাপ এসে গেছে৷ সাধু মহারাজদের হাতে মোবাইল, আখড়ায় বৈদ্যুতিক আলো, এয়ার কন্ডিশনার, এয়ার কুলার৷ স্নানের জন্য বিশেষ ক্যানাল দিয়ে নির্দিষ্ট সময়ে জল ছাড়া হয়৷ সামগ্রিকভাবে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা খুব খারাপ নয়৷ তবে প্লাষ্টিক ব্যাগ দেখলাম একেবারে নিষিদ্ধ৷
পরিবেশ সম্পর্কে ডঃ ঘোষ ডয়েচে ভেলেকে জানান, গঙ্গার উজানে ৫০টি ছোট ছোট বাঁধ তৈরি করে মিনি জলবিদ্যুত প্রকল্প নির্মাণের কাজ চলেছে, যেটা নিয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের ঘোরতর আপত্তি৷ এই নিয়ে পরিবেশবাদীদের এক সভা হয় হরিদ্বারে তাতে উপস্থিত ছিলেন হিন্দুদের সর্বোচ্চ ধর্মগুরু চার জন শঙ্করাচার্যের মধ্যে তিন জন৷ তাঁরা এই বাঁধ নির্মাণের বিরোধিতা করেন৷ বলেন, জলবিদ্যুত প্রকল্প যদি করতেই হয় তাহলে এমনভাবে তা করা উচিত যা হবে স্থানীয় মানষজনদের জীবনধারা ও ধর্মবিশ্বাসের সঙ্গে হবে সঙ্গতিপূর্ণ৷ এই মর্মে তিনজন শঙ্করাচার্য ধর্মাদেশ জারি করেন এবং রাজনৈতিক স্তরে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আহ্বান জানান৷ স্থানীয় অধিবাসীদের অভিযোগ, জলবিদ্যুত প্রকল্পের জন্য পাহাড় কেটে টানেল বানানো হচ্ছে, নির্বিচারে ডিনামাইট ফাটিয়ে ইকো-সিস্টেমকে বিঘ্নিত করা হচ্ছে৷ ঘর বাড়িতে ও রাস্তাঘাটে এজন্য ফাটল দেখা দিচ্ছে৷
প্রতিবেদকঃ অনিল চট্টোপাধ্যায়, নতুনদিল্লি
সম্পাদনাঃ আব্দুল্লাহ আল-ফারূক