মহাত্মা গান্ধীর হত্যা মামলা
১৬ জুলাই ২০১৪ভারতীয় জনতা পার্টির সরকার ক্ষমতায় আসার পর মহাত্মা গান্ধীর হত্যা মামলার গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক ফাইল নষ্ট করার অভিযোগ ওঠে সংসদে গত ৯ই জুলাই৷ তাৎক্ষণিক বিবৃতিতে কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে আনা এই অভিযোগ সম্পূর্ণ ভুল এবং ভিত্তিহীন৷ পরে ঐ বিবৃতি সংশোধন করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং বলেন, গত এক মাসে ১১ হাজারের বেশি সরকারি ফাইল নষ্ট করা হয় – তার মধ্যে মহাত্মা গান্ধীর হত্যা মামলার মতো ঐতিহাসিক কোনো ফাইল নষ্ট করা হয়নি৷ দরকার পড়লে সেই ফাইল এবং সুভাষ চন্দ্র বসু, স্বাধীনতা সংগ্রাম এবং জম্মু-কাশ্মীর সংক্রান্ত ঐতিহাসিক ফাইল সরকার পেশ করতে রাজি আছে৷ মহাত্মা গান্ধী জাতির জনক৷ স্বাধীনতা সংগ্রামে তাঁর অবদান প্রশ্নাতীত৷ বিজেপির মতো হিন্দুত্ববাদী পার্টি সরকারে এসে নতুন করে ইতিহাস লেখার কোনো পরিকল্পনা করছে না৷
সরকারের তরফ থেকে এই অভিযোগ অস্বীকার করা হলেও আশঙ্কা এখনো দৃঢ়মূল, যে বিজেপি নেতৃত্বাধীন নরেন্দ্র মোদীর এনডিএ সরকার তার শাসনকালের মধ্যে স্বাধীন ভারতের ইতিহাস নতুন করে লেখার চেষ্টা করেছে৷ আর এই কারণেই গান্ধী হত্যায় রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ বা অন্যান্য মৌলবাদী হিন্দু সংগঠনগুলির ভূমিকার যেসব তথ্যপ্রমাণ সরকারি ফাইলে আছে, তলে তলে তা লোপাট করার পরিকল্পনা চলছে, এমনটাই সন্দেহ৷
উল্লেখ্য, মহাত্মা গান্ধীকে দিল্লির বিড়লা ভবনে প্রার্থনাসভায় যাবার মুখে গুলি করে হত্যা করেন আরএসএস-এর সদস্য নাথুরাম গডসে ১৯৪৮ সালের ৩০শে জানুযারি৷ হত্যার অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়ে আরএসএস সদস্য নাথুরাম গডসের ফাঁসি হয় ১৯৪৯ সালে৷ দিল্লির তিহাড় জেলে বসে লেখা গডসের চিঠিতে আছে, দেশভাগের পর হিন্দুদের অকথ্য দুঃখকষ্টের চেয়ে গান্ধীর কাছে বড় হয়ে ওঠে পাকিস্তানের স্বার্থ৷ চুক্তি অনুযায়ী পাকিস্তানের প্রাপ্য অর্থ তাড়াতাড়ি মিটিয়ে দেবার দাবিতে তিনি অনশনে বসেন৷ তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জহরলাল নেহেরুকে সেই দাবির কাছে শেষপর্যন্ত নতি স্বীকার করতে হয়৷
বিজেপির তাত্ত্বিক সংগঠন সঙ্ঘ পরিবারের নির্দেশে ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক ভারতকে এক মৌলবাদী ‘‘হিন্দু রাষ্ট্রে‘‘ পরিণত করার রাজনৈতিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে মোদীর বিজেপি সরকার, এমনটাই মনে করছে ধর্মনিরপেক্ষ সমালোচক মহল৷ তাঁদের মতে, বিজেপি সরকারের গৈরিকীকরণের অ্যাজেন্ডা এখানেই থেমে নেই৷ হাত পড়েছে স্কুল কলেজের সিলেবাসে ও পাঠ্যপুস্তকে৷ গ্রামেগঞ্জ তরুণ প্রজন্মের মাথায় গৈরিকীকরণের বীজ রোপণের উদ্দেশ্যে সঙ্ঘ পরিবারের সমর্থকরা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ছে৷ এটাকে বিজেপির নতুন সভাপতি অমিত শাহের ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক কৌশল নীতি বলে মনে করছে অনেকে৷
স্বাধীনতা সংগ্রামকালেই আরএসএস-এর চেষ্টা ব্যর্থ করে দিয়ে ধর্মনিরপেক্ষতা ও গণতন্ত্রের ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে ভারত এক সাংবিধানিক প্রজাতন্ত্ররূপে আত্মপ্রকাশ করে৷ কিন্তু এবার মোদী জমানায় নতুন সুযোগ এসেছে সঙ্ঘ পরিবারের ব্যর্থ অ্যাজেন্ডাকে পুনরুজ্জীবিত করার৷ তাতে ভারতের অতীত ইতিহাসকে মুছে ফেলা সম্ভব নয়৷