মহান একুশে এবং ‘গুন্ডে’ মুভি!
২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৪মাহাবুব আলম মুরাদ সামহয্যার ইন ব্লগে প্রশ্ন তুলেছেন, ২১শে ফেব্রুয়ারি কতটুকু সার্থক? তিনি লিখেছেন, ‘‘আমাদের এই মাতৃভাষা হল বাংলা অথচ দেখছি সর্বত্র হিন্দি গান খুব উচ্চস্বরে বাজিয়ে সবাই এই দিনটাকে উদযাপন করছে৷ আজ সকালে ঘুম ভেঙেছে হিন্দি গানের সুরে৷ আসলে আমাদের ভুল তো সূচনাতেই, যেখানে বাংলা মাস ৮ই ফাল্গুনকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা হিসেবে ধার্য না করে ইংরেজি মাস ফেব্রুয়ারির ২১ তারিখকে ধার্য করা হয়েছে৷ আমরা মুখে দেখাই দেশপ্রেম আর অন্তরে বিশ্বাস করি অন্যটা৷''
জয় পাঠক লিখেছেন, গবেষণা ও সার্ভে থেকে জানলাম, একজন শিশুর বড় হয়ে ওঠার ক্ষেত্রে, বিশেষ করে বাবা-মায়ের সাথে তার যোগাযোগের ক্ষেত্রে মাতৃভাষার ব্যবহার খুব গুরুত্বপূর্ণ৷ ভালোবাসার এই ভাষার মমত্বপূর্ণ স্পর্শ শিশুটিকে অনুভূতিশীল এবং বিবেকবান মানুষ হিসেবে বেড়ে ওঠার ক্ষেত্রে অনেক সাহায্য করে৷ এই কারণে মাল্টি কালচারাল দেশগুলোতে ইংরেজির পাশাপাশি স্কুলগুলোতে শিশুদের মাতৃভাষায় আলাদাভাবে শেখানো হয়৷ মানুষ হিসেবে বড় হয়ে ওঠার ক্ষেত্রে মাতৃভাষার বিকল্প নেই৷
আরমান অরণ্য লিংকন লিখেছেন, আমাদের নতুন প্রজন্মের অনেকেই একুশে ফেব্রুয়ারির আসল ইতিহাস জানে না৷ এটা আমাদের জন্য অবশ্যই লজ্জাজনক৷ তবে এই দোষ নতুন প্রজন্মের না, এই দোষ অভিভাবক ও শিক্ষকদের৷ নতুন প্রজন্ম জানে না কারণ তাদের জানানো হয়নি৷ আমরা আমাদের মৌলিকত্ব, আমাদের পরিচয় নিয়ে উদাস বলেই আজ এই অবস্থা৷ আমরা চাইলেই এই ভয়ংকর সমস্যার সমাধান করতে পারি৷ এর জন্য প্রথমে আমরা যারা আসল ইতিহাস জানি তাদের দায়িত্ব নিতে হবে৷ অভিভাবকরা যদি তাঁদের সন্তানদের ঘুম পাড়ানি গল্প হিসেবে এই ইতিহাস শোনান, আমাদের শিশুরা এই ইতিহাসকে বুকে নিয়ে বেড়ে উঠবে৷
সাজ্জাদ হোসেন রাকিব লিখেছেন, আজকে ফেসবুকে দুই ধরনের প্রজাতি দেখা যায়৷ এক; যারা একদিনে জন্য ভাষার প্রতি তাদের চেতনা দেখাতে ব্যস্ত, কেউ কেউ প্রোফাইল পিকচার পরিবর্তন করবে, জ্বালাময়ী স্ট্যাটাস দিবে, শহীদ মিনারে চেক ইন দিবে, আরো কত কী!
দুই; যারা প্রথম ধরনের মানুষজনকে ধিক্কার জানিয়ে স্ট্যাটাস দিবে৷ এরা ঘরে বসিয়া গন্ডায় গন্ডায় স্ট্যাটাস প্রসব করবে আর বলবে, ‘সারা বছর কোথায় ছিলে তোমরা... ... ... একদিন দরদ দেখিয়ে কীই বা হবে, পরের দিনই তো ভুলে যাবে সব৷'
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচনা-সমালোচনার পর ‘গুন্ডে' ছবিটি নিয়ে বাংলাদেশের গণমাধ্যমেও অবশেষে লেখালেখি শুরু করেছে৷ জনপ্রিয় দৈনিক পত্রিকা প্রথম আলো এবং ডেইলি স্টার-এও মুভিটি নিয়ে লেখালেখি হয়েছে৷ ব্লগে এখনও চলছে প্রতিবাদ৷ সাঈদ হাসান মনির ছবিটি নিয়ে লিখেছেন, আসুন প্রতিবাদ করি৷
তিনি লিখেছেন, ভারতের শক্তিধর দুটি মাধ্যম তাদের ফিল্ম এবং ক্রিকেট৷ নিছক ফিল্ম বলে উড়িয়ে দেবার কোন সুযোগ নেই৷ ভারতের ফিল্মের কি কোন সেন্সর বোর্ড নেই? আমাদের গৌরবগাঁথার ৯ মাস ফেলনা নয়৷ আমাদের ইতিহাস নিয়ে ছিনিমিনি খেলার অধিকার তাদের নেই৷
নাহিদ পারভেজ কিছু তথ্য পরিবেশন করেছেন৷ জানিয়েছেন, কয়দিন আগেও গুন্ডে মুভির রেটিং ছিল ৬/১০৷ গুন্ডে এখন আইএমডিবি-র (আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র তথ্যভাণ্ডার) সব চেয়ে খারাপ মুভীর লিস্টে ১.৫ রেটিং নিয়ে ১ নম্বরে অবস্থান করছে৷ মানে হল আইএমডিবি-র ইতিহাসে সব চেয়ে বাজে হল গুন্ডে৷ আসুন আমরা যারা অনলাইনে আছি ছবিটার রেটিং ১০ এ ১ দিতে থাকি, যাতে ছবির রেটিং ১ এ দাঁড়ায়৷ আশা করি ভবিষ্যতে লাখো শহীদের রক্ত দিয়ে লেখা আমাদের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে তামাশা করার সাহস কোনো মিডিয়ার হবে না৷
আরাফাত হিমু লিখেছেন, আমার ৭১ ভিক্ষার দান নয়৷ লিখেছেন, আমাদের মধ্যে আছে দালালি আর তোষামোদি৷ মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে এতো বড় মিথ্যাচার করলো কিন্তু আমাদের রাজনীতিবিদরা কোন প্রতিবাদ করছে না কেন? কিসের এতো ভয়?আমাদের সুশীলগুলা কই?
সংকলন: অমৃতা পারভেজ
সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন